Kisan long march

বাস্তব পদক্ষেপ নিলে তবেই ঘরে ফিরবে লং মার্চ

জাতীয়

মুরলীধর বুধা মিসার: বাসিন্দ (মুম্বাই)

কাল ফিরতে ফিরতে অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছিল। তখন আর বিশেষ কথা হয়নি। শুক্রবার সাতসকাল থেকেই তাই জিভা পণ্ডিত গাভিট, অজিত নাওলে, ডি এল কারাডরা ব্যস্ত মোর্চা ধরে রাখায়। ছোট ছোট গ্রাম থেকে আসা জটলাকে নিয়ে এসে বোঝাতে— যতক্ষণ না ব্লক লেভেলে নোটিফিকেশন হচ্ছে, কিছু কাজ এগচ্ছে, ততক্ষণ ভরসা নেই। তাই কাল বিকেল পর্যন্ত এখানেই থাকা— এই বাসিন্দেই। 
আর সেই থেকে বাসিন্দ স্টেশনের পাশের ইদগাহ ময়দান যেন চেহার নিয়েছে বছর দেড়েক আগের দিল্লি সীমান্তের সিঙ্ঘু, টিকরির। গরমের রাতটা খোলা আকাশের নিচে কাটলেও সকাল থেকে টেন্ট খাটানো শুরু হয়েছে। দুপুরের মধ্যেই ময়দানে গুনে দেখা গেল গোটা দশেক টেন্ট। আরো কয়েকটি বসানোর তোড়জোর চলছে। নেতাদের বোঝানোর মাঝেই চলছে গান-বাজনাও। সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের লোকজন এসে পড়েছেন। লং মার্চ নিয়ে যে গান বেঁধেছেন তাই দিয়েই চলছে আগামী দিনের রসদ ভরার কাজ। আর দেখা মিলছে পথ ক্লান্ত আদিবাসী, কিষান নারী-পুরুষের খানিক জিরিয়ে নেওয়ার ছবি।
বৃহস্পতিবার বিকেলেই নাসিক-মুম্বাই কিষান লং মার্চ বাণিজ্য নগরী থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরের এই বাসিন্দে এসে পৌঁছেছে। ওদিকে তখন মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিণ্ডে সহ একগুচ্ছ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন অশোক ধাওয়ালে, অজিত নাওলে সহ সারা ভারত কিষান সভার নেতারা। প্রায় গভীর রাতে শেষ হওয়া সেই বৈঠক ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েই শেষ হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী নিজে জানিয়েছিলেন, কৃষকদের সব দাবি মেনে নিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। বলেছিলেন, আজ দুপুরে তিনি বিধানসভায় এনিয়ে বিবৃতি দেবেন। 
ইতিবাচক সাড়া মেলেও কিষান নেতৃত্ব সাবধানী পদক্ষেপ নিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, আন্দোলন প্রত্যাহার নয়, আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। লং মার্চ তাই আপাতত বাসিন্দেই বসে থাকছে। এই দু’দিনে তেমন সরকারি পদক্ষেপ দেখা গেলে তবেই ঘরে ফিরবেন কৃষকরা। আর তেমনটা না হলে ফের রাস্তা ধরে এগোবেন মুম্বাইয়ের দিকে। আর গতবারের মতো সব দাবি আদায় করেই ফিরবেন। 
কথা মতো শিণ্ডে এদিন বিধানসভায় এনিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। এদিনও তিনি বলেছেন, সরকার কৃষকদের ‘বেশিরভাগ’ দাবিই মেনে নিয়েছে। দাম না পাওয়ায় পেঁয়াজ চাষিদের কুইন্টাল প্রতি ৩৫০টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবো। সপ্তাহ ব্যাপী এই আন্দোলন তুলে নিতে তিনি কৃষকদের কাছে আবেদন রেখেছেন। বিধানসভাকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গতকাল কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর ১৪দফা দাবি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। কথা হয়েছে বনাঞ্চলের অধিকার, বনভূমি জবরদখল, চাষের জন্য মন্দির ট্রাস্ট ও গ্রেজিং গ্রাউন্ড হস্তান্তর— সব দাবিগুলি নিয়েই ভালোভাবে কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, চাষিদের দখলে থাকা চার হেক্টর পর্যন্ত বনভূমি যে দাবি রয়েছে, সে সম্পর্কিত আরজি খতিয়ে দেখার জন্য একটা ক্যাবিনেট সাব-কমিটি গঠন করা হবে। সেই প্যানেল এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট তৈরি করবে। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব, সিপিআই(এম)’র প্রাক্তন বিধায়ক জিভা পণ্ডিত গাভিট ও বর্তমান বিধায়ক বিনোদ নিকোলেকে ওই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। 
সকালেই নেতারা জানিয়ে দিয়েছিলেন, মুখের কথায় কাজ হবে না। বাস্তবে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত কৃষকরা নড়ছেন না। অনেক রাতে সিআইটিইউ-র কেন্দ্রীয় ডি এল কারাডের গলাতেও একই সুর। বলে দিলেন, কাল বিকেল পর্যন্ত দেখব। নিচু তলায় বিজ্ঞপ্তি জারি বা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে ভালো। না হলে পরদিন সকাল থেকে লং মার্চ আবারও এগিয়ে যাবে মুম্বাইয়ের দিকে।
আপাতত সেখানে সিঙ্ঘুর মতো লড়াইয়ে টিকে থাকার জেদ।

Comments :0

Login to leave a comment