YECHURY ELECTORAL BOND

নির্বাচনী বন্ড সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তিকে ধ্বংসের চেষ্টা: ইয়েচুরি

জাতীয়

নির্বাচনী বন্ড নির্বাচনী লড়াইয়ে সমান সুযোগের সম্ভাবনাকে খারিজ করেছে। ফলে গণতন্ত্রের শর্তকেও ধ্বংস করেছে। সরকারে আসীন দলের ক্ষমতা একচ্ছত্র করার ব্যবস্থা করেছে। আরও বড় বিপদ হলো, এক দলের একনায়তন্ত্র কায়েমের ব্যবস্থা করেছে। অর্থশক্তির হাতে নিরঙ্কুশ রাজনৈতিক ক্ষমতা তুলে দেওবার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতে সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি ধ্বংসের চেষ্টা করেছে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা। 
নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত একটি সাক্ষাৎকারে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থাকে এই ভাষাতেই আক্রমণ করেছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, এই বন্দোবস্ত চালু করার প্রধান দায় বিজেপি’র। তারাই আইন করে এই ব্যবস্থা করেছে। সিপিআই(এম) সংসদের মধ্যে এবং আদালতে প্রথম থেকে নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছে। 
স্টেট ব্যাঙ্কের ভূমিকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেছেন, আদালতের দেখা উচিত কেন দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক আদালতে ভুল তথ্য দিল। আদালত অবমাননার অভিযোগ সিপিআই(এম) দায়ের করেছে। মিথ্যা সাক্ষ্যের অভিযোগেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সুপ্রিম কোর্টই তা ঠিক করবে। স্টেট ব্যাঙ্ক আদালতে বলেছিল কে কার থেকে কত টাকা নিয়েছে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় লাগবে। আদালতের চাপে তারাই দু’দিনের মদ্যে তথ্য প্রকাশ করেছে। কিন্তু অসন্পূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আদালত বলেছে, কোনও কিছু গোপন করা চলবে না। পূর্ণ তথ্য দিতে হবে। তার মানে তথ্য গোপন করার চেষ্টা হয়েছে।
বিজেপি সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিটি ধাপে তথ্য লুকানোর চেষ্টা করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক। অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রথমে সময়সীমা বাড়াতে অনুরোধ জানালো। তারপর অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করল। ফের সুপ্রিম কোর্ট সম্পূর্ণ তথ্য জানানোর নির্দেশ দিল। সরকারের চাপের কারণে স্টেট ব্যাঙ্ককে এসব করতে হয়েছে, এমন মনে করার যতেষ্ট কারণ রয়েছে। তবে মানুষকে তথ্য না জানানোর জন্য নানা কৌশল নেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। 
প্রশ্ন ছিল, স্টেট ব্যাঙ্কের সবচেয়ে বড় অংশীদারিত্ব কেন্দ্রের সরকারের হাতে। তা’হলে কী সরকারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সরকারের চাপেই কী স্টেট ব্যাঙ্ক তথ্য আড়াল করতে চাইছিল?
ইয়েচুরি বলেন, অন্য কোনও কারণ তো দেখছি না। না’হলে আদালতের নির্দেশের পরও স্টেট ব্যাঙ্কের লুকানোর কিছু ছিল না। নির্বাচনী বন্ড চালু করা হয়েছিল রাজনৈতিক দুর্নীতিকে আইনের চোখে বৈধ করে তুলতে। আদালতই তো মনে করেছে যে তথ্য গোপন করা হচ্ছে। সে কারণে নির্দেশ দিয়েছে কোনও তথ্য লুকানো যাবে না। 
সরকারের নির্দেশেই কী স্টেট ব্যাঙ্ক আদালতকে ভুল তথ্য দিয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধেই কি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয়? 
ইয়েচুরি বলেন, অবশ্যই উচিত। সরকারের দায় অবশ্যই রয়েছে। আদালতের নিশ্চয় দেখা উচিত স্টেট ব্যাঙ্ক এবং তার মালিক সরকারের ভূমিকা কী। 
ইয়েচুরি বলেন এই লেনদেনের চারটি দিক রয়েছে। এক, মাফিয়াদের কায়দায় তোলাবাজি। কেন্দ্রীয় সংস্থাকে পাঠানো। তারপর চাপ দিয়ে টাকা আদায় করা। দুই, টাকার বিনিময়ে বরাত। যে যে সংস্থা টাকা দিয়েছে সরকার তাদের বরাত দিয়েছে। তিন, টাকা পাচার। মুনাফার কয়েকগুন টাকা অনুদান দিয়েছে বহু সংস্থা। এই টাকা তারা পেল কোথায়। এই সংস্থাগুলিকে ঢাল করে বড় সংস্থা টাকা ঢেলেছে। বিজেপি সরকার এ কারণেই নতুন ব্যবস্থা চালু করেছিল। অতীতে নিয়ম ছিল পরপর তিন বছর মুনাফা করেছে এমন সংস্থা নিট মুনাফার ৭.৫ শতাংশ রাজনৈতিক অনুদান দিতে পারবে। এই সীমা তুলে নেওয়া হয় নির্বাচনী বন্ড চালু করে। যাতে মুনাফা যা দেখানো হচ্ছে, তার কয়েকগুন অর্থ দিতে বাধা না থাকে।  চার, অন্যায়ের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ওষুধ সংস্থাগুলিকে। নিম্নমানের ওষুধ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে এমন সংস্থাগুলিকে তদন্তের হাত থেকে বাঁচানো হয়েছে। 
নির্বাচনী বন্ডের অসম্পূর্ণ তথ্যই এই প্রবণতাগুলি স্পষ্ট করেছে। ডিএমকে-কে নিয়ে প্রশ্ন ছিল, তামিলনাডুতে এই দলের সঙ্গে সিপিআি(এম)’র বোঝাপড়া রয়েছে। তারাও স্যান্টিয়াগো মার্টিনের লটারি সংস্থা ফিউচার গেমিংয়ের টাকা পেয়েছে। 
ইয়েচুরি বলেন, আমরা সিপিআই(এম) নির্বাচী বন্ডে টাকা নেইনি। এই অবস্থান আমরা ঘোষণা করেছিলাম। কারণ আমরা মনে করেছিলাম এই বন্দোবস্ত বেঠিক। ফলে কোনও দল বন্ডে টাকা নিলে আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু এই ব্যবস্থার জন্য দোষী বিজেপি। তাকে আড়াল করা যাবে না। বিজেপি-ই আইন করেছে। বিজেপি-ই সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে। কেন্দ্রে তাদেরই সরকার। ইডি, সিবিআই তাদেরই হাতে। 
ইয়েচুরি মনে করিয়ে দেন যে ডিএমকে’র মতো দল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পর নিজেদের বন্ড বাবদ আয়ের উৎস বিশদে প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, বিজেপি কেন করছে না।

Comments :0

Login to leave a comment