ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) দ্বারা প্রকাশিত স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রতিক সংশোধনগুলির মধ্যে বাবরি মসজিদ ধ্বংস, ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় মুসলমানদের হত্যা এবং হিন্দুত্বের প্রসঙ্গ বাদ দেওয়া হয়েছে এবং মণিপুরের ভারতে অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গটি পরিবর্তন করা হয়েছে।
৩৭০ ধারা বাতিল, ‘আজাদ পাকিস্তান’ শব্দটির পরিবর্তে পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর এবং বামপন্থীদের নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে একটি অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়েছে।
এনসিইআরটি বলেছে যে এই পরিবর্তনগুলি একটি রুটিন আপডেটের অংশ। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এনসিইআরটি-র পাঠ্যক্রমের খসড়া কমিটি যে পরিবর্তনগুলি প্রস্তুত করেছে তার বিশদ বিবরণ দিয়ে একটি নথি অনুসারে, রাম জন্মভূমি আন্দোলনের উল্লেখটি ‘‘রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলী অনুসারে’’ পরিবর্তন করা হয়েছে।
এর আগে একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কিত অষ্টম অধ্যায়ে বলা হয়েছিল, ‘‘২০০২ সালে গুজরাটে গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার সময় এক হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান’’।
সেটাকে বদলে দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘২০০২ সালে গুজরাটে গোধরা পরবর্তী দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন’’। এই পরিবর্তনের পেছনে এনসিইআরটি-র যুক্তি হল, ‘‘যে কোনও দাঙ্গায় সব সম্প্রদায়ের মানুষের ক্ষতি হয়। এটা কোনো একটি সম্প্রদায় হতে পারে না’’।
দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকের (স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে রাজনীতি) সপ্তম অধ্যায়ে কাউন্সিল একটি অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার কথা উল্লেখ করেছে, যা পূর্বতন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল।
আগের অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, ‘‘বেশিরভাগ রাজ্যের সমান ক্ষমতা থাকলেও জম্মু ও কাশ্মীরের মতো কয়েকটি রাজ্য এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জন্য বিশেষ সংস্থান রয়েছে’’। সংশোধিত সংস্করণে অনুচ্ছেদে একটি লাইন যুক্ত করে বলা হয়েছে, ‘‘তবে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য বিশেষ বিধান সম্বলিত ৩৭০ ধারা ২০১৯ সালের আগস্টে বাতিল করা হয়েছিল’’।
পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে আগের পাঠ্যপুস্তকে বলা হয়েছিল, ‘‘ভারত দাবি করে যে এই এলাকা বেআইনি দখলে রয়েছে। পাকিস্তান এই অঞ্চলটিকে আজাদ পাকিস্তান হিসাবে বর্ণনা করে’’। পরিবর্তিত সংস্করণে বলা হয়েছে, ‘‘তবে এটি ভারতীয় অঞ্চল যা পাকিস্তানের অবৈধ দখলে রয়েছে এবং পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর নামে পরিচিত’’।
এই পরিবর্তনের পিছনে এনসিইআরটি-র যুক্তি হ'ল ‘‘যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তা জম্মু ও কাশ্মীর সম্পর্কে ভারত সরকারের সর্বশেষ অবস্থানের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ’’।
মণিপুর সম্পর্কে আগের পাঠ্যপুস্তকে বলা হয়েছে, ‘‘ভারত সরকার ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বরে মণিপুরের নির্বাচিত বিধানসভার সাথে পরামর্শ না করেই মহারাজাকে একটি সংযুক্তি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দিতে সফল হয়েছিল। এর ফলে মণিপুরে প্রচুর ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, যার প্রতিক্রিয়া এখনও অনুভূত হচ্ছে’’।
পরিবর্তিত সংস্করণে বলা হয়েছে, ‘‘ভারত সরকার ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বরে একটি সংযুক্তি চুক্তি স্বাক্ষরে মহারাজাকে রাজি করাতে সফল হয়েছিল’’।
অষ্টম অধ্যায়ে (ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলী) ‘‘অযোধ্যা ধ্বংস’’এর উল্লেখ বাদ দেওয়া হয়েছে। ‘‘রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রকৃতির নিরিখে রাম জন্মভূমি আন্দোলন এবং অযোধ্যা ধ্বংসের উত্তরাধিকার কী?’’ পরিবর্তন করে ‘‘রাম জন্মভূমি আন্দোলনের উত্তরাধিকার কী?’’ করা হয়েছে।
একই অধ্যায়ে বাবরি মসজিদ ও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রসঙ্গও বাদ দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম অধ্যায়ে (গণতান্ত্রিক অধিকার) গুজরাট দাঙ্গার একটি উল্লেখ একটি নিউজ কোলাজের ক্যাপশন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আগের সংস্করণে লেখা ছিল, ‘‘আপনি কি এই পৃষ্ঠার নিউজ কোলাজে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) উল্লেখ লক্ষ্য করেছেন? এই উল্লেখগুলি মানবাধিকার সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা এবং মানব মর্যাদার জন্য সংগ্রামকে প্রতিফলিত করে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা, যেমন গুজরাট দাঙ্গা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জনসাধারণের নজরে আনা হয়েছে’’।
এটি পরিবর্তন করে বলা হয়েছে ‘‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা সারা ভারত থেকে জনসাধারণের নজরে আনা হচ্ছে’’।
পাঠ্যপুস্তকের তৃতীয় অধ্যায়ে কাউন্সিল বামপন্থার সংজ্ঞা সংশোধন করেছে। আগের সংস্করণে বলা হয় যে ‘‘বামপন্থী বলতে প্রায়শই তাঁদেরই বোঝায় যারা দরিদ্র, নিপীড়িত অংশের পক্ষে এবং এদের সুবিধার জন্য সরকারী নীতিগুলিকে সমর্থন করে’’।
সংশোধিত সংস্করণে বলা হয়েছে, ‘‘বামপন্থী বলতে প্রায়শই তাদেরকেই বোঝায় যারা অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের পক্ষে এবং অবাধ প্রতিযোগিতার পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেয়’’।
এনসিইআরটি গত সপ্তাহে সিবিএসই স্কুলগুলিকে জানিয়েছিল যে তৃতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য নতুন পাঠ্যপুস্তক তৈরি করা হয়েছে এবং এনসিএফ অনুসারে অন্যান্য শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে, নতুন অধিবেশন ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেলেও যে বইগুলি এখনও বাজারে আসেনি সেগুলিতে ধারাবাহিক পরিবর্তনগুলি চালু করা হবে।
Comments :0