Salim on panchayat counting

গণনাকেন্দ্রে কারচুপির চেষ্টা হলেই প্রতিরোধ: সেলিম

রাজ্য পঞ্চায়েত ২০২৩

 গণনাকেন্দ্রে গ্রামের মানুষের রায়ে জালিয়াতির চেষ্টা হলে তারও প্রতিরোধ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। পঞ্চায়েতের ভোটগণনার আগের দিন সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং সরকারি প্রশাসনের মনোভাব রীতিমতো সন্দেহ তৈরি করেছে। তাদের মদতে গণনাকেন্দ্রেও জালিয়াতির চেষ্টা করতে পারে তৃণমূল। কিন্তু মানুষ ভোটবাক্স রক্ষায় সজাগ ও সতর্ক, মঙ্গলবার গণনার সময়েও গণনাকেন্দ্র থেকে দূরে বামপন্থীদের জমায়েত থাকবে। কারচুপির কোনও চেষ্টা হলে মানুষ প্রতিরোধ করবেন।
সোমবারের পুনর্নির্বাচন সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, অল্প সময়ের নোটিসে রাজ্য নির্বাচন কমিশন আজ যে পুনর্নির্বাচন করালো সেখানেও তৃণমূল ‘অ্যাকশন রিপ্লে’ করেছে আরও বেশি গুন্ডা-মস্তান জড়ো করে। শনিবার ভোটগ্রহণের দিন যেখানে ভোট লুট হয়েছিল, আমরা যে তালিকা দিয়ে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলাম সেখানে পুনর্নির্বাচন হয়নি। শাসক দল যেখানে চেয়েছে সেখানেই পুনর্নির্বাচন করানো হয়েছে। পুনর্নির্বাচনে নিউটাউনে জ্যোতি বসু নগরের মতো জায়গায় আরও বেশি দুষ্কৃতী জমায়েত করে ভোট লুট করেছে, কোথাও মানুষই ভোট দিতে যাননি, আবার কোথাও বুথে পোলিং পার্টিই ঠিক সময়ে পৌঁছায়নি।
বামপন্থীদের পক্ষ থেকে কেন গণনাকেন্দ্রে সতর্ক থাকার আবেদন করা হচ্ছে তা ব্যাখ্যা করে সেলিম বলেছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৬০ জনের প্রাণহানি হয়ে গিয়েছে। ভোটের দিনে হামলায় বহু মানুষ আহত। শিশুকোলে মহিলা প্রার্থী, গর্ভবতী মহিলাকেও শাসক দলের দুষ্কৃতীরা মারধর করেছে। কিন্তু মানুষ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাঁরা প্রতিরোধ করেছেন। গত বারো বছরে গ্রামবাংলায় তৃণমূলের যে সন্ত্রাস, তফসিলি জাতি, আদিবাসী, মহিলা ও গরিবদের ওপরে তৃণমূলের অত্যাচার এবং দেদার লুটের প্রচার বড় মিডিয়াতে এতদিন জায়গা পায়নি। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে তা প্রকাশ্যে। এত আক্রমণ সত্ত্বেও মানুষের প্রতিরোধ দেখে বন্ধ ব্যালট বাক্সে কী আছে তা নিয়ে ভরসায় নেই তৃণমূল। তাই পুলিশ ও প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে বাক্স পাচার করে জাল ব্যালট ঢুকিয়েছে, স্ট্রং রুমের পাঁচিলে সিঁদ কেটে ভিতরে ঢুকেছে। মানুষ পাহারায় আছে বলে এসবেরও প্রতিরোধ হয়েছে, রাস্তা আটকে বিক্ষোভ হয়েছে। মানুষের ওপরে ভরসা না থাকায় গণনাকেন্দ্রেও জালিয়াতি করে মানুষের রায় পালটানোর মতলব করছে তৃণমূল।
এর পেছনে সরাসরি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাত উল্লেখ করে সেলিম বলেন, গণনার ট্রেনিংয়ে কর্মীদের বলা হয়েছে ব্যালটের পিছনে প্রিসাইডিং অফিসারের সই না থাকলেও চলবে। গোছা ব্যালটকেও গণনা করতে বলা হয়েছে। আমরা আইনের ধারা উল্লেখ করে কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, এসব বেআইনি, এসব চলবে না। 
পরে অবশ্য রাজ্য নির্বাচন কমিশন পিছু হটে নতুন নির্দেশিকায় জানিয়ে দিয়েছে যে, বৈধ ব্যালটে প্রিসাইডিং অফিসারের সই থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কমিশন ও সরকারের সন্দেহজনক মনোভাব দেখে সেলিম বলেছেন, এই কমিশনার প্রথমে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে চায়নি, তারপরে বাহিনী এলেও তাদের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়নি। জনগণের টাকা খরচ করে মনোনয়নের সময় সিসিটিভি লাগানো হলেও সেই ফুটেজ দেখা হয়নি। এদের ওপর কোনও বিশ্বাস নেই। কমিশনার কানে ব্লু-টুথ গুঁজে কেবল কালীঘাটের নির্দেশ শুনে কাজ করেন। তাই আমরা দাবি করছি, গণনাকেন্দ্রের সব সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে। গণনাকেন্দ্রে কোনও গন্ডগোল করার চেষ্টা হলে, তাতে কোনও অফিসার যুক্ত থাকলে কেউ পার পাবে না। জল দেওয়ার ছলে অথবা অন্য কায়দায় সিভিক পুলিশ ঢোকানো চলবে না। তৃণমূল-বিজেপি’র যে নেতারা সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘোরে তাদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া চলবে না। আমরা ভালোই জানি, এদের দিয়ে অপরাধ করানো হয়। আউশগ্রামে নিহত কমরেড রাজিবুল হকের বুথে এমন পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যে খুনে অভিযুক্ত নেতারই নিরাপত্তা কর্মী!
পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস এবং প্রাণহানির পরে রাজ্যপালের দিল্লিযাত্রা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, দিল্লি এবং নাগপুরের কাছে নিজের কাজের রিপোর্ট দিতে গিয়েছেন রাজ্যপাল। রাজ্যে রক্তপাত ঠেকাতে উনি কী করেছেন? কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবহার নিশ্চিত করতে কী করেছেন? রাজ্যবাসীর কাছে এর জবাব দিতে পারবেন? কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার না করার পিছনে রাজ্য নির্বাচন কমিশন, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর এবং কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের যোগসাজস কাজ করেছে। বীরভূমে তৃণমূলের প্রার্থীর বাড়িতে বিস্ফোরক পাওয়া গিয়েছিল, তবু তাকে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত বাইরে ছেড়ে রাখা হয়েছিল। ভোটগ্রহণ মেটার পরে এনআইএ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। বোঝাই যাচ্ছে কিরকম সেটিং করে চলছে রাজ্য ও কেন্দ্র। বাংলার মানুষ লড়াই করছে গণতন্ত্র ফেরাতে, লুট বন্ধ করতে। এই লড়াইতে মোদী, শাহ, নাড্ডা কেউ এসেছে? মোদী পিএম কেয়ার তহবিল থেকে নিহত ৬০ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন? প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী কেউই ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন না। তৃণমূল শহীদ দিবস পালন করে ‘পাগলু ড্যান্স’ নাচবে, কিন্তু তৃণমূলের যারা মারা গিয়েছে তাঁরাও তৃণমূলের কাছে শহীদ নয়, স্রেফ ভাড়াটে দুষ্কৃতী। তৃণমূলীরা এগুলি বুঝে নিক।
এদিকে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জিকে ইডি’র জেরায় বাধা সরিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, গ্রামে দিদির রক্ষাকবচ কাজ করেনি বলেই এত বোমা বন্দুক নিয়ে তৃণমূলকে হামলা করতে হয়েছে। এখন ভাইপোর রক্ষাকবচও সুপ্রিম কোর্ট দেয়নি। এবার নাটক ছেড়ে ইডি-সিবিআই ভাইপোকে হেপাজতে নিয়ে জেরা করুক। যিনি ফাঁসিতে যেতে রাজি বলে চেঁচাচ্ছেন, তিনি জেরায় যেতে ভয় পাচ্ছেন কেন?

Comments :0

Login to leave a comment