Sandeshkhali, Calcutta HC

সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা বাতিল করে দিল হাইকোর্ট

রাজ্য জেলা

হাইকোর্টে জোড়া মামলায় সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে রাজ্য সরকারকে সতর্ক করলো আদালত। সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা বাতিল করে দিল হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এই নির্দেশ দিয়ে সন্দেশখালি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছে খেয়ালখুশি মত ১৪৪ ধারা ব্যবহার করা যায় না। এদিকে এদিনই কলকাতা হাইকোর্টের একটি পৃথক এজলাস সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে স্বতঃপ্রনোদিত মামলা রুজু করেছে। বিচারপতি অপূর্ব সিনহারায় এই মামলা রুজু করে মন্তব্য করেছেন, এখনই সেখানকার অবস্থা বিবেচনা ব্যবস্থা গ্রহণের উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে আদালত। মানুষ আদালতের ভরসার দিকে তাকিয়ে আছেন। সেখানে মহিলাদের ওপর  যৌন নির্যাতন এবং কোন আইন না মেনে আদিবাসীদের জমি নিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে। এই অবস্থায় সন্দেশখালির পরিস্থিতি সরজমিনে দেখে রিপোর্ট জমা দেবার জন্য আদালত বান্ধব নিয়োগ করেছে। আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ন চট্টোপাধ্যায়কে আদালত বান্ধব হিসাবে নিয়োগ করে ২০ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারপতি সিনহারায় মন্তব্য করেছেন, সেখানকার মানুষ ভয়ার্ত পরিবেশে রয়েছেন। তাঁদের অবস্থা শুনলে শিহরিত হতে হয়। বিচারপতি হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন দ্রততার সঙ্গে রাজ্য সরকারকে এব্যাপারে নোটিশ পাঠাতে হবে। রাজ্য পুলিশের আইজি, উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলা শাসক এবং জেলার পুলিশ সুপারকেও নোটিশ দিতে হবে।
বিচারপতি সেনগুপ্ত রাজ্য সরকারের আইনজীবীকে বলেন, এই মামলা হালকা করে দেখবেন না। মামলায় যেসমস্ত অভিযোগ রয়েছে তা মারাত্মক। বিচারপতি বলেন দু-তিনটে জায়গায় হলে কিছু বলার ছিল না। গোটা সন্দেশখালি জুড়ে ১৪৪ ধারা জারির বিজ্ঞপ্তি কেন। এই বিজ্ঞপ্তিতে সঠিক কোন কারণও দেখানো হয়নি। বিচারপতি মন্তব্য করেন, এবার তো বলবেন, ‘‘কলকাতায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে গোটা কলকাতায় ১৪৪ ধারা জারি করা হল।’’  বিচারপতি আরও বলেন মামলায় এমন সব গুরতর অভিযোগ রয়েছে তা দেখে আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। এই সময় আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য কাশ্মীর সংক্রান্ত একটি মামলায় ১৪৪ ধারা জারি করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট গাইড লাইন ব্যাখ্যা করে বলেন, কী কারণে ১৪৪ ধারার বিজ্ঞপ্তি তা জানানো হয় নি। ১৪৪ ধারা মানুষের সামাজিক স্বাধীনতা খর্ব করে। মানুষের চলমান জীবনযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েন। গোটা সন্দেশখালিতে পুলিশ এবং প্রশাসন মানুষের সামাজিক স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ করে দলীয় শাসন কায়েম করতে চাইছে। ভট্টাচার্য বলেন,  ৫জানুয়ারি ইডি’র অফিসাররা সরবেরিয়া নামে একটি জায়গায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই ঘটনায় পিছনে শাসক দলের নেতা শাহজাহান নামে একজনের নাম উঠে এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের বহু অভিযোগ রয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করার। কিন্তু ৩৯ দিন হয়ে গেল শাহজাহানকে পুলিশ ধরতে পারলো না। অথচ গ্রামের মানুষের অধিকারের জন্য যে মানুষটি রাস্তায় নামেন, সেই নিরাপদ সর্দারকে চারদিন জেলে পুরে রাখা হয়েছে।
বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত মন্তব্য করেন, কতটা এলাকা উত্তেজনা প্রবন, সেটা উল্লেখ করা হয়নি বিজ্ঞপ্তিতে। এই ধারা প্রয়োগ করার আগে যত্ন নিয়ে পরস্থিতি খতিয়ে দেখা উচিত ছিল। এলাকা চিহ্নিত করার প্রয়োজন ছিল। আধুনিক প্রযুক্তি ড্রোনের মাধ্যমে এলাকা পর্যবেক্ষণ করার উপায় ছিল। কিন্তু কিছুই হয় নি। এই সময় সরকারী আইনজীবী আদালতকে জানান, সন্দেশখালিতে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। আগুন লাগানোর মত ঘটনাও ঘটছে। 
বিচারপতি সেনগুপ্ত সরকারী আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, মামলায় অভিযোগ রয়েছে, তিন চার বছর ধরে সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম চলছে। কৃষককদের জমি কেড়ে নিয়ে ভেড়ি তৈরি করা হয়েছে, দিন মজুরদের কাজ করিয়ে টাকা দেওয়া হয় না। সাধারণ মানুষ বিডিও অফিসে যেতে পারছেন না। লুকিয়েও প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলতে পারছেন না। এরসঙ্গে রয়েছে ধারাবাহিক ভাবে মহিলাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন মহিলারা। এসব শুনেও আদালত চুপ করে থাকবে। বিচারপতি নির্দেশ দেন সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে না। প্রয়োজনে সেখানে শসস্ত্র বাহিনী মোতায়েম করা যেতে পারে। রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ পদাধিকারিরা সেখানে গিয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ১৪৪ধারা জারি করে রেখে দেওয়া যায় না। 

Comments :0

Login to leave a comment