RABIKATHA NAZRUL

নজরুল-এর রবিকথা

সাহিত্যের পাতা

RABIKATHA NAZRUL 16 MAY

রবি-হারা

কাজী নজরুল ইসলাম

 

দুপুরের রবি পড়িয়াছে ধলে অস্ত-পথের কোলে
শ্রাবণের মেঘ ছুটে এল দলে দলে
উদাস গগন-তলে
বিশ্বের রবি, ভারতের কবি,
শ্যাম-বাংলার হৃদয়ের ছবি
তুমি চলে যাবে বলে।

তব ধরিত্রী মাতার রোদন তুমি শুনেছিলে নাকি,
তাই কি রোগের ছলনা করিয়া মেলিলে না আর আঁখি?
তব রসায়িত রসনায় ছিল নিত্য যে বেদ-বতী
তোমার লেখনী ধরিয়াছিলেন যে মহা সরস্বতী,
তোমার ধ্যানের আসনে ছিলেন যে শিব-সুন্দর,
তোমার হৃদয়-কুঞ্জে খেলিত সে মদন-মনোহর,
যেই আনন্দময়ী তব সাথে নিত্য কহিত কথা,
তাঁদের কেহ বুঝিল না এই বঞ্ছিতদের ব্যথা?
কেমন করিয়া দিয়া কেড়ে নিল তাঁদের কৃপার দান,
তুমি যে ছিলে এ ভারতের আশা প্রদীপ-অনির্বাণ।

 

তোমার গরবে গরব করেছি, ধরারের ভেবেছি সরা;
ভুলিয়া গিয়াছি ক্লৈব্য দীনতা উপবাস-ক্ষুধা-জরা।
মাথার উপরে নিত্য জ্বলিতে তুমি সূর্যের মত,
তোমারি গরবে ভাবিতে পারিনি আমরা ভাগ্যহত।

বল- দর্পীর মাথার উপরে চরণ রাখিয়া আর
রক্ষা করিবে কে এই দুর্বলের অহংকার?
হের, অরণ্য-কুন্তল এলাইয়া বাংলা যে কাঁদে,
কৃষ্ণা-তিথির অঞ্চলে মুখ লুকায়েছে আজ চাঁদে।
তোমারে হেরিয়া মিটেছিল ঋষি-কবি দেখিবার আশ
তুমি এসেছিলে একসাথে ব্যাস-বাল্মীকি-কালিদাস।

ভারত- ভাগ্য জ্বলিছে শ্মশানে, তব দেহ নয়, হায়।
আজ বাংলার লক্ষ্মীশ্রীর সিঁদুর মুছিয়া যায়।
কত যুগ পরে মৃত্যুর যেন যন্ত্রণা হলো ক্ষয়
পবিত্র হলো পরশিয়া তব দেহ অমৃতময়।

 

যেই রস-লোক হতে এসেছিলে খেলিতে এ পৃথিবিতে,
সেথা গিয়া তুমি মোদেরে স্মরিয়া কাঁদিবে না কি নিভৃতে?
আশ্বাস দাও, হে পরম-প্রিয় কবি, আমাদের প্রাণে,
ফিরিয়া আসিবে নব-রূপ লয়ে আবার মোদের টানে।

বাঙালি ছাড়া কি হারালো বাঙালি কেহ বুঝিবে না আর,
বাংলা ছাড়া এ পৃথিবীতে এত উঠিবে না হাহাকার।
ভু-ভারত জুড়ে হিংসা করেছে এই বাংলার তরে-
আকাশের রবি কেমনে আসিল বাংলার কুঁড়েঘরে।

এত বড়, এত মহৎ বিশ্ববিজয়ী মহা-মানব
দীন-হীন বাংলা আঙ্গিনায় এত পরমোৎসব
স্বপ্নেও আর পাইব কি মোরা? তাই কাঁদি অসহায়
বাংলার নরনারী, কবি-গুরু, শান্তনা নাহি পায়।

আমরা তোমারে ভেবেছি শ্রীভগবানের আশীর্বাদ,
সে আশিস যেন ক্ষয় নাহি করে মৃত্যর অবসাদ।
বিদায়ের বেলা চুম্বন লয়ে যাও তব শ্রীচরণে,
যে লোকেই থাক হতভাগ্য এ জাতিরে রাখিও মনে।

 

 

Comments :0

Login to leave a comment