Rahul Gandhi

বেরোজগারি, মূল্যবৃদ্ধির কথায় কান দেন না মোদী: রাহুল

জাতীয় লোকসভা ২০২৪

‘‘কৃষকরা ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের জন্য আর্তি জানাচ্ছেন, যুব সম্প্রদায় চাকরি চাইছে আর মহিলারা মুদ্রাস্ফীতির হাত থেকে রেহাই চাইছেন। কিন্তু শোনার জন্য কেউই নেই।’’ বৃহস্পতিবার রাজস্থানের বিকানীরে এভাবেই মোদী সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে তোপ দাগলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘দেশের সামনে এখন বড় সমস্যা হলো বেরোজগারি এবং মুদ্রাস্ফীতিই। অথচ তাতে হুঁশ নেই মোদীর।’ এরই সঙ্গে কর্মসংস্থান, এমএসপি, মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধে যে ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে কংগ্রেস ইশ্‌তেহারে, সেকথাও তুলে ধরেন এদিন রাহুল গান্ধী।
দেশের সংবিধান এবং গণতন্ত্র রক্ষার ডাক দিয়ে বিকানীরের অনুপনগরের সভায় রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘‘এই ভোট হলো সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ, দলিত, আদিবাসী এবং অসংরক্ষিত সম্প্রদায়ের গরিব মানুষের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার।’’ তিনি বলেন, ‘‘দেশের যে কোনও সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন আপনার কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? তিনি বলবেন, প্রথমে বেকারত্ব, তার পরেই বলবেন মুদ্রাস্ফীতি।’’ দেশের প্রথম সারির দৈনিক সংবাদমাধ্যমগুলি এই সব জ্বলন্ত সমস্যার কথা তুলে ধরার প্রয়োজনবোধ করে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে বললেও ওই সব সংবাদমাধ্যম ব্যস্ত থাকে আম্বানির পুত্রের বিয়ে দেখাতে বা তা নিয়ে লিখতেই। ২৪ ঘণ্টা ধরে টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে মোদীর মুখ। কখনও তাঁকে দেখানো হচ্ছে সমুদ্রের নিচে কখনও বা তাঁকে দেখা যাচ্ছে উড়ছেন সিপ্লেনে। আবার কখনও বাজাচ্ছেন থালা, কখনও মোবাইলে ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে ধরছেন।’’ কংগ্রেস নেতা মনে করেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের জনগণের কণ্ঠ হিসাবে কাজ করা উচিত। অথচ তারা কখনোই জনগণের বিষয় তুলে ধরে না। ধনকুবের মালিক যাঁরা অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছেন তাঁরাই জনগণের কথা তুলে ধরতে দেন না।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘দুই থেকে তিন শতাংশ কাজ করেন সংবাদমাধ্যমে। ১৫-২০ মালিক নিয়ন্ত্রণ করছেন মিডিয়া। তাঁরাই সর্বক্ষণ মোদীর প্রশংসা করে চলেছেন।’’
ধনকুবের, পুঁজিপতিদের ঋণ মকুব প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, ‘‘ওই ২৫-৩০ জন পুঁজিপতির যে পরিমাণ ঋণ মকুব করা হয়েছে তা দিয়ে অনায়াসে ২৪ বছর ধরে রেগার মজুরি দেওয়া যেত। তাঁর অভিযোগ, উনি ধনকুবেরদের ঋণ মকুব করতে পারেন, কৃষকদের ছাড় দিতে পারেন না। আসলে মোদী মনে করেন কৃষকরা সবাই উগ্রপন্থী। ওইজন্যই ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেন না। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে কৃষকদের জন্য এমএসপি’র ব্যবস্থা করবে, ঋণ মকুবও করে দেবে।’’ তিনি জানান, ‘‘ক্ষমতায় এসে কংগ্রেস প্রথমেই জাতগণনার ব্যবস্থা করবে। একই সঙ্গে সরকারি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া তুলে দেবে।’’
কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সেনাবাহিনীতে কর্মী নিয়োগের অগ্নিপথ প্রকল্প বাতিল করে দেবে বলে জানিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘সেনাবাহিনী মোটেই স্বল্পমেয়াদি কর্মী নিয়োগের ওই প্রকল্প চালুর পক্ষে ছিল না। প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে জোর করে ওই প্রকল্প চালু করা হয়েছে।’’ এখানে তিনি কংগ্রেসের ইশ্‌তেহারের উল্লেখযোগ্য অংশগুলি তুলে ধরে বলেন, ‘‘কংগ্রেস যে গ্যারান্টি বা ন্যায়ের কথা বলেছে তা অক্ষরে অক্ষরে রূপায়ণ করা হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘এবার নির্বাচন হবে গরিবের সঙ্গে আমিরের। দেশের গরিব মানুষের সঙ্গে ২০-২৫ জন ধনকুবেরের।’’
যোধপুরের জনসভায় রাহুল গান্ধী নির্বাচনী বন্ডের প্রসঙ্গ টেনে অভিযোগ করেন, মোদী এবং বিজেপি ওই বন্ডের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি করেছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বন্ডের মাধ্যমে তোলাবাজি চলেছে।’’ তিনি এও বলেন, ‘‘আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম চড়েছে বিজেপি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই। সেই দর বেড়েছে চলেছে। সকলেই আদানি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর গভীর সম্পর্কের কথা জানেন।’’ কংগ্রেস নেতা বন্ড প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘‘মোদী ক্ষমতায় আসার আগে বড় মুখ করে দাবি করেছিলেন যে তিনি দু্নীতি দূর করে দেবেন। অথচ তিনিই চালু করেন নির্বাচনী বন্ড। সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ না করলে কারা কারা বন্ডের মাধ্যমে অর্থ জুগিয়েছিল বিজেপি-কে তা জানাই যেত না!’’

Comments :0

Login to leave a comment