গল্প | নতুনপাতা
কুঁড়ির মিত্র ঠাম্মি
সৌরীশ মিশ্র
দোল পূর্ণিমার আগের দিনের সন্ধ্যা।
মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরছি, মেয়ে পরদিন দোল খেলবে, তার টুকটাক কিছু কেনাকাটা করে, বাড়ির কাছের বাজারটা থেকে।
বাবা-মেয়ে গল্পগাছা করতে করতে হাঁটছি। কুঁড়ি ওর বাঁহাতটা দিয়ে আমার ডানহাতটা ধরে আছে। আর, ওর ডান হাতে একটা ক্যারিব্যাগ। সেটার মধ্যে একটা পিচকারি আর কয়েকটা রঙের প্যাকেট।
আমাদের পাড়ায় ঢুকে গেছি। আর, একটু এগোলেই বাঁদিকে আমাদের বাড়ি।
হঠাৎ, মেয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। দেখি, ও দেখছে মিত্রদের ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভূতের বাড়ির মতোন দাঁড়িয়ে থাকা দোতলা বাড়িটার দিকে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে কেউ থাকে না ঐ বাড়িতে।
মিত্র জ্যেঠু - মিত্র জ্যেঠিমার বাড়ি ওটা। নিঃসন্তান ছিলেন। মিত্র জ্যেঠু মারা গেছিলেন কোভিড পিরিওড চলছিল যখন, তখন। আর, বাড়ির শেষ বাসিন্দা মিত্র জ্যেঠিমাও পাড়ি দিয়েছেন না-ফেরার দেশে গত বছরের সেপ্টেম্বর পয়লায়।
"কি রে, কি দেখছিস মিত্রদের বাড়ির দিকে?"
"কাল দোল। আর, এবারের দোলে মিত্র ঠাম্মি নেই, না বাবা!"
একটু থামে মেয়ে।
তারপর ফের বলতে থাকে, "এর আগের দোলেও ছিল। পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম করলে জড়িয়ে ধরতো। কতো আদর করতো। মিষ্টি না খাইয়ে কিছুতেই ছাড়তো না।"
মেয়ে চুপ করে যায় ফের।
স্ট্রিট-লাইটের আলো বেশ আবছা। তবুও, ঐ আলোতেও চোখে পড়ে, মেয়ের দু'চোখে টলটল করছে জল।
"মিত্র ঠাম্মির জন্য মন খারাপ করছে, মা?"
" হ্যাঁ বাবা, খুব।" বলেই মেয়ে আমার, ঝরঝর করে কেঁদে দেয়।
আমি অপ্রস্তুত। মেয়েকে নিজের কাছে টেনে নিই। দু'চোখ মুছিয়ে দিয়ে, গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে, শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকি আপ্রাণ।
কুঁড়ি আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতেই থাকে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে।
Comments :0