এতদিন এটাই সর্বজ্ঞাত ছিল যে প্রধানত নরেন্দ্র মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাটের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরাই দেশের ব্যাঙ্ক থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেত। ব্যাঙ্কে গচ্ছিত সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ লুট করে বিদেশে বিলাসবহুল রাজকীয় জীবন কাটানো এইসব শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের সকলেই টাকা লুটের আগে হয় মোদী-শাহ ঘনিষ্ট ছিল অথবা মোদী ভক্ত হিসাবে পরিচিত ছিলেন। গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদী নিজের হাতে যে ‘গুজরাট মডেলের’ নির্মাণ করেছিলেন সেই মডেলের একদিকে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসাবে জ্বল জ্বল করছে দু’দশক আগের ভয়াবহ গুজরাট দাঙ্গার সময় নির্বিচারে সংখ্যালঘু গণহত্যা অভিযান, অন্যদিকে রয়েছে গুজরাটের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্কের টাকা লুটেপুটে নিয়ে বিদেশে পালানো। লজ্জার বিষয় এই অসৎ লুটেরা ব্যবসায়ীদের টাকা লুটে এবং সেগুলি নিয়ে বিদেশে পালাতে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে বিজেপি’র নেতা-মন্ত্রীরাই। এক সময় খোদ প্রধানমন্ত্রী গলার শিরা ফুলিয়ে বলেছিলেন বেআইনি পথে বিদেশে পাচার হওয়া সব টাকা তিনি দেশে ফিরিয়ে আনবেন। বাস্তবে দশ বছর প্রধানমন্ত্রীর আসন দখল করে থাকলেও এক কানাকড়িও দেশে ফেরাতে পারেননি। যে বিপুল টাকা চোর-জোচ্চোর ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিয়েছে তা নিয়ে বিদেশে দিব্যি বিলাসী জীবন কাটাচ্ছে সপরিবারে। কেউ বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়েছে। আবার কেউ সেই জালিয়াতির টাকা বিদেশে লগ্নি করে মোটা মুনাফা কামাচ্ছে। নিজেকে বিশ্বগুরু বলে জাহির করা মোদী নাকি দারুণ প্রভাবশালী, মোদীকে নাকি বিভিন্ন সমীহ করে। অথচ পালিয়ে যাওয়া লুটেরা ব্যবসায়ীদের একজনকেও তিনি দেশে ফেরাতে পারেনি বা তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারেননি। মোদী সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে কোনও দেশই ভারতের লুটেরা ব্যবসায়ীদের ভারতের হাতে তুলে দেয়নি। তাহলে কি ধরে নিতে হবে লুটেরা ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দেওয়া দেশগুলি মোদীর ভারতকে পাত্তাই দেয় না! নাকি ঘনিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিড়ম্বনা না বাড়িয়ে তাদের বহাল তবিয়তে বিদেশে রাজকীয় বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে মোদী-শাহরা নিজেরাই।
এখন আবার জানা যাচ্ছে মোদীর বানানো ‘গুজরাট মডেলে’ শুধু গুজরাটি শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদেরই আস্থা নেই তা নয়, গুজরাটের সাধারণ মানুষেরও তাতে কোনও ভরসা নেই। গুজরাট মডেল মানে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে যাওয়া। শিল্পে, বিনিয়োগে, আয় বৃদ্ধিতে কর্মসংস্থানে সবার সেরা। গুজরাট মডেল নাকি এমন এক স্বপ্নকে বাস্তব করে দিচ্ছে যেখানে দারিদ্র থাকবে না, বেকারি থাকবে না, ঘরে ঘরে উচ্চ আয় ও সচ্ছলতা বিরাজ করবে, শিক্ষায় কেউ পিছিয়ে থাকবে না, স্বাস্থ্যে কোনও ঘাটতি থাকবে না, মাথায় ছাদহীন থাকবে না কেউ। প্রধানমন্ত্রী হয়ে মোদী সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন এবার গোটা দেশেই প্রয়োগ হবে গুজরাট মডেল। আরও জোর গলায় বলেছিলেন লেখা পড়ার জন্য, কাজের জন্য, রোজগারের জন্য আর ভারতীয়রা মার্কিন ভিসার জন্য লাইন দেবে না। বদলে তারজন্য আমেরিকানরাই লাইন দেবে ভারতের ভিসার জন্য। মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের দশ বছর অতিক্রান্ত। এখন দেখা যাচ্ছে প্রতি ঘণ্টায় বেআইনিভাবে আমেরিকায় অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে ১০ জন ভারতীয় ধরা পড়ছে। আর মোদীর পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক হলেও এই ১০ জনের মধ্যে ৫ জনই মোদীর নিজের রাজ্যের বাসিন্দা। প্রসঙ্গত, ধরা পড়ছে ১০ জন, কিন্তু ধরা না পড়াদের সংখ্যা বহুগুণ বেশি। তাহলে গুজরাটে মোদীরা এমন উন্নয়ন করছেন যে কাজ না পেয়ে, ন্যায্য মজুরি না পেয়ে দলে দলে গুজরাটিরা আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন।
Original Gujarat model
আসল গুজরাট মডেল
×
Comments :0