STORY | SOURISH MISHRA | PATISAPTA — NATUNPATA | 2025 JANUARY 19

গল্প | সৌরীশ মিশ্র — পাটিসাপটা | নতুনপাতা — ২০২৫ জানুয়ারি ১৯

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  PATISAPTA  NATUNPATA  2025 JANUARY 19

গল্প | নতুনপাতা

পাটিসাপটা

সৌরীশ মিশ্র


কিছুক্ষণ হোলো মনটা বেজায় খারাপ হয়ে আছে বাবিনের। মন খারাপ হওয়ার মতোনই যে ব্যাপার হয়েছে একটা। মন খারাপের দোষ আর কি!
আজ পৌষ মাসের সংক্রান্তি। আর পৌষ সংক্রান্তি মানেই তো মা পিঠে-পায়েস করবেই। আর, পিঠের মধ্যে বাবিনের মোস্ট ফেভারিট পাটিসাপটাও থাকবেই থাকবে। এ সব বাবিনের জানাই।
তাই, স্কুল থেকে ফিরেই মা-কে বাবিন জিজ্ঞেস করেছিল একটু আগে, "মা, আজ পাটিসাপটা করবে তো?"
বাবিনের মা তখন একটা শাড়ি ভাঁজ করে আলনাতে রাখছিলেন। ছেলের প্রশ্ন শুনে হাতের কাজ সাড়তে-সাড়তেই বললেন, "না রে, বাবিন। এবার পাটিসাপটা কেন, অন্য কোনো পিঠে বা পায়েস কিছুই করবো না রে।"
মায়ের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল পুরো বাবিন। সে কয়েকক্ষণ মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর জিজ্ঞেস করে, "কেন মা? তোমার শরীর খারাপ? তাহলে কোরো না।"
"না রে, শরীর ঠিকই আছে। কিন্তু কেন জানি ইচ্ছে করছে না।"
মা-র কথা শুনে অবাকই হোলো বাবিন। দুঃখও পেল বেশ মনে। সারাটা বছর যে ও অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটার জন্য পাটিসাপটা খাবে বলে। আর, এবছর সে খেতে পাবে না মায়ের হাতের পাটিসাপটা!
বাবিন মুখটা কালো করে ধীর পায়ে বেড়িয়ে এসেছিল ওদের শোওয়ার ঘর থেকে।


দুই

আজ সন্ধ্যেবেলা পৃথা ম্যামের কাছে পড়া ছিল বাবিনের। ওর বাবা-ই ওকে অফিস ফেরতা নিয়ে আসেন পৃথা ম্যামের বাড়ি থেকে।
যখন বাবার সাথে বাবিন বাড়িতে এলো তখন প্রায় সাড়ে আটটা।
কলিং বেল বাজালো বাবিন। বাবিনের বাবা ওদের গাড়িটা তখন ধীরে-ধীরে ব্যাক করে-করে ঢোকাচ্ছেন গ্যারেজে। বাবিন একা গেটের গ্রিল ধরে অপেক্ষা করতে থাকে মা-র। মা এসে তালা খুলে দেবেন গেটের।
কয়েকক্ষণের মধ্যেই বাবিনের মা খুব দ্রুত পায়ে এসে গেটের তালাটা খুলে দিয়েই চলে গেলেন ফের ঐরকম দ্রুতই ভিতরে।
ব্যাপারটা কি হোলো! মা ওর'ম ভাবে তাড়াতাড়ি-তাড়াতাড়ি করে এসে আবার সের'ম করেই গেল কেন ভিতরে! প্রশ্নটা ঘুরতে থাকে বাবিনের মাথায়।
তবে, ব্যাপারটা আদতে কি সেটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারল বাবিন বাড়িতে পা দেওয়া মাত্রই।
সে বাড়িতে ঢুকেই খেয়াল করল, তাদের সারা বাড়ি ম-ম করছে পায়েসের গন্ধে।
মা পায়েস করছে! পিঠের ব্যাগটা সেন্টার টেবিলে রেখেই ছুটে চলে এল সে রান্নাঘরে।
ঠিক তাই। মা পায়েস করছে একটা হাড়িতে। মায়ের হাতে একটা হাতা। সেটা দিয়ে নাড়ছে হাড়ির দুধটা মা ক্রমাগত।
"কতোটুকু সময় গেছি তালা খুলতে, তারই মধ্যে ধরে গেল!" চিন্তিত মুখে স্বগতোক্তি করেন বাবিনের মা।
বাবিনের কিন্তু মায়ের ওসব কথা কানে ঢুকল না। কারণ, সে ততক্ষণে দেখে ফেলেছে রান্নাঘরের স্ল্যাবটার উপর একটা বড় থালায় বেশ কয়েকটা পাটিসাপটা করে রেখেছে মা। পাটিসাপটাগুলো দেখে জিভে জলই চলে এল বাবিনের। সে নিজেকে কোনোমতে সামলালো। তারপর বলল, " মা, তুমি যে তখন বললে, পায়েস, পিঠে কিচ্ছু করবে না?"
ছেলের দিকে তাকালেন বাবিনের মা। তারপর বললেন, "ওরে বোকা, তোর সঙ্গে একটু মজা করছিলাম তখন। তুই এতো ভালোবাসিস পাটিসাপটা খেতে, আমি না করে পারি!"
বাবিন এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে মা-কে। বলে, "মা, তুমি কিন্তু দুষ্টু আছো খুব।"
বাবিনের মা হেসেই ফেললেন তাঁর দশ বছরের ছেলের কথা শুনে। "যা, আর দেরী করিস না। হাত মুখ ধুয়ে আয়। তারপর কটা পাটিসাপটা খা।"
বাবিনও অপেক্ষা করে না আর একটুও। এক ছুট লাগায় সে বাথরুমের দিকে।
 

Comments :0

Login to leave a comment