MUKTADHARA | STORY — BALUCHURI | BHABANISHANKAR CHARABORTY — 8 APRIL 2024

মুক্তধারা | গল্প — বালুচরী | ভবানীশংকর চক্রবর্তী — ৮ এপ্রিল ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA  STORY   BALUCHURI  BHABANISHANKAR CHARABORTY  8 APRIL 2024

মুক্তধারা 

গল্প

বালুচরী 
ভবানীশংকর চক্রবর্তী 

 

                   কাচের মতো স্বচ্ছ জল।শীর্ণধারা সেই জলের দিকে তাকিয়ে কাঁসাই-এর বালুচরে একা দাঁড়িয়েছিল ঐশী।কাল বিকেলেই শেষকৃত্য হয়েছে বাবার।অনতিদূরে সেই চিতাবশেষ।শেষ মাঘের পড়ন্ত রোদ মেখে কাঁসাই এখন রূপসী।খুব ছোটোবেলায় মাকে হারিয়ে একটু একটু করে  যত বড়ো হয়ে উঠেছে কাঁসাইকে তত আঁকড়ে ধরেছে।ডুব দিয়ে , সাঁতার কেটে,কাপড় কেচে,বাসন ধুয়ে তার স্নেহ-মায়া-মমতা মেখে নিয়েছে নিজের গায়।রণজয়-এর সাথে বিয়ের পর এই গ্রাম ছেড়ে দু-বছর হল কাঁসাইকে তার ছেড়ে যাওয়া।আপনজনদের ছেড়ে যেতে কষ্ট হয়েছিল খুব।কিন্তু সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছিল কাঁসাইকে ছেড়ে যেতে।
              রাক্ষসী কাঁসাই ।ফিবছর দুপারের কোথাও কুল ছাপিয়ে, কোথাও বা পাড় ভেঙে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ে সে।ভাসিয়ে দেয় বাগান-খেত-গেরস্থালি।রাগ হয় খুব ঐশীর।রাক্ষসী,সর্বনাশী বলে গালি দেয় মনে মনে।বাবাকেও নিল  রাক্ষসী।তার বুকে  তারই শেষ চিহ্ন ওই চিতাভস্ম।
           অনেক কথা মনে পড়ছে তার।সবে বড়ো  হচ্ছে তখন সে।স্নানের সময় কাঁসাই-এর পাড়ে   ছেলেছোকরার দল জটলা করত ।বিধুজেঠিমা একদিন বকাঝকা করেছিল খুব ।একগাছি কঞ্চি নিয়ে তাড়াও করেছিল তাদের।বলেছিল , "অসভ্যের দল,যা  এখান থেকে ।না- হলে এই কঞ্চি দিয়ে পিটিয়ে মারব তোদের।মেয়েদের চানের ঘাটে গুলতানি!জায়গা পাসনি আর!" তারপর স্নানের ঘাটে নেমে জেঠিমা হাসতে হাসতে বলেছিল,  ' ওটা ওদের দোষ নয় রে মা, বয়সের ধম্মো । ভালোমন্দ বুঝিয়ে শাসন করতে হয়।নাইলে মানুষ হবে ক্যামনে!" দুজনেই হেসে উঠেছিল।তবে তারপর ঘাটের কাছে তাদের আর জটলা করতে দেখা যায়নি।
                এইসব ভাবতে ভাবতে  হঠাৎ খেয়াল হল, শীর্ণা কাঁসাই  স্ফীত হয়ে উঠছে।স্বচ্ছ জল হয়ে উঠছে ঘোলা।জল বেড়ে উঠছে ক্রমশ।দ্রুত পায়ে পাড়ে উঠে এল সে।এই মরশুমে কোথাও কোথাও নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে চাষের জন্য জল ধরে রাখা হয়।অতিরিক্ত জলের চাপে কোনো বাঁধ ভেঙে পড়তে পারে।
তাই হয়েছে বোধহয়।জল বাড়ছে। বাবার চিতাভস্ম ভেসে যাচ্ছে সেই বোরো- বাঁধভাঙা জলের স্রোতে।
আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে
দৃষ্টির বাইরে ।হু হু করে কান্না
বেরিয়ে এল বুক ভেঙে।কখন
রণজয় এসে দাঁড়িয়েছে পাশে
টের পায়নি ঐশী। তার হাতদুটি নিয়ে নিজের হাতে শক্ত করে ধরল রণজয়। শান্ত গলায় বলল, " চলো ঐশী, সন্ধ্যা নামছে"।

Comments :0

Login to leave a comment