গণনা চলাকালীন গণনাকেন্দ্রের ভিতরের সিসিটিভি ও ভিডিওগ্রাফি ফুটেজকে জেলা শাসকদের হেপাজতে রাখার নির্দেশ দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
ভোটপর্বে বুথের ভিতর সিসিটিভি দিয়ে মুড়ে দেওয়ার পরেও লুট হয়েছে ভোট। গত ৩জুন কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে হলফনামা দিয়ে জানানো হয়েছিল, ৬১ হাজার ৬৩৬টি বুথের মধ্যে ৫৮ হাজার বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। ৯৮ শতাংশ বুথে ক্যামেরা লাগিয়ে বাকি ২শতাংশ কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার ফল কী হয়েছে ভোটের দিন টের পেয়েছেন রাজ্যবাসী। সিসিটিভি’র তোয়াক্কা না করে দেদার ভোট লুট করেছে তৃণমূল বাহিনী। প্রতিরোধ যা করার মানুষ রাস্তায় নেমে করে নিজের অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। এখন গণনার একদিন আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সেই একইভাবে জেলা পঞ্চায়েত নির্বাচন আধিকারিক অর্থাৎ জেলা শাসকদের কাছে রাজ্যের ৩৩৯টি গণনাকেন্দ্রের গননার গোটা প্রক্রিয়াকে ক্যামেরাবন্দি করে নিজেদের ‘সেফ কাস্টডি’তে রাখার নির্দেশ দিচ্ছে। এমনকি স্বচ্ছতার জন্য গণনার প্রতিটি পর্বের বন্দোবস্তকে নির্বাচনের ভোটপ্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলির কাছে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিডিওদের।
গণনা শুরুর আগেই এদিন রাজ্যজুড়ে একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। তা হলো, ব্যালট পেপারে প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর ও স্ট্যাম্প না থাকলেও এবারে তা বৈধ ব্যালট হিসাবে গণ্য করা হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখে হস্তক্ষেপের দাবি করা হয়। তার ভিত্তিতেই এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার লিখিতভাবে জেলা শাসকদের কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানিয়ে দেন, প্রিসাইডিং অফিসারের ব্যালটে স্বাক্ষর ও স্ট্যাম্প না থাকলে সেই ব্যালটকে কোনোভাবেই গণনার সময় বৈধ হিসাবে ধরা হবে না।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুথের মতোই গণনাকেন্দ্রকে লুটের হাত থেকে রক্ষা করতে নির্বাচন কমিশন কতটা তৎপর তা দেখার জন্য মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এদিন শেষ বেলায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে রাজ্যের সব জেলা শাসকদের কাছে লিখিত নির্দেশিকাতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, গণনাকেন্দ্রের মধ্যে শুরুতেই অবৈধ ব্যক্তিদের উপস্থিতি থাকলে তাদের সরিয়ে দিয়ে গণনা শুরু করতে হবে। গণনাকেন্দ্রে থাকবেন সরকারি স্তরে কাউন্টিং অফিসার ও কাউন্টিং সহায়ক (অ্যাসিস্ট্যান্ট)। তার বাইরে কমিশনের নির্দেশিত ব্যক্তি কাউন্টিং হলে থাকতে পারবেন। প্রার্থী, তাঁর কাউন্টিং এজেন্ট ও নির্বাচনী এজেন্ট কাউন্টিং হলে থাকতে পারবেন।
গণনাকেন্দ্রের মধ্যে কোনোভাবেই পুলিশকর্মী ঢুকতে পারবে না বলে এদিন গাইডলাইন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। গণনাকেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা সহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ। তবে গণনাকেন্দ্রের মধ্যে কোনও সমস্যা দেখা দিলে রিটার্নিং অফিসার প্রয়োজন মনে করলে পুলিশ ডাকতে পারেন। এদিন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকাতে সংবাদ মাধ্যম বিশেষত বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের গণনাকেন্দ্রে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট গণনা। ৩৩৯টি কেন্দ্রে ভোট গণনা শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে। প্রথমে ইডি ব্যালট গোনা হবে। তারপর গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং সবশেষে জেলা পরিষদের গণনা হবে। সবচেয়ে বেশি গণনা কেন্দ্র রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। ২৮টি জায়গায় গণনা হবে এই জেলায়। প্রতিটি গণনা কেন্দ্রেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা থাকবে বলে সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। একই সঙ্গে রাজ্য পুলিশও থাকবে গণনা কেন্দ্রে।
২২টি জেলার মধ্যে ২০ জেলায় পঞ্চায়েতে ত্রিস্তরে গণনা হবে। দার্জিলিঙ এবং কালিম্পঙে দ্বিস্তরে ভোট হয়েছে। পাহাড়ের এই দুটি জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। এই দুটি জায়গায় জেলা পরিষদের বদলে প্রশাসন সামলায় গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)। ২০১৮ সালে জেলা পরিষদে মোট আসন ছিল ৮২৫টি। তার মধ্যে ভোটের আগেই ২০৩টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে তৃণমূল। ভোটের আগেই বীরভূম, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদের জেলা পরিষদ দখল নেয় শাসক দল। এবার জেলা পরিষদে মোট আসন ৯২৮টি। তারমধ্যে ১৮টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে নিয়েছে শাসক দল। এবার ভোট গণনা ১২ তারিখ পর্যন্তও চলতে পারে বলে জানা গেছে, কমিশন সূত্রে। প্রতিটি গণনা কেন্দ্রের চারপাশে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। জেলাভিত্তিক ফলাফল ঘোষণা করা হবে। ব্লকের পোলিং স্টেশন অনুযায়ী গণনার টেবিল ঠিক করা হবে। প্রত্যেক টেবিলে একজন কাউন্টিং অফিসার, একজন করে অ্যাসিসট্যান্ট কাউন্টিং অফিসার এবং কাউন্টিং এজেন্ট থাকবেন। প্রতিটি জেলায় একজন করে স্পেশাল অবজার্ভার এবং প্রতি গণনা কেন্দ্র পিছু একজন অবজার্ভার দেওয়া হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত এবং জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে প্রার্থী বা কাউন্টিং এজেন্ট থাকতে পারবেন। পঞ্চায়েত সমিতিতে শুধু প্রার্থী থাকতে পারবেন, এজেন্ট থাকতে পারবেন না। এজেন্টরা কোনও ফোন রাখতে পারবেন না। উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ফোন রাখতে পারবেন।
Comments :0