MANDA MITHAI — SOUMAYDEEP JANA — BAGHAJATIN — NATUNPATA | 14 SEPTEMBER 2025, 3rd YEAR

মণ্ডা মিঠাই — সৌম্যদীপ জানা — ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের হতভাগ্য মহানায়ক বাঘাযতীন — নতুনপাতা, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

ছোটদের বিভাগ

MANDA MITHAI  SOUMAYDEEP JANA  BAGHAJATIN  NATUNPATA  14 SEPTEMBER 2025 3rd YEAR

মণ্ডা মিঠাইনতুনপাতা

 

ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের  হতভাগ্য মহানায়ক  বাঘাযতীন 
 

সৌম্যদীপ জানা 

নতুন বন্ধু

১৮৭৯ সালের ৭ই ডিসেম্বর যশোর জেলার কায়গ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, যিনি ইতিহাসে ‘বাঘাযতীন’ নামে খ্যাত। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অসাধারণ শারীরিক ক্ষমতার অধিকারী এবং অদম্য সাহসী। একদিন খালি হাতে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে বিজয়ী হওয়ার ঘটনার জন্যই তিনি ‘বাঘাযতীন’ উপাধিতে সম্বোধিত হন। কিন্তু কেবল শারীরিক শক্তি নয়, তিনি ছিলেন দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও আদর্শে ভরপুর একজন বিপ্লবী। তাঁর জীবন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উজ্জ্বল অধ্যায়।

যতীন্দ্রনাথ ছাত্রজীবন থেকেই রাজনৈতিক চেতনার সাথে যুক্ত হন। অরবিন্দ ঘোষ, ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত প্রমুখ বিপ্লবীদের সংস্পর্শে এসে তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের পথে এগিয়ে যান। তিনি বিশ্বাস করতেন, কেবল প্রার্থনা বা আবেদন নয়, বরং সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমেই ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানো সম্ভব। তাই তিনি যুগান্তর দলের অন্যতম নেতৃত্বে পরিণত হন। দেশি-বিদেশি অস্ত্র সংগ্রহ, বিপ্লবীদের সংগঠিত করা, ব্রিটিশ সরকারকে আঘাত করার নানা পরিকল্পনা—সবক্ষেত্রেই তাঁর ভূমিকা ছিল অসামান্য।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি একটি বৃহৎ পরিকল্পনা নেন। জার্মানি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সংগ্রহ করে তা দিয়ে সর্বভারতীয় সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন। জার্মান জাহাজ Maverick এবং পরবর্তীকালে Annie Larsen-এর মাধ্যমে সেই অস্ত্র আসার কথা ছিল। যদিও নানা কারণে সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি, কিন্তু তা ব্রিটিশ প্রশাসনকে আতঙ্কিত করে তোলে।

১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্রিটিশরা তাঁর সন্ধানে সর্বত্র তল্লাশি শুরু করে। দীর্ঘ পিছু ধাওয়ার পর তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা বালেশ্বরের কাছে বুড়িবালাম নদীর তীরে ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। সংখ্যায় অনেক কম হলেও বিপ্লবীরা অসম সাহসে লড়াই চালিয়ে যান। যতীন্দ্রনাথ গুরুতর আহত হন, কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন। অবশেষে ১৯১৫ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর তিনি শহীদ হন।

বাঘাযতীনের জীবন কেবল এক বিপ্লবীর গল্প নয়, বরং এক মহান আদর্শ। তিনি দেখিয়েছিলেন যে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া এক মহৎ কর্তব্য। তাঁর আত্মত্যাগ পরবর্তী প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করেছে, দেশের তরুণ সমাজকে সংগ্রামের পথে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর বাণী ও কর্মকাণ্ড আজও দেশপ্রেমের অমর প্রতীক।

আজ ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ সালে আমরা তাঁকে স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। বুড়িবালামের যুদ্ধের বীরত্ব, তাঁর অসীম সাহস এবং আত্মত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে স্বাধীনতা কোনো উপহার নয়, বরং রক্ত ও আত্মবলিদানের বিনিময়ে অর্জিত এক মহামূল্য সম্পদ। তাই যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, আমাদের প্রিয় ‘বাঘাযতীন’, চিরকাল বাঙালির গর্ব ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অক্ষয় আলোকস্তম্ভ হয়ে থাকবেন।

নবম শ্রেণী, কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ,  উত্তর ২৪ পরগনা, ডাঙ্গাপাড়া, রহড়া 

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন