JADAVPUR THEATRE FESTIVAL

যাদবপুর নাট্যোৎসব, মঞ্চেই প্রশ্ন শাসককে

কলকাতা

যাদবপুর নাট্যোৎসবের একটি মুহূর্ত।

১৫ ডিসেম্বর থেকে, যাদবপুরের অন্তর্গত বিজয়গড় নিরঞ্জন সদনে শুরু হয়েছে যাদবপুর নাট্যমেলা। দেখতে দেখতে এবার দশম বর্ষে পদার্পণ করল এই নাট্যোৎসব। মোট ৬ দিনে রয়েছে ৮টি নাটক।
উদ্বোধনের দিন দুপুরে দর্শকদের সামনেই ছবি এঁকেছেন চিত্রকররা। অনুষ্ঠানের নাম ছিল "নাট্য-চিত্র-কল্প"। শিল্পী মীরা মুখার্জির জন্মশতবর্ষকে সামনে রেখেই এই উদ্যোগ নেন সংগঠকরা। মোট আটজন চিত্রকর অংশগ্রহণ করেন এই অনুষ্ঠানে। অংশ নেন শিল্পী পার্থ চ্যাটার্জি, ইন্দ্রজিৎ নারায়ণ, সুদীপ রক্ষিত, কমল মুখার্জি, অনিরুদ্ধ মুখার্জি, প্রদীপ গোস্বামী, শুভদীপ দাস এবং সুব্রত বসু। তাঁদের হাত ধরেই এই নাট্যমেলার উদ্বোধন হয়। সেইসঙ্গে, এই সমস্ত শিল্পীদের আঁকা ছবিগুলি তুলে দেওয়া হচ্ছে থিয়েটার ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণকারী নাট্যদলগুলির হাতে।
সরকার বিরোধী বক্তব্য রয়েছে বলে কমল চ্যাটার্জি পরিচালিত এবং চাকদহ নাট্যজন প্রযোজিত নাটক “জগাখিচুরি” নাটকটিকে অনেক জায়গায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শো বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে বহু জায়গায়। কিন্তু এই নাট্যোৎসবে রবিবার দুপুরে এই নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য এই নাটকটিতে অভিনয় করেছেন। শিল্পের ওপর রাষ্ট্রের খবরদারির বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিবাদও জানালেন সংগঠকরা।

এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব এবং অভিনেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “এই নাটকের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থার অব্যবস্থাকে। মানুষ দেখলেই বুঝতে পারবেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলা একটা কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে লিখে দিয়েছিলেন। তোমার শিক্ষার গোড়া যদি কেটে দেওয়া হয়, তাহলে একটা সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যেতে সময় লাগে না। একটা যুগ এবং প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যায়। ফলত যুদ্ধ বা কামান নয়, হিটলারের পরিকল্পনা তাই ছিল। তাই বই পোড়ানো হতো।“
তিনি আরও যোগ করেন, “বর্তমান খারাপ সময়ের বিরুদ্ধে কথা বলা প্রয়োজন।  নাটকের দায় মাথায় নিয়ে আমরা যদি অন্য এন্টারটেইনমেন্টে ঘুরে বেড়াই, খালি রোজগারটাই শেষ কথা হলো? নাটকের দায় বহন করতে হবে না? আমাদের কোথাও মনে হয়েছে এই দায়টা বহন করা উচিৎ। এই দায়টা নতমস্তকে বহন করছি। শাসকরা সবসময় সমাজকে প্রশ্নহীন করে দিতে চায়, এটাই তাঁদের সাফল্য। এটা মানুষ কোথাও ভুলে যাচ্ছেন। এটাই আমরা নাটকের মধ্য দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। অন্তত দুটো প্রশ্ন করুন। ভয় লাগলেও পাশের বন্ধুকে প্রশ্নটা করুন। তাতেই সম্পর্কের জোরটা তৈরি হবে।“     
প্রথম দিন মঞ্চস্থ হয় শ্যামবাজার মুখোমুখি প্রযোজিত নাটক “জন্মান্তর”। প্রয়াত সৌমিত্র চ্যাটার্জির লেখা এই নাটকটি পরিচালনা করেন পৌলমী চ্যাটার্জি এবং অভিনয় করেন দেবদূত ঘোষও।

দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ ১৬ই ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হয় সীমা মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এবং রঙরুপ প্রযোজিত নাটক “স্বাহা”। এছাড়াও এই বছরের নাট্যমেলায় রয়েছে গৌতম হালদার পরিচালিত এবং নয়ে নাটুয়া প্রযোজিত নাটক “মিতালী”। এই নাটকটিতে অভিনয় করেছেন দ্যুতি ঘোষ হালদার এবং গৌতম হালদার নিজেও। তাছাড়া অরুণ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এবং যাদবপুর রম্যানী প্রযোজিত “হারানের নাতজামাই” নাটকটিও রয়েছে এইবার। যেটিতে অভিনয় করেছেন মেঘনাদ ভট্টাচার্য, চন্দন সেন, শান্তিলাল মুখার্জি এবং সৌমিত্র বসু।
অন্যদিকে, অরুণ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এবং চেতনা প্রযোজিত নাটক “মারীচ সংবাদ” এই মরশুমের অন্যতম আকর্ষণ। যে নাটকটির মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন সুজন মুখার্জি এবং শুভাশিস মুখার্জি। শেষদিন থাকছে সৌরভ পালোধি পরিচালিত এবং ইচ্ছেমতো প্রযোজিত নাটক “কিত্তনখোলা”। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন শঙ্কর দেবনাথ।
সিজন এবং রেগুলার মিলিয়ে টিকিট বিক্রির হার বেশ চোখে পড়ার মতো। অর্থাৎ, এই নাট্যমেলাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ তুঙ্গে। অঞ্চলের মধ্যে এইরকম উন্নতমানের একটি থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল হওয়ায় খুশি বহু মানুষ। বিগত বছরগুলির মতো এই বছরও, দর্শকদের জন্য সুন্দর একটি নাট্যোৎসব উপহার দিতে পারছেন সংগঠকরা।

Comments :0

Login to leave a comment