ITAHAR LEFT

সেলিমের দিকে তাকিয়েই সকলে চাইছে ভিক্টর’কে

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

ইটাহারে গোড়াহার ঘাট দিয়ে বিহার-বাংলার দুই রাজ্যের হাজারো মানুষ যাওয়া আসা করেন। এখনো তৈরি হলো না মহানন্দার সেতু। দিলীপ সেনের তোলা ছবি।

অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়: ইটাহার
 

 মহম্মদ সেলিম’কে ভুলতে পারেন না বিশাহার-গোড়াহার গ্রামের মানুষ। রায়গঞ্জ থেকে সাংসদ থাকাকালীন তিনিই সংসদে তুলেছিলেন মহানন্দা সেতুর কথা। রায়গঞ্জের তৎকালীন সাংসদ সেলিম মহানন্দার সেতুর জন্য কাটিহারের সাংসদ তারিক আনোয়ার’কে নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়গড়ির কাছে দরবার পর্যন্ত করেছিলেন। কাজ কিছু এগিয়ে ছিল। সেতুর তৈরি জন্য ‘মাটি পরীক্ষা’ থেকে সংযোগকারী রাস্তা হয়েছিল।
ব্যাস! ওখানে শেষ। তারপর মহানন্দা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। লোকসভা ভোট আসলেই ‘মাটি পরীক্ষা’ হয়। কিন্তু আজও স্থায়ী সেতুর কাজ কিছুই হলো না। রায়গঞ্জের বিজেপি’র বিদায়ী সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরি উড়ে গিয়েছেন কলকাতায় প্রার্থী হয়ে। এবারে রায়গঞ্জে লড়ছেন বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী আলি ইমরান রামজ, বেশি পরিচিত ভিক্টর নামেই। তাই আবার আশা জাগছে গ্রামের মানুষের। সেলিমের মতো যদি নতুন সাংসদ আরও একবার দিল্লিতে দরবার করেন, তাহলেই হতে পারে বহুপ্রতীক্ষিত মহানন্দা সেতু।     
ইটাহারের শেষ গ্রাম গোড়াহার। এটি দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। লাগোয়া বিশাহার আবার রায়গঞ্জ লোকসভার মধ্যে। বিশাহারের পাশ দিয়ে গেছে নাগর নদী। আর তা গোড়াহারে কুলিক নদীর সঙ্গে মিশে মহানন্দায় মিশেছে। ওপারে কাটিহার জেলার বারসুই। গোড়াহারের ঘাট থেকে মহানন্দা পার করলে রয়েছে কাটিহারের গ্রাম তারাপুর। বিহারের প্রচুর মানুষ প্রতিদিন এই পথ ধরে রায়গঞ্জে আসেন। এদিকের  মানুষও যান কাটিহারে। 
ঠিকা কাজ থেকে ব্যবসা, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য– সবটাই রায়গঞ্জ নির্ভর। এখনো মহানন্দা পারাপারে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশের সাঁকো। বর্ষায় মহানন্দায় জল বাড়লে পার হতে হয় নৌকা করে। জন প্রতি পাড়ানি দশ টাকা। সাইকেলে ছাড়। মোটরসাইকেল নিয়ে পার হলে দিতে হবে কুড়ি টাকা। দুপুরের কাঠফাটা রোদ্দুরের মধ্যেও প্রচুর মানুষ আসা-যাওয়া করছেন ওই বাঁশের সেতু দিয়ে। 
গোড়াহারে মহানন্দার ঘাটে পাড়ানি নেন মহম্মদ কামিরুদ্দিন। তিনি তাঁর দশ বন্ধু মিলে এবারে পারাপারের টেন্ডার নিয়েছেন। তিনি জানালেন, ‘প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষ আসা যাওয়া করে। পরব হলে লোক আরও বাড়ে। তখন বড় লাইন পড়ে। দুপুরে মানুষ কম থাকে। রোদ পড়লেই বাড়তে থাকে। কামিরুদ্দিনের আক্ষেপ তাঁর ‘‘দাদু-বাবা কেউই দেখে যেতে পারলো না মহানন্দার সেতু। হয়ত ছেলে দেখতে পাবে। এটুকুই এখন আশা।’’ 
কামিরুদ্দিনের একমাত্র ছেলে আতে পারমান মাস্টার ছাড়াই ৬৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন। চাকরি পেতে এরাজ্যে রাজ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার কাটমানি লাগে। তাই মেধাবী আতে পারমানকে কাজের জন্য পাড়ি দিতে হয়েছে মুম্বাই। সেখানে ঠিকাদারের অধীনে ‘বিল্ডিং’-এর কাজ করতে হচ্ছে। এটাই কামিরুদ্দিনকে কুরে কুরে খাচ্ছে। বললেন, ‘‘বাবা-দাদুর প্রচুর জমি আছে। কিন্তু ছেলে সেখানে চাষ করবে না। চাকরিরও আশা নাই। গ্রাম ছাড়লো ছেলে। পরবেও আসতে পারে না।’’
তাহলে গত পাঁচ বছরে কিছুই কী করেননি বিদায়ী সাংসদরা? রায়গঞ্জের পাশাপাশি বালুরঘাটেও তো বিজেপি’র সাংসদ সুকান্ত মজুমদার ছিলেন। কথা শেষ হতে পারেনি, রীতিমতো রে রে করে এলেন গৌরি গ্রাম পঞ্চায়েতে এলিনগিয়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ মকিম। রেগে বলেই ফেললেন, ‘সুকান্ত মজুমদার গোড়াহার চেনেন ? তাঁরই তো এলাকা। আর রায়গঞ্জের দেবশ্রী’র কথা বললেন না। হ্যাঁ, উনি কয়েকবার তাঁর দলের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীকে সঙ্গে নিয়ে কাটিহারের বিদায়ী সাংসদ দুলাল গোস্বামী’র মিটিং করেছেন। গ্রামের মানুষকে আশা দিয়ে তিনি আপনাদের কলকাতায় বিজেপি প্রার্থী হয়ে গিয়েছেন।’’  
কাটিহার যাবেন বলে বাঁশের সেতুতে সবে উঠতে যাচ্ছিলেন কাটিহারের জেলা পরিষদ সদস্য গুলজার আলম। সব শুনে তিনি বলেই ফেললেন, ‘গ্রামের উন্নতি হলে দিদি-মোদীর পেট ভরবে।’ কংগ্রেসের নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য গুলজার গেছিলেন রায়গঞ্জে পার্টির কাজে। মনের ক্ষোভ তিনিও যেন চেপে রাখতে পারলেন না। গুলজার বলেই বসলেন, ‘‘কাজ হোক আর নাই হোক তবুও সেলিম সাহেব আর আনোয়ার সাহেব একসঙ্গে দিল্লিতে সেতুর জন্য লড়েছেন। নদীর পাড় বাঁধিয়ে সেলিম সাহেব বিশাহার গ্রামকে বাঁচিয়েছেন। আবার সেই সুযোগ এসেছে। একসঙ্গে লড়াই হচ্ছে। জানেন, কাটিহারের মানুষও চাইছে এরাজ্যের রায়গঞ্জ কেন্দ্রে ভিক্টর জিতুক।’’   

Comments :0

Login to leave a comment