প্রবীর দাস- ন্যাজাট
শনিবার সকাল সকাল প্রচারে নেমে পড়লেন বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী নিরাপদ সর্দার। বুথসভা, দাওয়া সভা, নির্বাচনী কমিটির সভা, মিছিলে ব্যস্ত থাকলেন সারাদিন। শুক্রবার বিকালে লোকসভা নির্বাচনে আরও ৫ কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের নাম ঘোষণার মধ্যেই বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে সিপিআই(এম) প্রার্থী নিরাপদ সর্দারের নাম ঘোষণার সাথে সাথে বসিরহাট মহকুমার ১০টি ব্লকের ৭টি বিধানসভা এলাকায় নির্বাচনী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে বামফ্রন্ট তথা সিপিআই(এম)র কর্মী সমর্থকরা।
দেওয়ালে দেওয়ালে আগাম চুনকাম করাই ছিল। বামফ্রন্টের যেই প্রার্থী হোক না কেন, নাম ঘোষণার সাথে সাথে শুরু হবে দেওয়াল লিখন, মিছিল সহ প্রচারের বিভিন্ন কর্মসূচি। পাড়া বৈঠক, গ্রাম বৈঠক, দাওয়া মিটিং বিধানসভা ধরে ধরে বিধানসভা কমিটির সভার কাজ চলছিল সমান তালে। শুক্রবার নাম ঘোষণার সাথে সাথে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে যায় মহকুমার বিভিন্ন স্থানে। তাৎক্ষণিক মিছিল হয় কোথাও কোথাও। সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন সারলেন সন্দেশখালি -২নং ব্লকের খুলনার বাসভবনে বসে। শনিবার সকালে সেখানে দাওয়া বৈঠকের পর বেড়িয়ে পড়লেন কালিনগরের উদ্দেশ্যে। সন্দেশখালির ভূমিপুত্র একেবারে দিনমজুর পরিবার থেকে উঠে আসা নিরাপদ সর্দারের কৈশোর, যৌবন কেটেছে দিনমজুরি করে। আর তখন থেকেই রাজনীতির আঙিনায়। আগেই সামলিয়েছেন সন্দেশখালি-২নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দায়িত্ব। পরে সন্দেশখালির বিধায়ক হন। সন্দেশখালির চালচিত্র বদলে যেতে দেখছেন। শেখ শাহজাহান বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারবার সোচ্চার হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন। শেষে ১৭দিন জেলেও তাঁকে থাকতে হলো সন্দেশখালির আন্দোলনকে পুষ্ট করতে গিয়ে। সামনে আরও বড় লড়াই। এক মূহুর্ত সময় নষ্ট করতে চান না। তাই শনিবার ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে বেড়িয়ে পড়লেন কালিনগর, ন্যাজাটের উদ্দেশ্যে।
বেতনি নদীর পাড়ে কালিনগর, ন্যাজাট বাজারে সেরে নিলেন একপ্রস্থ প্রার্থী পরিচয় পর্ব। চলমান মিছিলে দু চারটি প্রশ্নের উত্তরে নিরাপদ সর্দার জানালেন, ‘‘বসিরহাটের মানুষ বাম মনোভাবাপন্ন। এটাই ইতিহাস। যার প্রমাণ গোটা রাজ্যে ২০১১ সালে পরিবর্তনের হাওয়ায় রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার হেরে গেলেও বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ , বসিরহাট দক্ষিণ, বসিরহাট উত্তর বিধানসভায় জয়ী হয় বামফ্রন্ট। বসিরহাট মুক্তির স্বাদ পেতে চায়। তেভাগার ঐতিহ্য ফিরে পেতে চায়। সন্দেশখালির আন্দোলনকে দুভাগে ভাগ করে দিতেই রেখা পাত্রকে বিজেপি প্রার্থী করেছে। বসিরহাট দাঙ্গা চায় না। বিভাজন চায় না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে চায়। আরএসএস সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়।
বামপন্থীরা তাকে রুখবেই বসিরহাটের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে সাথে নিয়ে। পরিযায়ীর তকমা সেঁটে ভিন রাজ্যে পড়ে থাকতে চায় না সন্দেশখালি সহ হাড়োয়া, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ,বাদুড়িয়া, বসিরহাটের যুবসমাজ। বোমা বন্দুক দেখতে চায় না বসিরহাট। চায় না দুর্নীতি, চুরি, রাহাজানি। সর্বপরি মহিলাদের সম্ভ্রম নিয়ে টানাটানি। মিছিল শেষ করে ন্যাজাটের দক্ষিণ আখরাতলার চাঁদপাড়ায় ভক্তদাস মাহাতোর বাড়িতে সেরে ফেললেন বুথসভা। সেখানে মহিলাদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সামান্য মধ্যাহ্ন ভোজের পর হিঙ্গলগঞ্জের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। সেখানে বিকালে বিধানসভা কমিটির সভা শেষ করে ফের এক প্রস্থ প্রার্থী পরিচিত সারতে মিছিলে অংশ নেন। মিছিল হিঙ্গলগঞ্জ বাজার, কালিবড়ি সহ বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে এদিনের মতো প্রচার কর্মসূচি শেষ রাখেন।
Comments :0