প্রবন্ধ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩ — অন্য স্বাধীনতা
কিংবদন্তীর মহানায়ক
তপন কুমার বৈরাগ্য
গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য ছিলেন বিশ্বের সেরা প্রকৃতিবিজ্ঞানী।
বলতে দ্বিধা নেই তার দারিদ্র তাকে মহান করে গড়ে তুলেছে।
গোপালচন্দ্র ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের পয়লা আগস্ট অবিভক্ত বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার লোনসিং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতার নাম অম্বিকাচরণ ভট্টাচার্য এবং মায়ের নাম শশীমুখী দেবী।
গোপালচন্দ্রের বয়েস যখন পাঁচ বছর তখন একদিনের অজানা
জ্বরে তার পিতার মৃত্যু হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জন করা ব্যক্তির মৃত্যু।শশীমুখী দেবী যেন অথৈ জলে পড়লেন।তবু ছেলেকে
মানুষ করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করলেন।ভর্তি করে দিলেন লোন
সিং স্কুলে। অনেক কষ্টে ছয় বছর কাটলো।মা আর সংসারের
ভার বহন করতে পারছেন না।শশীমুখী দেবী ছিলেন অসাধারণ
বুদ্ধিমতী।তিনি ছেলের উপনয়ন দিলেন এবং দীক্ষার ব্যবস্থা করলেন। গোপালচন্দ্র বুঝলেন মায়ের কষ্ট তাকে লাঘব করতেই
হবে।তিনি শাস্ত্র পড়ে সকল দেবতার পূজা করা শিখলেন।
শীঘ্রই তার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।যজমানীর জন্য দূর -দূরান্ত গ্রাম থেকে তার ডাক আসতে থাকল।মাঠ, নদী,জলাশয়,
বন পেড়িয়ে তাকে যেতে হতো যজমানী করতে।যেতে
যেতে দেখতেন লম্বা পিঁপড়ের সারি,একটা খেঁজুরগাছের
উপর একটা বটগাছের জন্ম।যজমানী করতে গিয়ে দেখলেন
নানা ধরনের কীটপতঙ্গ।তিনি দুর্গম রাস্তায় থেমে এই সব কীটপতঙ্গের গতি-প্রকৃতি লক্ষ্য করতেন।তাদের তিনি কৌতুহলের
চোখে দেখতেন।পরবর্তী জীবনে এদের নিয়ে শুরু করলেন
গবেষণা।১৯৩২খ্রিস্টাব্দে কীটপতঙ্গদের আচার আচরণ ও
জীবন চর্যা নিয়ে লিখলেন 'বাংলার কীটপতঙ্গ'বইটা।এই
বইটার জন্য তিনি পেলেন রবীন্দ্র পুরস্কার। বসুবিজ্ঞান মন্দির থেকে পান বিবিডি মেডেল।বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ থেকে পান সত্যেন্দ্রনাথ বসু পদক। স্বয়ং জগদীশ চন্দ্র বসু তাকে তার গবেষণাগারে সহকারী গবেষকের পদ দিয়েছিলেন।এই সব খ্যাতির জন্য তার ছোটবেলায় যজমানীর জন্য বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া এবং গাছপালা ও কীটপতঙ্গদের নিজের চোখে দেখা যা তাকে পরবর্তীকালে একজন সেরা প্রকৃতিবিজ্ঞানীর সম্মান এনে দিয়েছে।আর হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তীর মহানায়ক।
Comments :0