PMAY Money

আবাসের টাকা পাওয়াই সংশয়ের

রাজ্য

সাড়ে চারশো পাতার নথি পাঠিয়ে আবাস যোজনার চলতি দুর্নীতি নিয়ে ফের রাজ্যের ব্যাখ্যা তলব করল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। বিপুল এই নথির বহর দেখে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দ টাকাও রাজ্যে আসার সম্ভবনা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে। 
চলতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে রাজ্যের কাছে আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে ফের এসেছে চিঠি। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে পাঠানো সেই চিঠির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে চারশো পাতার নথি। রাজ্যের দায়িত্ব এখন কেন্দ্রের তরফে পাঠানো এই নথি দেখে জবাব দেওয়া। কেন্দ্রের কাছে পাঠানো সেই জবাব ফের যাচাই করবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। তারপর প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা খাতে কেন্দ্রীয় খাতের ৮হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়া হতে পারে বলে মনে করছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর। পরিস্থিতি দেখে নবান্নের এক শীর্ষ আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘ বিপুল নথি দেখে তারপর জবাব দেওয়ার পর কবে টাকা আসবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।’’
জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রথম কিস্তির টাকা ঢুকে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু দ্বিতীয় সপ্তাহ পার হয়ে যাওয়ার পরও এখনও রাজ্যের কোনও জেলাতেই উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো সম্ভব হয়নি। এমনিতেই আবাস যোজনার উপভোক্তা বাছাই পর্বে গরিব মানুষের বাদ পড়া নিয়ে এখনও মানুষের ক্ষোভ টের পাচ্ছে শাসক দল। এরপর যদি টাকাই না আসে? রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘ সমীক্ষা পর্ব দিয়ে শুরু হয়েছিল। তারপর পুলিশকে দিয়ে তদন্ত করানো হয়েছিল। এরপর গ্রামের মানুষ হয়তো আর এক সপ্তাহ অপেক্ষা করবে না। তার মধ্যে টাকা না ঢুকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে বাধ্য।’’ 
কেন্দ্র ও রাজ্য- দুই সরকারের টানাপড়েনে আসলে মাথার ছাদ থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন লক্ষ গরিব মানুষ। ২০২১ সালে কোভিড পরিস্থিতিতে এরাজ্যে আবাস যোজনার কাজ হয়নি। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ করে রাখে আবাস যোজনার বরাদ্দ টাকা। বছরের শেষ পর্বে টাকা বরাদ্দ করলেও সেই টাকা এখন অনিশ্চিত। 
নবান্ন সূত্রের খবর, কেন্দ্র থেকে অভিযোগ আকারে যে নথি পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার পাশাপাশি ১০০দিনের কাজের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে কেন্দ্রের নয়া ফরমানে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সঙ্গে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা ও কাজ কবে হবে তা নিয়েও তীব্র অনিশ্চয়তা দেখা দিল। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা খাতে কেন্দ্রীয় সরকার গত নভেম্বর মাসে ৫৮৪কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা খাতে চলতি আর্থিক বছরে সাড়ে ১১লক্ষ বাড়ি তৈরির জন্য ৮ হাজার ২০০কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। টাকা বরাদ্দ করলেও সেই টাকা এখনও পর্যন্ত রাজ্যের কাছে আসেনি। আদৌ টাকা কবে আসবে তা নিয়েই সাড়ে চারশো পাতার নথি হাতে আসার পর তৈরি হয়েছে তীব্র ধন্দ।
সাড়ে চারশো পাতার নথি পাঠিয়ে রাজ্যের কাছে কেন্দ্র জানতে চেয়েছে, বিগত সময়ে আবাস যোজনার দুর্নীতিতে চুরি যাওয়া টাকার উদ্ধার নিয়ে। ঘটনা হলো, ২০১৭ থেকে ২০২০সাল পর্যন্ত এরাজ্যে আবাস যোজনার বাড়ি তৈরি নিয়ে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৯সালের লোকসভা নির্বাচনের পর আবাস যোজনার কাটমানির টাকা শাসক দলের নেতাদের আদায় করা নিয়ে গ্রামীণ এলাকায় তোলপাড় হয়েছিল। নয়া নথিতে সেই দুর্নীতির হিসাব চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চলতি আবাস যোজনায় উপভোক্তা বাছাই নিয়ে রাজ্যজুড়ে গোলমালের ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজ্যে ঘুরে গেছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের আধিকারিকদের দু’টি টিম। আবার রাজ্যে আসছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে গ্রামোন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত ৫টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তার মধ্যেই উপভোক্তা বাছাইয়ের অগ্রাধিকার তালিকা নিয়ে রাজ্যের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্র।
রাজ্যের তরফে এতদিন দাবি করা হচ্ছিল, কেন্দ্রের সব ধরনের শর্ত মেনেই আবাস যোজনা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এমনকি তালিকা বাছাই করে ১১লক্ষ বাড়ির অনুমোদনও করে দিয়ে বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির টাকার প্রতীক্ষায় বসে আছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর। কিন্তু জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পার হয়ে যাওয়ার পরও এখনও পর্যন্ত একজন উপভোক্তারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির ৬০হাজার টাকা ঢোকানো যায়নি। 
আইনে আছে প্রথম কিস্তির টাকা উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাওয়ার ৯০দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে বাড়ির নির্মাণ। আবার একইসঙ্গে চলতি আর্থিক বছর অর্থাৎ ৩১ মার্চের মধ্যে টাকা খরচ করতে না পারলে অনুমোদিত সাড়ে ১১লক্ষ বাড়ির নির্মাণ কাজই থমকে যাবে। ফলে আবার নতুন করে আগামী অর্থবর্ষের জন্য আবাস যোজনার অনুমোদন নিতে হবে। 
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তীরে এসে তরি ডোবার এই অনিশ্চয়তায় রাজ্যে প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা রাজনৈতিক বৈরিতা প্রসঙ্গ তুলছেন। একাংশ আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘ রাজ্যের তরফে সব প্রস্তুতি নেওয়ার পরও নয়াদিল্লিতে এরাজ্য থেকে নির্বাচিত বিজেপি সাংসদদের একটি দল আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ করার পরই কেন্দ্রের তরফে নতুন করে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।’’ কিন্তু আকন্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা রাজ্য সরকারও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গলা উঁচু করে কথা বলতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত মাথার ছাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষ।  
 

Comments :0

Login to leave a comment