সড়কের লড়াইকে সংসদে নিয়ে যেতে, লোকসভায় মানুষের কন্ঠস্বর তুলে ধরতে সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্ট আমাদের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেছে। মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থী হিসাবে শনিবার বিকালে তাঁর নাম ঘোষণার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথাই বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন রাতেই তিনি মুর্শিদাবাদে পৌঁছে গিয়েছেন, রবিবার সকাল থেকেই পার্টি কর্মীদের নিয়ে সভা করবেন বলে জানিয়েছেন।
যুব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ডিওয়াইএফআই’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন মহম্মদ সেলিম। সংসদীয় রাজনীতিতে তিনি অভিজ্ঞ, সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসাবে লোকসভায় দু’বার এবং রাজ্যসভায় দু’বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। এদিন প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণার পরে তিনি বলেছেন, ‘‘দু’বছর ধরে এরাজ্যে পার্টির সম্পাদক হিসাবে পার্টি সংগঠনকে মজবুত করা, নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার জন্য চেষ্টা করেছি। বাংলার পুনর্জাগরণে ছাত্র-যুব নতুন প্রজন্মকে সোচ্চার করে তুলতে কাজ করেছি। এলাকায় এলাকায় ইনসাফের দাবিতে মানুষের সোচ্চার হওয়া এবং ব্রিগেডে যুবদের আহবানে বিরাট সমাবেশে আশাব্যঞ্জক লক্ষ্মণ দেখা গেছে। এখন দেশের সামনে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে মানুষ বিজেপি’কে হটাতে চাইছে, এরাজ্যে তৃণমূলের হাত থেকে মুক্তি চাইছে। ওরা যে যোগসাজসে চলছে, সংসদে মানুষের কথা বলে না সেটা মানুষ বুঝতে পারছে। তাই মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। সেই লড়াইকে সংসদে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব আমরা বামফ্রন্টের প্রার্থীরা।’’
তাঁর প্রার্থী হওয়া সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের পার্টির জেলা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত আলোচনা করেই আমি প্রার্থী হয়েছি। এর আগেও সূর্য মিশ্রও রাজ্য সম্পাদক থাকাকালীন বিধানসভায় প্রার্থী হয়েছিলেন, এবারের নির্বাচনেও আরেকটি রাজ্যে পার্টির রাজ্য সম্পাদক প্রার্থী হচ্ছেন।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কংগ্রেসের থেকেও প্রস্তাব ছিল যাতে আমি মুর্শিদাবাদে প্রার্থী হই। এছাড়াও দলমত নির্বিশেষে বহু মানুষ চেয়েছেন যে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে এবারের বড় লড়াইতে এরাজ্যের তৃণমূল বিজেপি বিরোধী মানুষকে এককাট্টা করতে সাহায্য করি। একেবারে বুথ স্তর থেকে মানুষকে একজোট করে যৌথ প্রচারের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
এবারের নির্বাচনকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে সেলিম বলেছেন, ‘‘নির্বাচনী বন্ডে স্পষ্ট যে কর্পোরেট এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির আঁতাত দেশের মিলনধর্মী সংস্কৃতিকে ধংস করতে চাইছে। সিএএ নিয়ে ভয় দেখাচ্ছে, মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভাগ করছে। আমরা বামপন্থীরা সংসদে এই সব পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছিলাম, এখন সংসদে বামপন্থীরা দুর্বল হতেই এরাজ্য থেকে দুই শাসক দলের যারা সেখানে আছে তারা কেউ মানুষের স্বার্থে কথা বলছে না, তারা যোগসাজশে চলছে। আবার বামপন্থীদের কন্ঠস্বর ফিরিয়ে এনে জনগণের ওপরে আক্রমণের মোকাবিলার জন্যই আমাদের লড়াই। যেখানে মীরজাফরদের সাহায্যে ব্রিটিশরা দেশ দখল শুরু করেছিল সেখান থেকেই আজকের শোষক ও শাসকদের তাড়ানো শুরু হবে। পূর্ব দিক থেকেই দেশে সূর্যোদয় ঘটবে।’’
মুর্শিদাবাদ থেকে নির্বাচিত হলে তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে গঙ্গা ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। এখন সেসব বন্ধ হয়ে গেছে। সীমান্তে চোরাচালান হচ্ছে আর বিএসএফ পুলিশ গ্রামবাসীদের হেনস্তা করছে। আমরা বলছি, চোরাচালান নয়, স্থানীয় মানুষ যাতে আইনসম্মতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে মুর্শিদাবাদে। কেন মুর্শিদাবাদের যুবকদের কাজের জন্য পরিযায়ী হয়ে অন্য রাজ্যে চলে যেতে হবে? কেন মুর্শিদাবাদ জেলায় উচ্চশিক্ষার এবং স্কিল ডেভলপমেন্টের ব্যবস্থা হবে না? শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে যে মুর্শিদাবাদে তৃণমূল লুটেরারাজ কায়েম করেছিল, সেখানে উন্নয়নের জন্য আশু, মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দিল্লি থেকে লড়াই করে আদায় করে আনতে হবে। রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে দিল্লিতে সোচ্চার হওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’’
Md Salim
সড়কের লড়াইকে সংসদে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য: সেলিম
×
Comments :0