SALIM MAMATA MODI

মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি সফর তদন্ত ঠেকাতে, বিজেপি’র সঙ্গে রফা করতে, সরব সেলিম

রাজ্য

আন্দোলনরত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের সঙ্গে মহম্মদ সেলিমের ছবি সংগ্রহ থেকে।

মমতা ব্যানার্জি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন রাজ্যের পাওনা আদায়ের জন্য নয়। একদিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত ধামাচাপা দেওয়া জন্য। আরেকদিকে লোকসভা ভোটে বিজেপি’র সঙ্গে গোপন আসন সমঝোতার জন্য নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক। 
মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি সফর নিয়ে প্রচারের মধ্যেই মঙ্গলবার এই অভিযোগ তুললেন মহম্মদ সেলিম। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেছেন, ‘‘কয়লা কাণ্ডে চার্জশিট থেকে ভাইপোর নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। এবার একদিকে কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর বদলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতালে। আরেকদিকে ইডি-সিবিআই ‘গো-স্লো’ হয়েছে। তখনই যথারীতি রুটিন অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বলেছিলেন লড়ে গিয়ে টাকা নিয়ে আসব, আর এখন বলছেন একান্ত সাক্ষাৎ করে টাকা নিয়ে আসবেন। আসলে লোকসভা ভোটের আগে সমঝোতা করা হচ্ছে। ক’টা বিজেপি আর ক’টা তৃণমূল আপসে সমঝোতা হয়ে যাক।’’
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ থাকলেও হাসপাতাল থেকে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠস্বরের নমুনা নিতে পারেনি কেন্দ্রীয় সংস্থা। এই ‘কালীঘাটের কাকু’ আসলে ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার কর্তা। যে সংস্থার সিইও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির টাকা এই সংস্থায় জমা পড়ার অভিযোগ রয়েছে আদালতে। টেলিফোনে কথোপকথন ইডি’র হাতে এসেছে। তদন্তে ধৃত ভদ্রেরই কিনা তা পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রয়োজন। প্রমাণিত হলে তৃণমূলের শীর্ষস্তরের দুর্নীতি যোগ স্পষ্ট হবে বলে এর আগে ইডি’র সূত্র জানিয়েছে। 
সেলিম বলেন, ‘‘দেখলাম ইডি-সিবিআই কী অসহায়। এসএসকেএম হাসপাতালে কন্ঠস্বরের নমুনা নিতে পারছে না। হাইকোর্টের নির্দেশ থাকলেও কী তাকে কার্যকর করা যায় না?’’ 
সেলিম বলেন, ‘‘আরএসএস তৃণমূলকে তৈরি করেছিল বামপন্থীদের কোণঠাসা করার উদ্দেশ্যে। দুর্নীতি নিয়ে এখন বিজেপি অনেক কথাই বলছে। যাঁরা বলছেন, তাঁরাই আবার কিছুদিন আগে তৃণমূলে ছিলেন। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার। পরিকল্পনামাফিক এজেন্সিগুলো ঝাঁপ থেকে বেরচ্ছে আবার ঝাঁপের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে।’’
অক্টোবরে বামপন্থীরা সিবিআই’র দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান করেন তদন্তের দাবিতে। সেলিম বলেন, ‘‘তখন তৎপরতা দেখালো কেন্দ্রীয় সংস্থা। ভাইপোকে ডাকছে, তাঁর পরিবারের লোকদের ডাকছে। এখন দেখবেন সব চুপ। বিজেপি এখন ভাইপো সম্পর্কে চুপ। যখনই বামপন্থীরা রাস্তায় নামছেন আন্দোলন করছেন তখনই এমন ঘোঁট পাকাতে দেখা যাচ্ছে। মানুষ রাজ্যের সবকারের ওপর বীতশ্রদ্ধ হচ্ছে, কেন্দ্রের সরকারের ওপরও ক্ষোভ বাড়ছে। আরএসএস মনে করে তৃণমূল মন্দের ভালো। ওরা থাক। তাই ভাইপোকে ছেড়ে দিয়ে এখন চলছে ‘কাকু’ পর্ব।’’ 
 সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে তিনি ‘ইন্ডিয়া’-কে শক্তিশালী করতে যাচ্ছেন। আর ২০ তারিখে তিনি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন একান্তে। কাগজে লেখা হবে রাজ্যের পাওনাগণ্ডা বুঝে নেওয়ার জন্য তিনি যাচ্ছেন। সেলিম প্রশ্ন তোলেন, গত ৯ বছরে কতবার পাওনাগণ্ডা মেটাতে দিল্লি গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী? রাজ্যের কত পাওনাগণ্ডা মেটালেন? 
একশো দিনের টাকা, আবাস যোজনার টাকা, রাস্তাঘাটের টাকা, পানীয় জলের টাকা, নিয়ে নয়ছয় হয়েছে। কেন্দ্রীয় সহায়তাপ্রাপ্ত প্রকল্পের টাকা নয়ছয় হয়েছে, তা’হলে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা নিল না কেন?
সেলিম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধে এফআইআর করতে হয়, তদন্ত করতে হয়, মামলা দায়ের করতে হয়। বিজেপি বলছে দুর্নীতি হয়েছে কিন্তু তাদের সরকার দোষীদের শাস্তি দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা করছে না। সাপও মরবে না, লাঠিও ভাঙবে না, অথচ সাপলুডো খেলা হচ্ছে। গরিব মানুষ টাকা পাচ্ছেন না, অথচ টাকা তাঁর প্রাপ্য। তৃণমূল দুর্নীতি করছে। আর বিজেপি দুর্নীতি দেখিয়ে টাকা দিচ্ছে না। তার কারণ আসলে বিজেপি একশো দিনের মতো কাজের প্রকল্পই বন্দ করতে চায়। 
সেলিম বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন স্বচ্ছতার কথা। তা’হলে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে গোপনে রাজনৈতিক দলকে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু আছে কেন। নির্বাচনী বন্ডে সবচেয়ে লাভবান বিজেপি, তারপর রয়েছে তৃণমূল। এখানেই দু’জনের স্বার্থ একই তারে বাঁধা রয়েছে।’’ 
সেলিম বলেন, ‘‘আমরা বলছি রাজ্যকে বাঁচাতে হলে, দেশ বাঁচাতে হলে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া জনতাকে একজোট থাকতে হবে। আবার ভোটের আগে রামমন্দির নিয়ে রাজনীতি চলছে। নব্বই দশকের গোড়া থেকে দেখে আসছি। যে মানুষের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে, তাঁর সঙ্কট থেকে নজর সরিয়ে দিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। আর তার বিরুদ্ধে তৃণমূল বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়বে? ওরা বলছে গীতাপাঠ করাবো। তার আগে বিজেপি প্র্যাকটিস করতে শুরু করে দিয়েছে।’’
এদিন বর্ধমানে সিপিআই(এম) জেলা কমিটির দু’দিনের বর্ধিত অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছেন তিনি।

Comments :0

Login to leave a comment