মুক্তধারা
গল্প
ড্রাইভার
অনিল কুমার রায়
বাসটায় বেশ ভিড়। দাঁড়িয়ে ছিলাম ড্রাইভারের ঠিক পাশটাতে। তাই ভিড়ের ধাক্কা থেকে খানিকটা রক্ষা। হাওড়া-আমতা রুটে বাস ধীরে চলে। তবে এই বাসটা চলছিল বেশ জোরে। হঠাৎ চোখে পড়ল একজন বাইক-আরোহী দুজন শিশুকে নিয়ে একেবারে বাসের সামনে।
হৈ হৈ রৈ রৈ চিৎকার। গেল গেল রব।আমার চোখ দুটো গেল আপনা থেকে বুজে।ভয়ংকর কর্কশ চিৎকার করে বাস টা গেলো থেমে। প্রচন্ড ঝাকুনি বাসের ভিতর। আমার কপালটা লোহার পাইপে গেল ঠুকে।পাইপটা ধরে বসে পড়লাম হয়তো কোনো যাত্রীর ঘাড়ে।দেখি কারো মাথা গেছে ফেটে।রক্ত পড়ছে ঝরে। কারো ভেঙেছে হাত।অনেক মন্দ কথা শুনতে হচ্ছে ড্রাইভারকে। কেউ বলল,“চোখ বুজে গাড়ি চালাচ্ছ নাকি?"
কেউ বলল ,“আমরা কি মানুষ নয় যেমন করে খুশি নিয়ে যাবে”?
কেউ বলল,“ মাথা ফাটা,হাত ভাঙ্গা,কপালে চোট এসব হচ্ছে কি?"
কেউ বলল," ড্রাইভারকে দু-চার ঘা দেওয়া দরকার।"
সামনে যারা দু-একজন বাইক-আরোহীদের দেখেছে তাদের কেউ বলল,"ড্রাইভার ভাই,আমাদের প্রাণটা কি প্রাণ নয়।"
রাস্তার ধারে দোকান থেকে কেউ বলল,"এরকম বাইক ড্রাইভারকে চাপা দেওয়াই ঠিক কাজ। হেলমেট নেই,দুজন শিশু রয়েছে। ওর কোন কান্ডজ্ঞান নেই।"
ড্রাইভার নির্বিকার। নিখুঁতসময়ে নিখুঁতভাবে ব্রেক কষেছে। ধৈর্যসহকারে নিবিষ্টমনে শুনে যাচ্ছে কু-কথার প্রতিযোগিতা। ওদিকে বাইক-আরোহীর অবস্থা খুব খারাপ। দুজন শিশুকে নিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বাঁচল।
বাস শেষ স্টপে দাঁড়াল। যাত্রীরা নেমে গেল। বাস ড্রাইভার চিন্তিত মনে একটু হেঁটে একটা চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসল। আমিও পাশে গিয়ে বসলাম। ড্রাইভারকে বললাম,"দারুন হাত তোমার।দারুন উপস্থিত বুদ্ধি নিয়ে প্রাণরক্ষা করেছ। খুব ধৈর্য সহকারে যাত্রীদের কথা সহ্য করেছ।"
প্রশংসা শুনে তার মনে একটু আনন্দ হল। বলল,"বাইক-ড্রাইভার হেলমেট নেয়নি,বেপরোয়া গাড়ি চালিয়েছে,অনেক দোষ। কিন্তু শিশু দুজনের তো কোন দোষ নেই। ড্রাইভারের কাজ হল প্রাণরক্ষা করা। যাত্রীরা একটু আহত হয়েছে।তার জন্য একটু রেগে গেছে।এছাড়া অন্য উপায় ছিল না।"
এমন সময় বাইক-ড্রাইভার দু-শিশুকে নিয়ে বাস-ড্রাইভারের সামনে এসে উপস্থিত।বাস-ড্রাইভারের হাত ধরে অজস্র ধন্যবাদ দিল।দুই-শিশু অবাক হয়ে চেয়ে রইল প্রাণ বাঁচানো জেঠুর দিকে।বাস-ড্রাইভার খুশি হয়ে বলল,"বাচ্চাদের নিয়ে এভাবে বাইক চালাবে না।আর হেলমেট অবশ্যই পরবে।" বাচ্চা দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,“হেলমেট না পরে বাইকে চাপবে না।”
Comments :0