দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি
কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক বিরোধী শ্রম কোড বাতিল, উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি ন্যূনতম মজুরি দ্রুত চালু, দীর্ঘদিন ধরে বাগানের জমিতে বসবাসকারী সমস্ত দখলীকৃত জমির পাট্টা প্রদান, পিএফ, গ্রাচ্যুইটি এর ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ করার দাবিতে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন চা বাগানে গেট মিটিং সম্পন্ন হয় সোমবার। চা শ্রমিকদের সমস্ত সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরাম এই গেট মিটিংয়ের ডাক দিয়েছিল। উত্তরবঙ্গের পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্সের সমস্ত বড় এবং নতুন চা বাগানে এই কর্মসূচি সংগঠিত হয়। জয়েন্ট ফোরামভুক্ত সমস্ত ইউনিয়নগুলি এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের করলাভ্যালী, ডেঙ্গুয়াঝাড়, ভান্ডিগুড়ি, ময়নাগুড়ি ব্লকের যাদবপুর, রাজগঞ্জ ব্লকের সরস্বতীপুর চা বাগান সহ অন্যান্য নতুন চা বাগানের ফ্যাক্টরির সামনে গেট মিটিং সংগঠিত হয়। গেট মিটিংগুলিতে বক্তব্য রাখেন পৃথা তা, শুভাশিস সরকার, প্রফুল্ল লাকড়া , গোবিন ওরাও, অমল নায়েক, পরিমল লোহার, রোহিত ওরাও, লাল্টু মোহাম্মদ, রুপু লোহার প্রমূখ। চা বাগানের ৩০ শতাংশ জমি কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করা হয় এই গেট মিটিংগুলি থেকে। গেট মিটিংয়ের পর কেন্দ্রীয় দাবির সাথে দ্রুত বাগানের জ্বালানি প্রদান, জঙ্গল পরিষ্কার, আবাস সংস্কার, ছাতা, ত্রিপল, জুতা প্রদান সহ বাগানের স্থানীয় সমস্যা নিয়ে প্রত্যেক বাগান ম্যানেজারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, দীর্ঘদিন যাবৎ পড়ে থাকা শ্রমিকদের আইনসম্মত দাবি গুলো বাগান মালিক, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার পূরণ করছে না। ২০১৫ সালে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মধ্য দিয়ে ন্যূনতম মজুরি প্রদানের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার একের পর এক মিটিং হয়েছে। কিন্তু চা বাগানের সাথে যুক্ত শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না। মাতৃত্বকালীন ছুটি যে আইনি অধিকার তাও সমস্ত স্তরের মহিলা শ্রমিকরা পাচ্ছেন না। মাতৃত্বকালীন ছুটি স্থায়ী, অস্থায়ী সমস্ত মহিলা শ্রমিকদের প্রদান করবার দাবি জানিয়েছে জয়েন্ট ফোরাম। এই দাবি নিয়ে এদিন বাগানে বাগানে গেট সভা সংঘটিত হয়। চা বাগানের শ্রমিকদের দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে চা শ্রমিকরা জমির অধিকার পেয়েছে। গেট মিটিংগুলিতে সরকারের পাঁচ ডেসিমেল জমি দেওয়ার নির্দেশিকার বিরোধিতা করা হয়। শ্রমিকদের দাবি যে যেখানে অবস্থান করছেন বংশপরম্পরায় সেখানেই তাদের জমির পাট্টা প্রদান করতে হবে। এছাড়া জমির ডিড প্রদানের দাবি জানানো হয়। খাদ্য সুরক্ষায় আইনের মাধ্যমে সমস্ত চা শ্রমিকদের ৩৫ কেজি খাদ্য সামগ্রী বিতরণের দাবিও জানানো হয়। চা শ্রমিকদের অভিযোগ তাদের ছেলেমেয়েরা সরকারি বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন করে, আর্থিক কারণেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তাদের অভিযোগ স্কুলগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার ফলে গ্রামের স্কুলগুলিতে পঠন-পাঠনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে এর ফলে তাদের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনার আগ্রহ হারাচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে ও উন্নত শিক্ষার জন্য শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিও জানানো হয়েছে দাবিপত্রে। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার চা শ্রমিকদের জন্য যে প্রকল্প গুলো ঘোষণা করেছেন বাস্তবের মাটিতে প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ এবং বকেয়া অর্থ প্রদানের দাবি চা শ্রমিকরা জানান এই দাবি পত্রের মাধ্যমে। যেভাবে কাঁচা পাতার দাম হঠাৎ করে কমে যাচ্ছে, এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চা উৎপাদনকারীরা এবং শ্রমিকেরা। সেই কারণে কাঁচা পাতার ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবি জানানো হয়। দাবিগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি না হলে আগামীতে বড় ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন চা শ্রমিক নেতৃত্ব।
Tea Garden Workers
শ্রম কোড বাতিল সহ একাধিক দাবিতে চা শ্রমিকদের গেট মিটিং, ডেপুটেশন
ছবি- প্রবীর দাশগুপ্ত
×
Comments :0