Rahul Gandhi

রাহুলের উচ্ছেদ নোটিশও জারি হয়ে গেল এবার!

জাতীয়

সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার দু’দিনের মধ্যে রাহুল গান্ধীকে সরকারি বাসভবন ছাড়ার ফতোয়াও জারি হয়ে গেল। ২২ এপ্রিলের মধ্যে তাঁকে ১২ তুঘলক লেনের বাংলো ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে হবে। এত কিছুর পরেও রাহুল গান্ধী যদিও আদানি গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ বন্ধ করতে রাজি নন। এদিন তিনি কর্মচারী ভবিষ্যনিধি তহবিল (ইপিএফও)-র বিপুল অর্থ কেন আদানিতে খাটানো হলো নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন।
সুরাটের এক আদালত গত ২৩ তারিখ ফৌজদারি অবমাননা মামলার ভিত্তিতে রাহুল গান্ধীর দু’বছরের সাজা ঘোষণা করে। উচ্চ আদালতে কোনোরকম আবেদনের সুযোগ দেওয়ার আগেই এই রায়কে হাতিয়ার করে পরেরদিন রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার নির্দেশ জারি করেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। এমনকি তিনি ৬ বছর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না, তাও বলে দেওয়া হয়। দু’বছরের সাজা ধরলে রাহুল গান্ধী ৮ বছর লড়তে পারবেন না কোনও ভোটে। আবার তার দু’দিনের মধ্যে সোমবার তাঁকে বাসা ছাড়ার নোটিসও জারি করে ফেলা হলো। কংগ্রেস নেতাকে সবদিক থেকে অপদস্ত করার মানসিকতা থেকেই একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আসলে রাহুল গান্ধী প্রথম থেকেই আদানির শেয়ার কারচুপি নিয়ে সরব। এমনকি তাঁর সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার পরেও তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দেন, আদানি নিয়ে এর পরের প্রশ্নগুলির জবাব প্রধানমন্ত্রী দিতে পারবেন না বলেই তাঁকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হলো। তবে এতেও তাঁকে চুপ করিয়ে দেওয়া যাবে না। এমনকি আজীবন তাঁকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হলেও তিনি থেমে থাকবেন না। এর প্রমাণও এদিন ফের দিলেন রাহুল গান্ধী টুইট করে। তিনি বলেছেন, ‘‘এলআইসি’র টাকা আদানিতে, স্টেট ব্যাঙ্কের টাকা আদানিতে, ইপিএফও’র টাকা আদানিতে। ‘মোদানি’ কাণ্ড উন্মোচিত হওয়ার পরেও জনগণের অবসর প্রকল্পের টাকা আদানিতে খাটানো হচ্ছে কেন? প্রধানমন্ত্রীজী, কোনও তদন্ত নেই, কোনও জবাব নেই, এত ভয় কেন?’’
রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে বিজেপি’র নির্লজ্জ অসহিষ্ণুতাই প্রকাশ পেয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ঘৃণ্য কর্তৃত্ববাদের মানসিকতাই প্রতিফলিত হয়েছে।’’ মোদী সরকার যে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ আদানিদের জন্য বিনিয়োগ করছে, সে অভিযোগও করেন তিনি। ইয়েচুরি আরও বলেন, মোদী সরকার ফৌজদারি অবমাননার মামলা দায়ের করে নিশানা করছে বিরোধীদের নেতাদের। রাহুল গান্ধীর ক্ষেত্রে যেমন ওই মামলায় সাজা ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেড়ে নেওয়া হলো রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, রাহুল গান্ধীকে অপদস্ত করার কৌশল শুরু হয়েছিল ভারত জোড় যাত্রায় সাফল্যের মধ্যেই। প্রথমে তাঁর যাত্রাভঙ্গের নানা ছলচাতুরি করা হলেও সফল হয়নি মোদী সরকার। কথামতো রাহুল গান্ধী শ্রীনগরে পৌঁছে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান রক্ষার শপথ নেন। এরপরেই রাহুলের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ফন্দিফিকিরে হেয় প্রতিপন্ন করা চেষ্টা চলতে থাকে। তিনি লন্ডনে ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেন, তার জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সংসদ নজিরবিহীনভাবে অচল করে দেন শাসক দলের মন্ত্রী-সাংসদরা। শুধু তাই নয়, আদানি প্রশ্নেও নরেন্দ্র মোদীকে টেনে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকেন কংগ্রেস নেতা। এরই মধ্যে বস্তাপচা একটি মামলাকে কর্ণাটক থেকে স্থানান্তরিত করে গুজরাটের সুরাটের নিম্ন আদালতে নিয়ে গিয়ে রাহুল গান্ধী দোষী সাব্যস্ত করা হলো। এর পরেরদিনই কেড়ে নেওয়া হলো তাঁর সাংসদ পদ। এখন বিধি মানার অজুহাতে সরকারি বাংলো ছাড়ার নির্দেশও জারি করে দেওয়া হলো। রাহুল গান্ধী যদিও ইতিমধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি সাভারকর নন যে মুচলেকা দিয়ে মোদীদের দাসত্ব মেনে নেবেন।
সরকারের এক শীর্ষস্থানীয় অফিসারের অভিমত হলো, বরখাস্ত সাংসদকে এক মাসের মধ্যে সরকারি বাংলো ছাড়া বাধ্যতামূলক। আরেক অফিসারের অভিমত, সংসদের হাউস কমিটির কাছে মেয়াদ বাড়ানোর আরজি জানাতে পারেন বরখাস্ত সাংসদ। সেই আরজি বিবেচনা করতে পারে কমিটি। তবে এতদিন রাহুল গান্ধী অবস্থান নিয়ে চলেছেন তাতে মনে করা হচ্ছে যে, তিনি কোনোমতেই মাথানত করবেন না এই প্রশ্নে।

Comments :0

Login to leave a comment