Trinamool Congress Lie Machine

তৃণমূলী মিথ্যাচারের ২৫ বছর:
সেই ‘ট্রাডিশন’ সমানে চলছে

রাজ্য

Trinamool Congress Lie Machine

রবীন দেব

১৯৯৮ সালে রাজ্যে ৫ম পঞ্চায়েত সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে ভাঙড়ের অশ্বত্থবেড়িয়া, যে গ্রামে তৃণমূল প্রার্থী চম্পলা সর্দারের সম্ভ্রমহানি করা হয়েছে বলে রাজ্যজুড়ে সোরগোল তুলেছিল তৃণমূল-বিজেপি ও সংবাদমাধ্যমের একাংশ। 

২১ মে, ১৯৯৮: ছোট্ট ঘর থেকে স্বামী ও সন্তানের সামনে থেকে চম্পলাকে কে বা কারা তুলে নিয়ে গেল, এ প্রশ্নের মীমাংসার আগেই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হল  সিপিআই(এম)’র ৫ কর্মীর বিরুদ্ধে। 

২৩মে, ১৯৯৮: চম্পলা সর্দারকে একটি গাড়ী করে অশ্বত্থবেড়িয়া থেকে গড়িয়াহাটের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জি। ২৮মে অনুষ্ঠিতব্য পঞ্চায়েত নির্বাচনের তিনদিন আগে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মশতবর্ষ শুরুর দিন ২৫মে ৯৮ রাজ্যে ধর্মঘট ডেকে দিল তৃণমূল, সমর্থন জানাল বিজেপি। নার্সিং হোমে চম্পলাকে দেখতে এলেন বিজেপি-তৃণমূলের জোট এনডিএ-র প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ। রাজ্যজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টায় মত্ত ছিল তৃণমূল-বিজেপি অশুভ আঁতাত।

কিন্তু গ্রামবাংলার সংগ্রামী সচেতন মানুষ এই ঘৃণ্য মিথাচার ও ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী করলেন সিপিআই(এম) সহ বামফ্রন্টের প্রার্থীদের। ধরাশায়ী হল তৃণমূল-বিজেপি সহযোগীরা। পরাজিত খোদ চম্পলা সর্দার। মানবতার মূর্ত প্রতীকমমতা ব্যানার্জি থেকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি কেউই সেদিন ছিল না গড়িয়াহাটের নার্সিং হোমে-পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর, যে দিন ছেলের হাত ধরে চম্পলা সর্দার কলকাতার রাস্তায়।

আদালতের রায়:

এখানেই থামেনি এই মিথ্যাচার নিয়ে তৃণমূলের নেতা, নেত্রীদের মুখে চুনকালি পরার ধারায়। প্রায় পাঁচ বছর পর ৫মে, ২০০৩, দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার প্রথম সহকারী দায়রা জজ সন্দীপন ব্যানার্জি সমস্ত অভিযুক্তকে খালাস দেন- কারণ মেডিক্যাল রিপোর্টে চম্পলা সর্দারকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, না কি শ্লীলতাহানি করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আদলতে সর্দারের দেওয়া বক্তব্য পরস্পরবিরোধী ছিল বলে জানান বিচারক। তাই আদালত আনোয়ার আলি ঘরামি (মনোহর), ইরান আলি (ইভান) মোল্লা, চুন্নাত (শ্রীনাথ) ঘরামি, বিশ্বনাথ রুইদাস ও উদয় মন্ডল(মান্ডি)কে বেকসুর খালাসের আদেশ দেন। বিনা কারণে তৃণমূল ও বিরোধীদের ঘৃণ্য মিথ্যাচারে উপরোক্ত ৫ সিপিআই(এম) কর্মীকে প্রায় পাঁচ বছর কারাবাসে থাকতে হয়েছে। রাজ্যবাসীকে কিছুটা হলেও ভুগতে হয়েছে অকারণে টিএমসি সহ বিরোধীদের ডাকা ২৫মে, ’৯৮র বন্‌ধ-এ।

অকারণে ধর্মঘট ডাকা, জাতীয় সড়ক অবরোধ (২৬দিন), বিধানসভা ভাঙচুর (৩০ নভেম্বর, ২০০৬), বেহালা থানায় চেয়ার দখল, ২৫ অক্টোবর, ১৯৯৮ গোলপার্কের বেদীভবন কান্ডে গুজব ছড়িয়ে রাজ্যজুড়ে হিংসা ও তান্ডব, বিধায়ক আবাসনে স্ত্রীর হাতে বিধায়কের প্রাণহানির ঘটনায় ধর্মঘট ডাকা, শিয়ালদহ ষ্টেশনে বিনা টিকেটের যাত্রীর সমর্থনে স্টেশন চত্বরে ব্যাপক ভাঙচুর ও পরের দিন বাংলা বন্‌ধ ডাকা, ৫ নভেম্বর, ২০১১ পুলিশ মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ভবানীপুর থানা থেকে দুষ্কৃতীদের ছাড়িয়ে নেওয়া, কারণে-অকারণে অবরোধ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, এমনকি ধর্মঘট আহ্বানে পটিয়সী নেত্রী এখন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত, চাকরিপ্রার্থী, বকেয়া ডিএর দাবিতে আন্দোলনরত সরকারী কর্মী, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, পৌরকর্মী ও অন্যান্য ন্যায্য-যুক্তিযুক্ত দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্রতি অবিরত নিক্ষেপ করে চলেছেন বক্রোক্তি, হুমকি, অশ্লীল বিশেষণ ব্যবহার, এমনকি চাকরি কেড়ে নেওয়ার পরোয়ানা।

এই ধরনের অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক, বিভেদ সৃষ্টিকারী ও ফ্যাসিস্তসুলভ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে গড়ে উঠুক ব্যাপক ঐক্য ও সংগ্রাম।

Comments :0

Login to leave a comment