Union Budget 2023

ফের ব্যর্থ সাধারণের সমস্যার সমাধানে

রাজ্য

Union Budget Asim Dasgupta

 


ড. অসীম দাশগুপ্ত



সমগ্র দেশের সাধারণ মানুষের মূল দুটি সমস্যা হলো বেকারত্ব এবং মূল্যবৃদ্ধি। অন্যান্য বক্তব্য থাকলেও ‍‌এই দুটি মূল সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান কেন্দ্রীয় বাজেট।
কর্মসংস্থান
স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোনও লক্ষ্যমাত্রাই স্থির করা হয়নি এবারের বাজেটে (২০২৩-২৪)। উদাহরণ হিসেবে শুধু বলা হয়েছে যে, ‘‘১০০’’ দিনের কাজের প্রকল্পে এই অর্থবর্ষে বরাদ্দ করা হয়েছে ৬০,০০০ কোটি টাকা, যা গতবছরের বরাদ্দের (৭৩,০০০ কোটি টাকা) থেকে অনেকটাই কম। মূল্যবৃদ্ধি ধরলে এই বরাদ্দ প্রকৃত অর্থে হবে আরও কম। কৃষির ক্ষেত্রে স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন হলো সেচের সম্প্রসারণ এবং সারের ব্যবহার বৃদ্ধি। কিন্তু, উল্লেখনীয় যে সেচের ক্ষেত্রে, প্রধানমন্ত্রীর সিঞ্চাই প্রকল্পে বরাদ্দ গতবছরের ১২,৯৫৪ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি না করে হ্রাস করা হয়েছে ১০,৭৮৭‍‌ ‍কোটি টাকাতে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, স্বাধীনতার পর পঞ্চাশের দশকে, যখন তথাকথিত উদারনীতি আক্রমণ শুরু হয়নি, তখন প্রথম ও দ্বিতীয় পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনার সময়ে প্রতিবছর দেশের মোট পরিকল্পনা বরাদ্দের ২০ শতাংশেরও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছিল সেচের ক্ষেত্রে, এবং নির্মিত হয়েছিল ভাখরা-নাঙ্গাল এবং দামোদর উপত্যকা প্রকল্পের জন্য সেচ প্রকল্পগুলি। পরিতাপের বিষয়, এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে সেচের ক্ষেত্রে এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে মোট পরিকল্পনা বাজেটের মধ্যে সেচের জন্য বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ১ শতাংশের মতো অর্থ!

সারের ক্ষেত্রে আগে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানাগুলি থেকে অপেক্ষাকৃত কমদামে যে সার উৎপাদন ও বণ্টন করা সম্ভব হতো, এখন উদারনীতির পথ ধরে সেই সংস্থাগুলিকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই কৃষিতে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কোনও সামগ্রিক চিন্তাই নেই এই কেন্দ্রীয় বাজেটে। এছাড়া শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের অনুরূপ কোনও প্রস্তাবের উপস্থিতি নেই এই বাজেটে। উল্লেখনীয়, শহরাঞ্চলে এই ধরনের কর্মসংস্থান প্রকল্পের উদ্যোগ গৃহীত হয়েছিল এ-রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের আমলের শেষের বছরে।

মূল্যবৃদ্ধি
মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুচরো স্তরে, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে, মূল্যবৃদ্ধি একটি জ্বলন্ত সমস্যা। মূল্যবৃদ্ধির পিছনে বৃহৎ ব্যবসায়ীদের যে একচেটিয়া দাপট কাজ করে, তাকে মোকাবিলা করতে পারে সরকারের মাধ্যমে পালটা প্রতিযোগিতার পদক্ষেপ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বিকেন্দ্রীকৃতভাবে, খাদ্যশস্যের বণ্টনের জন্য ভরতুকি হিসেবে গত বছরে প্রদান করা হয়েছিল যে ৭২,২৮৩ কোটি টাকা, তা বিস্ময়করভাবে এবছরে হ্রাস করানো হয়েছে ৫৯,৭৯৩ কোটি টাকাতে। উপরন্তু, সস্তায় খাদ্যশস্য বণ্টনের জন্য ভারতের খাদ্যনিগমকে গতবছরে যে অর্থ (২,২৪,৬৩৬ কোটি টাকা) বরাদ্দ করা হয়েছিল, তাকেও এ বছরে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ১,৩৭,২৩৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই মূল্যবৃদ্ধির কারণ সৃষ্টি করছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।

এছাড়া, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে কিছুটা কর লাঘব করার কারণে মধ্যবিত্ত মানুষজনের কিছুটা লাভ হবে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির দাপট চললে এই লাভ কিছুদিনের মধ্যেই হারিয়ে যাবে। অর্থাৎ, মূল্যসমস্যা দুটি, বেকারত্ব এবং মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অনুপস্থিতি এই কেন্দ্রীয় বাজেট দেশের সাধারণ মানুষের জন্যে অর্থহীনই হয়ে থাকবে।

Comments :0

Login to leave a comment