Adani modi mamata nexus

আদানির দুই হাত ধরে আছেন মোদী-মমতা

কলকাতা

 আদানির এক হাত ধরে আছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, আরেক হাত ধরে আছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে এই অভিযোগ করে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মোদী এবং মমতা ব্যানার্জি দু’জনেই দেশের এবং এরাজ্যের সম্পদ তুলে দিয়েছেন আদানির হাতে। এখন আদানিকে বাঁচানোর বদলে তাদের হাতে তুলে দেওয়া সব সম্পদ কেড়ে নিয়ে দেশকে বাঁচানোর ব্যবস্থা হোক। শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক সরকার। 


দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষে এদিন বিকালে সাংবাদিক বৈঠকে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ চিটফান্ড মালিকের মতোই আদানিও প্রধানমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ। তাঁকে ছায়াসঙ্গী করে মোদী ঘুরেছেন, তাঁর প্লেন ব্যবহার করেছেন। শেয়ার বাজারে যাদের নজরদারি চালানোর কথা সেই সেবি’র কমিটিতে আদানির ঘরের লোককে বসিয়েছেন। এভাবে জামাই আদরে আদানিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও বিমার টাকা লুটে সাহায্য করেছেন এবং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা তুলে দিয়েছেন। আমাদের রাজ্যেও মুখ্যমন্ত্রী আদানিকে দেউচা পাঁচামী দিয়েছেন, বন্দরের নামে তাজপুরের জমি দিয়েছেন। বন্দর তৈরির ডিপিআর কই? টেন্ডার কই? কীভাবে জমি দেওয়া হলো আদানিকে? লুটের টাকার ভাগ ইলেক্টোরাল বন্ডের নামে দেওয়া হয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূলকে। 
সেলিম দাবি করেছেন, অবিলম্বে ডুবে যাওয়া আদানিকে বাঁচানোর বদলে দুই সরকার আদানিকে দেওয়া সব সম্পদ আটক করুক, যাতে দেশের সম্পদ কিছুটা অন্তত বাঁচানো যায়। কৃষকরা ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ে শোধ করতে না পারলে বাউন্সার পাঠিয়ে জমি সম্পত্তি দখল করা হয়, উদ্বেগে কৃষক আত্মহত্যা করে। আর আদানির বেলা ব্যাঙ্ক বিমার টাকায় ক্ষতির জাতীয়করণ করা হবে? মুনাফার সময় তো বেসরকারিকরণ করা হয়েছিল। 
জাতীয়তাবাদের নাম করে আরএসএস-বিজেপি যেভাবে আদানিদের হয়ে সওয়াল করছে সেই সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, আদানিকাণ্ড গর্বের নাকি লজ্জার! আরব থেকে কোনও মসজিদে টাকা এসেছে জানলে যারা হইচই করে, আজকে আবুধাবি থেকে আদানিকে বাঁচাতে পেট্রো ডলার আসতে দেখে তাঁদের বিশুদ্ধ মনে হচ্ছে ? ঐ টাকার মালিকরাই তো আদানিদের সম্পদ মানে দেশের সম্পদের মালিকানা পেয়ে যাচ্ছে! 


আর তৃণমূল সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, আদানি নিয়ে তৃণমূল কোনও কথাও বলছে না, বিরোধীদের সভাতেও যাচ্ছে না, বিরোধী ঐক্য থেকে ভেগে পড়েছে। জগদীপ ধনখড়ের বদলে পাওয়া নতুন রাজ্যপালকে নিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে রয়েছে। কারণ তৃণমূল আসলে ভাড়ায় খাটছে। সেই জন্য মমতা ব্যানার্জিকে এখন বিজেপি’কে বাঁচাতে ত্রিপুরায় যেতে হয়েছে। গত ৫ বছর ধরে ত্রিপুরার মানুষ যখন আক্রান্ত হচ্ছিলেন তখন মমতা ব্যানার্জি কবার ত্রিপুরায় গেছেন? দুই দলই ধান্দার ধনতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক, আদানিকাণ্ডেও তা ধরা পড়ছে। দুই শক্তির বিরুদ্ধেই লড়াই করছে সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা। সেই লড়াইয়ের তীব্রতা আরও বাড়বে। 


দুইদলের ঝগড়ার নাটক নয়, বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে ঘন ঘন দলবদলেই উভয়ের প্রকৃত সম্পর্ক প্রমাণিত হচ্ছে বলে সেলিম মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, লোকসভায় তৃণমূলের সাংসদ বিজেপি’তে যোগ দিলে অধ্যক্ষ দলবদল দেখতে পাচ্ছেন না, বিধানসভায় বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিলে অধ্যক্ষ দলবদল দেখতে পাচ্ছেন না। তাহলে কি দলত্যাগ হয়নি? প্রমাণিত হচ্ছে, ওরা একই দল, তাই দলবদল হয়নি বলছেন দুই অধ্যক্ষ। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় যখন লোকসভার অধ্যক্ষ ছিলেন তখন কিন্তু একজন বিএসপি সাংসদকে সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইন অনুযায়ী তার সাংসদ পদ খারিজ করে দিয়েছিলেন।
রাজ্য কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সেলিম জানিয়েছেন, মানুষের হাতে পঞ্চায়েতকে ফেরাতে, সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বিজেপি ও তৃণমূলকে হারাতে প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মতো রাজ্যের সরকারও যেভাবে চা বাগানের জমি থেকে নদীর চরের জমি, সরকারি দপ্তরের জমি সিন্ডিকেট রাজের হাতে তুলে দিচ্ছে তার বিরুদ্ধেও আন্দোলন হবে। গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে বাঁচানোর জন্যও লড়াই হবে। 
তিনি বলেন, আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্য জুড়ে ত্রিপুরা সংহতি দিবস পালন করা হবে রাজ্য জুড়ে। ত্রিপুরার সঙ্গে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিগত ঐক্য রয়েছে, সেখানে বিজেপি গত পাঁচ বছর ধরে যেভাবে সন্ত্রাস চালিয়েছে, গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে তার বিরুদ্ধে প্রচার করতে আমরা সংহতি দিবস পালন করব। ১৪ ফেব্রুয়ারি আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী সহ ধৃতদের মুক্তির দাবিতে মিছিলে আমরা অংশগ্রহণ করব এবং সেই মিছিলে বিজেপি -তৃণমূল বিরোধী সবাইকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ১৭ ফেব্রুয়ারি সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সম্মেলন উপলক্ষে হাওড়ায় বড় সমাবেশ হবে। তাতে প্রধান বক্তা হিসাবে থাকবেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমরা বলেছি, পুলিশ প্রশাসন অনুমতি দিক বা না দিক ওই জায়গায় সমাবেশ হবেই। আমিও সেখানে থাকব। পুলিশ যা পারে করুক। 
তিনি বলেছেন, ত্রিপুরায় গিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলছেন বছরে দু’বার ডিএ দেবেন সরকারি কর্মচারীদের। অথচ পশ্চিমবঙ্গে বকেয়া ডিএ না পেয়ে আন্দোলনে নামতে হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের। ১৭ ফেব্রুয়ারি তারাও সমাবেশ করবেন, তাদের আন্দোলনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।


রেপো রেট বৃদ্ধি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, ‘এতে ব্যাঙ্ক ঋণ আরও মহার্ঘ হয়ে যাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীরা আরও সমস্যায় পড়বেন।’ আর ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে বিজেপি সরকারের গোরুকে আলিঙ্গনের নির্দেশ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আগে ওরা ১৪ ফেব্রুয়ারি তরুণ তরুণীকে একসঙ্গে দেখলে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বাহক বলে পিটিয়েছে। এখন হয়তো বুঝেছে, প্রেমকে কেউ আটকাতে পারবে না, তবে যার যেমন পছন্দ।’
তৃণমূলের ‘দিদির দূত’ প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুলিশ চোরেদের ধরে হাতকড়া পরাক, নইলে মানুষ ধরলে কিন্তু গাছে বাঁধবে। দূত না পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বরং ভাইপোকে নিয়ে নিজের মানুষের কাছে যান। যখন গেছিলেন তখন তো ভাইপো চড় খেয়েছিল, আর মুখ্যমন্ত্রী শিলাদিত্যকে মাওবাদী বলে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন। তৃণমূল বিজেপি’র সংস্কৃতি এটাই, কাশ্মীর ফাইল নিয়ে প্রচার চলবে, বিবিসি’র ডকুমেন্টারি দেখানো চলবে না।

 

Comments :0

Login to leave a comment