Modi

মোদীর সময়মত ‘প্রাণ’ পাবে রামলালা

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সময়মতই ‘প্রাণ’ পাবে রামলালা। মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের প্রধান নৃপেন্দ্র মিশ্রের কথায় তা স্পষ্ট হয়েছে। আগামী বছর জানুয়ারির ২২-২৪ তারিখের মধ্যে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু নির্দিষ্ট দিন এখনও জানাননি প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তিথি-নক্ষত্র ইত্যাদি যা মান্য করা হয়, এই ক্ষেত্রে তা ততো গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রীর সময় অনুযায়ী রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ হবে। অবশ্য, প্রতিনিয়ত যে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ‘অবতার’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন, তার কাছে এটাই স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সেই সময় জানানো হলে তারপর ট্রাস্ট ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ সংক্রান্ত সমগ্র কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে পারবে বলে জানিয়েছেন মিশ্র। 
নৃপেন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অযোধ্যায় রামমন্দিরের এক তলার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। যে কোনোভাবে সেই কাজ শেষ করা হবে। ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে সম্পূর্ণ মন্দিরটি হবে তিন তলা। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে মন্দির উদ্বোধন করতে মরিয়া সঙ্ঘ-বিজেপি। মন্দির নির্মাণে এখনও পর্যন্ত ৯০০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছ ট্রাস্ট। কিন্তু গোটা মন্দির নির্মাণে এর দ্বিগুন অর্থ অর্থাৎ প্রায় ১৭০০-১৮০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাস্টের প্রধান মিশ্র। বাবরি মসজিদ-রামজন্মভূমি বিতর্কের বিবাদিত ২.৭৭ একর জমির পুরোটাই ‘রামলালা বিরাজমান’কে দিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু মোদী সরকার প্রায় ৭০ একর জমি মন্দির ট্রাস্টকে দিয়ে দেয়। এই জমির একাংশ উত্তর প্রদেশের কংগ্রেস সরকার থাকাকালীন অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। মূলত বাবরি মসজিদের আশপাশের। বাকি জমি বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার পরে কেন্দ্রের নরসিমা রাও সরকার অধিগ্রহণ করে লোহার ব্যারিকেড করে ঘিরে দিয়েছিল। মোদী সরকার সেই সমগ্র জমি মন্দির ট্রাস্টকে দিয়ে দিয়েছে। 
এরমধ্যে ২.৫একর জমির মধ্যেই মূল মন্দির নির্মাণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৃপেন্দ্র মিশ্র। আর পরিক্রমা পথ ধরলে মোট ৮ একর জমি। তারপরও বিপুল জমি ট্রাস্টের হাতে রয়ে গেছে। এই ব্যারিকেড দেওয়া এলাকার মধ্যে আরও অনেক মন্দির ছিল। সেই সব মন্দির ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনকি পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্ব আছে এমন স্থানও ধ্বংস করার অভিযোগ উঠেছে। ফৈজাবাদ থেকে সরযুর তীরে নয়াঘাট পর্যন্ত মূল সড়ক থেকে রাম মন্দির পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ৫৬৬ মিটার লম্বা এবং ৩০ মিটার চওড়া জন্মভূমি পথ তৈরি করা হয়েছে। সেই পথে লাল পাথর দিয়ে মোড়া হয়েছে। এরপরেও মন্দিরের নামে দেদার জমি নিচ্ছে ট্রাস্ট। ৭০ একরের পরিবর্তে এখনও পর্যন্ত ১০৮ একর জমি নিয়ে নিয়েছে ট্রাস্ট। সেই কাজ করতে গিয়ে ব্যারিকেডের বাইরে থাকা বিভিন্ন মন্দির, মঠ, আবাসিক বাড়ি জমি দেদার কিনছে ট্রাস্ট। না দিয়ে কোনো উপায় নেই। বিপুল দুর্নীতি এবং লুটের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৯ সালে এই কাজ শুরু হতেই বিজেপি’র তৎকালীন বিধায়ক, মেয়রের বিরুদ্ধে লুটের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ওঠে। দুই একটি ক্ষেত্রে আপত্তি, অভিযোগ, মামলা মোকদ্দমা হয়েছে কিন্তু কোনো কিছুকেই পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্র-রাজ্যে বিজেপি’র ডবল ইঞ্জিনের সরকার ঘরবাড়ি, দোকান দেদার ভেঙেছে। হাজার হাজার গরিব মানুষের রুটি রুজির সংস্থান গেছে। অথচ নৃপেন্দ্র মিশ্রের দেওয়া হিসেবেই স্পষ্ট, যে বিশাল মন্দির তৈরি করা হচ্ছে তাও ৮ একর জায়গার মধ্যেই হয়ে যেত। এত সংখ্যক মানুষের দোকান ভাঙতে হত না। বাড়ি, জমির দখল নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। 
নির্দিষ্ট সময় এখনও প্রধানমন্ত্রী না দিলেও অযোধ্যায় খবর ছড়িয়েছে ২২ জানুয়ারি প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে রামলালার। তারপর থেকে দর্শনার্থীদের জন্য মন্দির খুলে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আরএসএসের বিভিন্ন সংগঠনের কাছে নির্দেশ পৌঁছেছে মন্দির উদ্বোধনের পরে বিশেষত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে লোকসভা ভোট পর্যন্ত দেশের নানা প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অযোধ্যায় নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এই কাজের মুখ্য দায়িত্বে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা এবং মন্দির নির্মাণ ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই এই নিয়ে অযোধ্যায় একটি বৈঠকও করে ফেলেছেন গত মাসে। 
মন্দির ট্রাস্ট স্থির করেছে ১৪ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি থেকে অনুষ্ঠান শুরু করে দেবে। দশ দিন ধরে এই অনুষ্ঠান চলবে। সাত দিন ধরে এই অনুষ্ঠান চলার পরে ২০ তারিখের পরে মোদী যাবেন। সাত দিনে দেশজুড়ে প্রবল আবেগ তৈরি করা হবে রামলালা এবং মন্দিরকে নিয়ে। তারপর মোদী ‘প্রাণ’ দেবেন রামলালার। সেই অনুষ্ঠানে ১০ হাজার বিশিষ্ট অতিথিকে ডাকা হবে। ‘বিশিষ্টদের’ মধ্যে মন্দির আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা থাকবেন, যারা বাবরি ধ্বংসে অভিযুক্ত ছিলেন। ফৌজদারি অপরাধের মামলা ছিল যাদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি নানা প্রভাবশালী মঠ-মন্দিরের সাধুসন্ত, রাজনৈতিক নেতারা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুণীজনকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি’র সঙ্গে থাকা বিনোদন জগতের তারকারা থাকবেন। যেমন ছিলেন নতুন সংসদ ভবনে।  
বিশাল মন্দিরে রামলালার মূর্তি হবে ৫১ ইঞ্চির। নৃপেন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, দর্শনার্থীরা রামলালার দর্শন করতে পারবেন ১৫-২০ সেকেন্ডের জন্য। যদিও তাঁর দাবি, সমগ্র মন্দির দেখে তাঁরা খুশি হবেন। নৃপেন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, মন্দির নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে খননের সময়ে বেশ কিছু প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে, সেগুলি ট্রাস্টের কাছে অতি যত্নে রাখা হয়েছে। আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া (এএসআই) এর সঙ্গে কথা বলে সেগুলি কোনো একটি মিউজিয়ামে রাখা হবে দেখার জন্য। প্রত্নবস্তু  এএসআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি কেন, কেনই বা সেগুলি ট্রাস্ট নিজের হাতে রেখে দিয়েছে, সেই বিষয়ে যদিও কোনো কথা বলেননি প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন প্রিন্সিপ্যাল সচিব।
 

Comments :0

Login to leave a comment