RABIKATHA Sunil Ganguli

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের-র কবিতা

সাহিত্যের পাতা

Sunil Ganguli Kabita

তিনি এবং আমি

সু নী ল গ ঙ্গো পা ধ্যা য়

কেন রবীন্দ্রনাথকে তুমি বুকে জড়িয়ে বসে আছো
জানালার ধারে
আমি কি কেউ না ?
আমি গরিব ইস্কুল মাস্টারের ছেলে দাঁড়িয়ে আছি রাস্তায় হাঁ করে
জলকাচা ধুতির ওপর পেঁচা শার্ট পরে,পায়ে রবারের স্যান্ডেল
আমার কোনো জ্যোতিদাদা ছিল না, পিয়ানো-অর্গান শুনিনি
সাত জম্মে
আমার বাবা কোনোদিন সিমলে পাহাড়ে যাননি আমাকে নিয়ে
জন্মদিনে রুপোর চামচে পায়েসান্ন খাওয়া দূরে থাক, ফ্যান ভাতে
কোনোদিন ঘি জোটেনি।
তবু আমি কি কেউ না ?
আমার নিজস্ব ঘর নেই, লেখার টেবিল নেই, যখন তখন আমার বিছানায়
উড়ে আসে
 

উনুনের ঠাণ্ডা ঠাই
তিনবেলা টিউশানি করি,সর্বক্ষণ পেটে ধিকি ধিকি করে খিদে
তবু আমি কবিতা লিখেছি,সবাইকে লুকিয়ে, মোম-জ্বলা মাঝ রাত্রে
আমার রক্ত, ঘাম, আত্মার টুকরো মিশে আছে তাতে।
আমার বাবা শিরোপা দেবার বদলে জুতো মারতে উঠেছিলেন
স্বর্ণকুমারী কিংবা প্রতিভা নয়, আমার ছোড়দির নাম চামেলী
আমার খাতার পাতা ছিঁড়ে সে বাতাসকে
উৎসাহ দেয়
বাড়ির দেওয়াল থেকে পাড়ার মোড় পর্যন্ত ঝনঝন করে উপহাস
বড় জামাইবাবু মাথায় চাটি মেরে আমায় ‘কবি’ বলে
শ্যালিকাদের হাসিয়েছেন
তবু আমি লিখেছি, আমি লিখে গেছি
রবীন্দ্রনাথ আমার এই চোহদ্দির মধ্যে জন্মালে লিখতে পারতেন
এক লাইনও ?
 

বিহারীলালের মতন কোনো নামজাদার সঙ্গে আমার চেনা-জানা ছিল না।
গলা থেকে মালা খুলে আর দেবে,
মালা পরাই উঠে গেছে
পত্রিকার সম্পাদকরা উত্তর দেন না, ডাক টিকিট মেরে দেন
তবু আমি লিখেছি, লিখে গেছি
আমার সমস্ত অস্তিত্বের নির্যাস নিয়ে এক একটি কবিতা
শুধু তোমাকে শোনাবার জন্যই নয়, তোমাকে রচনা করবার জন্য
তোমার পায়ের তলার ধুলো, চুলের মধ্যে ঘাম শুষে নেবার জন্য
তোমার ফ্যাকাশে হাসির চারপাশে একটা বৃত্ত এঁকে দেবার জন্য
এবং এক সময় তোমাকে ছাড়িয়ে রক্ত নদীর তীরে দাঁড়িয়ে
গণ্ডূষ পান করেছি।
 

বন্ধুরা চাঁদা দিয়েছিল, তাই নিয়ে ছাপিয়েছি প্রথম কবিতার বই
প্রেসে এখনও কিছু ধার রয়ে গেছে
দপ্তরীখানায় দয়া চেয়েছি।
তারপর ছুটতে ছুটতে এসেছি তোমার কাছে, তোমার করকমলে
প্রথম কপিটি দেবার জন্য
পাপীয়সী, তুমি এই সময়ে রবীন্দ্রনাথকে বুকে জড়িয়ে আদর করছো
আমি কি কেউ না ?

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment