ভোটের ময়দানে তৃণমূল পিছিয়ে গেছে, তাই সিপিআই(এম) প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের সমর্থনে জনস্রোত ঠেকাতে পুলিশকে নামতে হলো মুর্শিদাবাদে। বৃহস্পতিবার ডোমকলে মহম্মদ সেলিমের প্রচার ঠেকাতে তাঁর রাস্তা আটকে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন এবং হুমকি দিয়েছেন ডোমকল থানার আইসি পার্থ সারথি মজুমদার। থানার আরেক এএসআই’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি সিপিআই(এম) কর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি দিয়েছেন। মহম্মদ সেলিম এদিনই নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন পুলিশের এই ভূমিকার বিরুদ্ধে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের হাতেও তাঁর অভিযোগ এদিন তুলে দিয়েছেন সিপিআই(এম)’র প্রতিনিধিদল।
ডোমকলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে সিপিআই(এম)’র সমর্থনে। এদিন ডোমকলে নির্বাচনী প্রচারে তার লক্ষ্মণও স্পষ্ট হয়ে গেছে। মহম্মদ সেলিম ডোমকলে যেতেই তাঁকে ঘিরে বাড়তে থাকে জনস্রোত, ক্রমশ জুড়তে থাকেন গ্রামের মানুষ। স্থানীয় মানুষের অনুরোধে মোটর সাইকেলে উঠে এগতে হয় সেলিমকে। বাঁধভাঙা এই উচ্ছাস দেখে আতঙ্কিত তৃণমূল পুলিশকে মাঠে নামতে বলে। ডোমকলের সারাংপুরে মহম্মদ সেলিম যে মোটরবাইকে ছিলেন সেই বাইকের সামনে এসে দাঁড়ান আইসি পার্থ সারথি মজুমদার। তিনি সেলিমের পথ আটকে প্রচার বন্ধ করতে বলেন। সেলিমের প্রচারে নাকি আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। আইনমাফিক প্রচারের দাবি করে সেলিম সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বক্তব্য উড়িয়ে দেন। এবার চলে পুলিশের হম্বিতম্বি, পেশাদারি ভূমিকা ছেড়ে পুলিশ ইনস্পেক্টরকে গলাবাজি করতেও দেখা যায়। বাধা দেওয়া হয় সেলিমের প্রচারে।
অন্যদিকে সিপিআই(এম) কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, ডোমকল থানার এএসআই মর্জেম হোসেন নিজেই সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেসের কর্মীদের বাড়িবাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছে সিপিআই(এম)। এদিনের ঘটনার পর ডোমকল থানার আইসি এবং এএসআই’র বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা করেছেন মহম্মদ সেলিম। অভিযোগে ওই পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে। সেলিম অভিযোগে বলেছেন, সারাংপুরের ঘটনার অবিলম্বে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে ভোটারদের কাছে প্রচার আমার আইনসম্মত ও গণতান্ত্রিক অধিকার, তা খর্ব করা হয়েছে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি না ঠেকিয়ে পুলিশ সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস কর্মীদের নির্বাচনী প্রচার ঠেকাতে হুমকি দিচ্ছে।
সিপিআই(এম)’র ডোমকল এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ডোমকলে সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেসের সমাবেশে তৃণমূল আতঙ্কিত। ওঁদের সাংসদ দিল্লিতে গিয়ে এলাকার মানুষের কথা বলেননি। এলাকায় উন্নয়নের কাজ করেননি। প্রচারেও কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তৃণমূলকে। তাই পুলিশকে ব্যবহার করছে আমাদের প্রচার ঠেকাতে।
সিপিআই(এম)’র অভিযোগ, মুর্শিদাবাদের বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ নীরব থেকেছেন সংসদে, পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চের দেওয়া তথ্য অনুসারে সংসদে তাঁর উপস্থিতি ছিল ৬৪ শতাংশ, যেখানে জাতীয় গড় ৭৯ শতাংশ। মাত্র ৬টি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন তিনি যেখানে অন্য সাংসদরা গড়ে ৪৬টি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। গড়ে সাংসদরা ২১০টি প্রশ্ন সংসদে করেছেন। সেখানে তিনি প্রশ্ন করেছেন মাত্র ৪টি। মুর্শিদাবাদের মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন তিনি। সেই কারণেই ডোমকলে পুলিশ দিয়ে সিপিআই(এম)’র প্রতি জনসমর্থন ঠেকানোর চেষ্টা হচ্ছে।
তবে ডোমকলের পুলিশের এই কাণ্ডের জবাব দিয়েছে হরিহরপাড়া। দুপুর ১ টায় আটকানো হয় ডোমকলের প্রচার। আর তার তিন ঘণ্টার মাথায় বিকেল ৪টেয় হরিহরপাড়ার কুমড়োদহ ঘাটে এসে দাঁড়িয়েছে কয়েকশো মোটরসাইকেল। মহম্মদ সেলিম সেখানে এসে পৌঁছতেই স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে যায় এলাকা। তাঁকে নিয়ে রাস্তায় এগিয়েছে রোড শো। মহম্মদ সেলিমকে অভিবাদন জানাতে রাস্তার দুই পাশে জড়ো হয়েছেন গ্রামের মানুষ। বাইক নিয়ে এসেছেন টেট পাশ করেও চাকরি না পাওয়া সাইফুল ইসলাম থেকে সবজি বিক্রেতা প্রণবেশ মণ্ডল। একসঙ্গে আওয়াজ তুলেছেন, চোর তাড়িয়ে মহম্মদ সেলিমকে সংসদে পাঠাতে হবে।
শুধু ডোমকল নয়। শেষ লপ্তে তৃণমূল বিপদে বুঝে বহু এলাকাতেই পথে নামিয়েছে পুলিশকে। তেমনই মুর্শিদাবাদের পদ্মার তীরবর্তী রানিতলা থানা। রানিতলা থানার ওসি রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে থানায় ডেকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁর বিরুদ্ধেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে সিপিআই(এম)।
তবে পুলিশের চাপের পরোয়া করছেন না রানিতলার সিপিআই(এম) কর্মীরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট লুট রুখেই আখেরিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়েছে সিপিআই(এম)। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাহিন শেখের কথায়, পুলিশ যদি এবারও ভোট লুট করতে আসে, আমরা চুপ করে থাকব না। গ্রামের মানুষ শিখে গিয়েছেন কীভাবে ভোট লুট আটকাতে হয়।
চুপ ছিল না এদিন হরিহরপাড়ার মিছিলও। কুমড়োদহ ঘাট থেকে শুরু হয় সোচ্চার রোড শো। খিদিরপুর, বারুইপাড়া, ডল্টনপুর, হরিহরপাড়া বাজার, চোঁয়া হয় মামুদপুরে শেষ হয় প্রচার। রাস্তা যতো এগিয়েছে প্রচারে বেড়েছে বাইকের সংখ্যাও। মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা, পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য শেখ হাসিনা, পার্টি নেতা ইনসার আলি বিশ্বাস, আব্দুর রাজ্জাক। ছিলেন কংগ্রেস নেতা মোশারফ হোসেন, সফিকুল শেখ, বিজয় শেখ।
গ্রামে সিপিআই(এম)’র প্রচারে নড়েচড়ে বসছে তৃণমূলও। আতঙ্কিত তৃণমূল অভিযোগ করেছে, হরিহরপাড়ায় দিনের বেলায় তৃণমূলের নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। সিপিআই(এম) নেতা ইনসার আলি বিশ্বাস সাফ জানিয়েছেন, তৃণমূল ভয় পেয়ে মামলা সাজানোর জন্য এসব করছে। আর মামলা, হামলায় ভয় পাওয়ায় মানুষ নেই, এদিন সেলিমের প্রচার মিছিলেই তা বোঝা গিয়েছে।
................................................
Salim Police Domkal
তৃণমূলের হয়ে আসরে পুলিশ, সেলিমকে বাধা, অভব্যতা
×
Comments :0