ভ্রমণ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
আমতা আমতা করে হামতা...
অভীক চ্যাটার্জী
গহীন অরণ্যে মধ্যে দিয়ে পথ চলে গেছে এঁকে বেঁকে। সে পথ ধরে প্রতীক আর আমি চলেছি ফুলের গন্ধ গায়ে মেখে। বিয়াস ছুটেছে আপন ছন্দে। তরঙ্গদল তার নিয়ম ভাঙার খেলায় বড্ড সাবলীল। আমরা একটু একটু করে পাকদণ্ডী বেয়ে উঠে চলেছি উপরে, আরও উপরে। ঠাণ্ডা হাওয়ায় শন্ শন্ শব্দ কন কন করিয়ে দিচ্ছে দাঁতের পাটি। আরও গরম পোশাক পরে আসা উচিৎ ছিল। যা হোক, আমরা পৌঁছলাম অটল টানেলের কুলু উপত্যকা তরফের দ্বারে। দূরে বরফের টুপি মাথায় দিয়ে বসে আছেন মহাস্থবির হিমালয়। আকাশ মেঘলা, সূর্যদেব যেন বড্ড নারাজ। আমরা যাত্রা শুরু করলাম অটল টানেলের ভেতর দিয়ে।
নয় কিলোমিটারের এই গিরিগর্ভপথ প্রযুক্তির এক অত্তশ্চর্য নিদর্শন। স্বয়ংক্রিয় আলোক ব্যবস্থা এ পথকে সহজ করে তোলে অনেকটাই। আর এই পথে চলার এক অদ্ভুত ভালো লাগা ঘিরে থাকে সারাক্ষণ। ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঝাপটা লাগে ক্ষণে ক্ষণে। স্পিতি উপত্যকাকে আরও কাছে এনে দিয়েছে এই টানেল। প্রায় দশ মিনিট পর আমরা বেরোলাম অন্য প্রান্ত দিয়ে। আর বেরিয়ে দেখি, কোথায় সেই মেঘলা মনখারাপের আকাশ! চারিদিক ঝলমল করছে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের আলোয়। আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই। "সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!"
আমরা কিছু সময় ওই দিকে কাটিয়ে আবার ফেরার পথ ধরলাম। এবার চালকের আসনে আমি নিজে। হয়তো সে ভালো লাগা লিখে বোঝানো অসম্ভব, তবু চেষ্টা করছি। ওই নয় কিলোমিটার আমার জীবনের সব গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতাকে বলে বলে দশ গোল দিয়ে দিতে পারে অবলীলায়। আবার রাস্তা শেষ হয়। আমরা বেরই কুলু উপত্যকার দিকে। এবার ফেরার পালা। সেই একই পথ ধরে ফিরে আসি আমরা আমাদের হোটেলের দিকে। পথে পড়ে সোলাঙ উপত্যকা। একটু সময় কাটিয়ে মল রোডে যখন ফিরি, বেলা গড়িয়ে গেছে।
একটা খাবারের দোকানে ঢুকেছি সবে। অর্ডার করেছি ভেজ থালী, এমন সময় আবার একটা ফোন আসে, যে ফোনের অপেক্ষা আমি হয়তো স্বপ্নের মাঝেও করেছি। হিমাচল প্রদেশ সরকার আবার ট্রেক চালু করে দিয়েচেটে। আমরা কাল যেতে পারি হামতার পথে। আমতা আমতা করে আমরা শেষ পর্যন্ত চলেছি হামতার পথে। দিনটা পাঁচই জুলাই। আমরা বেরোব হামতার উদ্দেশ্যে।
চলবে
Comments :0