কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতের উপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার মুজফফরনগরে জরুরি ভিত্তিতে কৃষক পঞ্চায়েতের ডাক দিয়েছে ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন (বিকেইউ)। পহেলগাম হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার মুজফফরনগর বাজারের এক বিক্ষোভ সমাবেশে কৃষকনেতা রাকেশ টিকায়েতের উপর কিছু অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতী হামলা করে। গত ২২এপ্রিলের এই সন্ত্রাসবাদী হামলা আটকাতে সরকারের গাফিলতি এবং কাশ্মীরে ‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতি ফিরে এসেছে বলে দাবি করে বিজেপি’র প্রচারকে এই কৃষকনেতা কটাক্ষ করেছিলেন বলেই এমন হামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিকেউ’র সর্বভারতীয় সভাপতি নরেশ টিকায়েত মুজফফরনগরের জিআইসি ময়দানে এই পঞ্চায়েতের ডাক দিয়েছেন। শুক্রবারের এই হামলা আরও বড় এক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মুজফফরনগর বাজারে পহেলগাম হামলার বিরুদ্ধে শুক্রবার এক বিক্ষোভে সমাবেশে কয়েকজন মদ্যপ যুবক রাকেশ টিকায়েতকে নিগ্রহ করে। এই সংক্রান্ত এক ভিডিও ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিও দেখা যাচ্ছে, হামলা ও ধস্তাধস্তির মধ্যে এই কৃষক নেতার পাগড়ি খুলে মাটিতে পড়ে যেতে দেখা যায়। হঠাৎ হামলা করেই দুষ্কৃতীরা এলাকা থেকে পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। দুষ্কৃতীরা তাঁর প্রাণনাশের উদ্দেশ্য নিয়েই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। হামলাকারীরা সবাই স্থানীয় কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হচ্ছে। এই গোটা ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত বলে তিনি অভিযোগ করেন। একই সুরে শনিবার নরেশ টিকায়েত বলেন, এই গোটা ঘটনা মোটেই আকস্মিক নয়। এই হামলা সুপরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শুক্রবারের এই ঘটনার আগে থেকেই বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাকেশ টিকায়েতকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
আদতে কৃষক আন্দোলনকে হুমকি দিয়ে, ভয় দেখিয়ে ভেস্তে দেওয়ার স্বার্থেই এই কৃষকনেতার উপর এমন ভাবে হামলার করা হয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এমনই জানিয়েছে কিষান সংঘর্ষ সমিতি। সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই হামলা প্রসঙ্গে রাকেশ টিকায়েত বলেন,‘‘একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওরা আসলে কৃষকদের আন্দোলনকে ভয় পাচ্ছে। কৃষকদের কণ্ঠস্বরকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। শুক্রবারের বিক্ষোভ সমাবেশ ভেস্তে দিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই হামলা করা হয়েছে।’’
ইতিমধ্যে এই ঘটনায় মামলা দায়ের করে তদন্তে নেমেছে মুজফফরনগরের স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। শনিবার শহরের পুলিশ সুপার সত্যনারায়ণ প্রজাপত বলেছেন,‘‘আমরা ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেছি। এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছি। অভিযুক্তদের তল্লাশি চলছে।’’ আপাতত কৃষ্ণপুরীর বাসিন্দা সৌরভ ভার্মা নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এই ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও কৃষক সংগঠন তীব্র ধিক্কার জানিয়েছে। শুক্রবারেই এই ঘটনায় ধিক্কার জানিয়ে সিপিআই(এম) নেতা হান্নান মোল্লা বলেন,‘‘হিন্দুত্ববাদীরা রাকেশ টিকায়েতের উপর হামলা করেছে। তাঁর মাথা লক্ষ্য করে এই নৃশংস হামলা করা হয়। আমরা এই হামলার তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। সংযুক্ত কিষান মোর্চার সমস্ত শাখা সংগঠনকে এগিয়ে এসে এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হতে হবে।’’ এদিন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবও এই ঘটনায় তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন।
শনিবার এক বিবৃতি প্রকাশ করে এই ঘটনাকে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা (এসকেএম)। ‘‘এই জঘন্য ঘটনা আদতে আরএসএস বিজেপি’র দেশ বিরোধী, নয়া ফ্যাসিবাদী চরিত্রের প্রতিক। আমরা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারির দাবি করছি,’’ জানিয়েছে এসকেএম। এদিন এই ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়ে সারা ভারত কৃষকসভা বলেছে,‘‘এই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত। আদতে বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে প্রতিহত করে রাকেশ টিকায়েত যে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের মুখ হয়ে উঠছেন, যোগী সরকার তাতেই অস্বস্তিতে পড়েছে। সেই কারণেই এই হামলা করা হয়েছে। এই ঘটনায় যারা যুক্ত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।’’
রাকেশ টিকায়েতের উপর এই হামলার তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ায় বাধ্য হয়ে বিজেপি’র জোট শরিক রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি)-ও এই ঘটনার নিন্দা করেছে। মুজফফরনগরের বুধনার বিধায়ক ও আরএলডি নেতা রাজপাল বালিয়া এই ঘটনায় ধিক্কার জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন,‘‘এই হামলায় যারা যুক্ত তাদের অবিলম্বে শাস্তি দিতে হবে। যে কোনও গণতান্ত্রিক সমাজে এই ধরনের কার্যকলাপ কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’’
Condemning the attack on Rakesh Tikayet
রাকেশ টিকায়েতের উপর হামলার নিন্দা বিভিন্ন মহলে

×
Comments :0