Salim Purulia

রাজ্যে টাকা লুট হচ্ছে, এতদিন কেন্দ্র জানত না প্রশ্ন সেলিমের

রাজ্য

ভাস্কর দাশগুপ্ত: পুরুলিয়া

রাজ্যের মানুষের উন্নয়নের টাকা লুটের বিরুদ্ধে এতদিন কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা নেয়নি কেন? মঙ্গলবার সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘এরাজ্যে শাসক দলের দুর্নীতিতে উন্নয়নের টাকা লুট হচ্ছে তা কেন্দ্রীয় সরকার এতদিন জানত না? লাল ঝান্ডা হাতে গ্রাম জাগাও- চোর তাড়াও স্লোগান ওঠার পরে মোদীজীর ঘুম ভেঙেছে।’
বিজেপি এবং তৃণমূলের নকল লড়াই বানচাল করে লুটেরাদের হাত থেকে পঞ্চায়েত উদ্ধার করে মানুষের হাতে ফেরানোর আহবানে এদিন সিপিআই(এম)’র পুরুলিয়া জেলা কমিটির ডাকে পুরুলিয়া শহরের রাস ময়দানে বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভাতেই মহম্মদ সেলিম বলেছেন, গ্রামে যাদের একশো দিনের কাজ পাওয়ার কথা তাঁদের জবকার্ড নেই। যাদের জবকার্ড আছে, তাঁদের কাজ নেই। আর যাদের কাজ আছে, তাঁদের মজুরি নেই। যে গরিবদের ঘর পাওয়ার কথা তাঁদের ঘর নেই, যাদের তিনতলা বাড়ি আছে তাঁদের নাম রয়েছে আবাস যোজনার তালিকায়। এরাজ্যে সংখ্যালঘু, আদিবাসী, তফসিলি উন্নয়নের টাকা লুট করা হয়েছে। এই চুরি দুর্নীতির খবর কেন্দ্রীয় সরকার এতদিন জানত না? তাদের অডিট ব্যবস্থার কী হলো? লাল ঝান্ডা নিয়ে যখন গ্রাম জাগাও চোর তাড়াও স্লোগান তুলেছে তখন মোদীর ঘুম ভেঙেছে। এখন নাটক করে সাজিয়ে গুছিয়ে কেন্দ্রীয় টিম পাঠানো হচ্ছে পরিদর্শনে। কিন্তু চোর কখনো চোর ধরে না, এরাও কাউকে ধরছে না। বিজেপি এবং তৃণমূলের লড়াই হচ্ছে টিভির পর্দায় ডব্লিউডব্লিউএফ’এর রেসলিং এর মতো। সে লড়াইতে যেমন কেউ চোট পায় না, তেমনি এখানেও এরা কেউ চুরি করে জেলে যায় না। শুধুমাত্র ঘর বদল হয়। একদলের চোরেরা আরেক দলের ওয়াশিং মেশিনে পরিচ্ছন্ন হয়ে দলবদল করেন। মানুষের টাকার লুট ঠেকাতে হলে, দেশ বাঁচাতে হলে একমাত্র লাল ঝান্ডাই পারে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে। 
মঙ্গলবার সকাল থেকেই পুরুলিয়া শহরের সব রাস্তা ঢাকা পড়ে গিয়েছিল লাল পতাকার মিছিলে। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, জেলার নানা জায়গা থেকে মিছিল এসে সমবেত হয় পুরুলিয়া শহরের রাস ময়দানে। সেখানে সভায় মহম্মদ সেলিম ছাড়াও ভাষণ দেন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র ও দেবলীনা হেমব্রম, রাজ্য কমিটির সদস্য সুদীপ সেনগুপ্ত। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়। এদিন রাজ্য সম্পাদকের হাতে জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের জন্য অনেক ব্যক্তি অর্থ সাহায্য তুলে দিয়েছেন।
শুধু রাজ্যের শাসক দলের লুট নয়, কেন্দ্রের শাসক দলের আরও বড় লুটের দিকে আঙুল তুলে সভায় সেলিম বলেছেন, মোদী আসার পর আদানি আম্বানিদের দাপট বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গে যেমন ২০১১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর সারদা, রোজভ্যালি, অ্যালকেমিস্ট সহ চিট ফান্ডের দাপট বেড়েছিল, তেমনই কেন্দ্রের সরকারে মোদী আসার পরে আদানি আম্বানিদের দাপট বেড়েছে, তাদের সম্পত্তি লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে, আর দেশবাসীর সম্পদ লুট হয়ে গেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান কর্মসূচি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সব পরিকাঠামো রেল, বিমা, ব্যাঙ্ক, বিমানবন্দর সবকিছু পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া। ওরা রেলের স্টেশন বেচে দিচ্ছে, এরা বাস ট্রামের ডিপো বেচে দিচ্ছে, দুই সরকারের আমলেই দেশে ও রাজ্যে লুট বেড়েছে, বেকারিও বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী দু’জনেই ক্ষমতায় এসে বেকারদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বাস্তবে চাকরিও লুট হয়েছে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যের ব্যাপম কেলেঙ্কারির মতো এরাজ্যে তৃণমূলের শিক্ষক নিয়োগের কেলেঙ্কারি হয়েছে। 
তিনি বলেন, বিজেপি আর তৃণমূলের দুই ফুল মিলে বাংলার মানুষকে এপ্রিল ফুল করেছে। কিন্তু আর পারবে না, বাংলার ভবিষ্যৎ বাংলার মানুষই ঠিক করবে। দিল্লি অথবা নাগপুর থেকে ঠিক করতে পারবে না। লাল ঝান্ডা সেই জন্যই মানুষকে লুটের বিরুদ্ধে, অধিকারের দাবিতে এককাট্টা করছে। তৃণমূল আর বিজেপি মিলে যতোই ফেক অপোজিশন দেখাক, কেবল লাল ঝান্ডাই মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করতে পারে। সেই জন্যই লাল ঝান্ডাকে নিকেশ করতে আরএসএস মমতা ব্যানার্জিকে মা দুর্গা বলেছিল। আর তাঁর হাত ধরে এরাজ্যে বিজেপি আরএসএস’এর প্রভাব বেড়েছে। লাল ঝান্ডা সরকারে থাকতে বিজেপি’র এত রমরমা কখনোই ছিল না। 
সভায় সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, ১৯৭৭ সালে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার পর বিনা বিচারে আটক সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ঘোষণা করা হয়েছিল গ্রামের ভালো-মন্দ গ্রামের লোকই ঠিক করবেন। সম্পদের বিকাশ ঘটাবেন গ্রামের মানুষ। পঞ্চায়েতে প্রাণ সঞ্চার করেছিল বামফ্রন্ট। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বিরোধীদের পরিচালিত পঞ্চায়েতও ছিল, কিন্তু কেউই চুরি করতে পারেনি। কারণ সরকার চায়নি চুরি হোক। আর এখন সরকার চাইছে তাই চুরি হচ্ছে পঞ্চায়েতে। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ব্যারিকেড গড়ে তোলার আহ্বান জানান। 
দেবলীনা হেমব্রম বলেন, সত্যিই আজ গ্রাম জেগেছে। মানুষ প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে। এক ইঞ্চি জমিও আর ছাড়া হবে না। যারা আদিবাসীদের উন্নয়নের কথা বলে সরকারে বসেছিল, তাদের আমলে জঙ্গলমহল কাঁদছে কেন? কেন আদিবাসী হোস্টেল দিনের পর দিন বন্ধ? 
সভায় সুদীপ সেনগুপ্ত বলেন, নষ্ট করার মতো এতটুকুও সময় নেই। হাতে লাল ঝান্ডা নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে, সংগঠিত করে লড়াই করতে হবে। জনসভার শুরুতে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের পলাশ শাখা এবং জনসভার শেষে আদিবাসী লোকনৃত্য পরিবেশন করেন সাঁতুড়ি থেকে আসা লোকশিল্পীরা।
 

Comments :0

Login to leave a comment