bjp tribal torture

আদিবাসী প্রৌঢ়কে চটি দিয়ে মার বিজেপি’র যুবনেতার

জাতীয়

সেবার তো ‘অত্যাচারিত’ আদিবাসী যুবককে বাড়িতে ডেকে ক্যামেরার সামনে পা ধুইয়ে দিয়ে দিয়ে ‘পাপস্খলন’ করেছিলেন শিবরাজ সিং চৌহান। পরে যদিও অভিযোগ উঠেছিল, যাঁকে ডেকে ক্ষমাপ্রার্থনা এই সেই শর্ট ফিল্ম শুট হয়েছিল, তিনি মোটেই আসল অত্যাচারিত যুবক নন। ‘ডামি’ দিয়ে হোক কিংবা সত্য সত্যই সিঢির আসল অত্যাচারিত, সেই লাইফ টেলিকাস্টে যে মধ্য প্রদেশে বিজেপি নেতা-কর্মীদের আদিবাসী অত্যাচারে লাগাম টানতে পারেনি, তা আরও একবার প্রমাণ হলো। বিজেপি শাসিত মধ্য প্রদেশে আদিবাসী নিগ্রহের আরেক ন্যক্কারজনক ঘটনা সামনে এল। অনুপপুর জেলায় এক দুর্ঘটনার পর একজন আদিবাসীকে বিজেপি’র এক নেতা রাস্তায় দাঁড়িয়ে চটি দিয়ে পেটাচ্ছে। সোমবারের সেই ভিডিও সামনে আসতেই ভোটের মুখে মধ্য প্রদেশে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক চাপান উতোর। বিজেপি এখন ‘ট্রাইবাল অ্যাট্রোসিটিস’ বা ‘আদিবাসীকে অত্যাচারের’ দল হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের ইস্তফার দাবি তুললেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কমল নাথ। তাঁর অভিযোগ, আদিবাসীদের উপর অত্যাচার ঠেকাতে শাসক বিজেপি পুরোপুরিই ব্যর্থ। 

মহকুমা শাসক (এসডিওপি) সুমিত কারকেট্টা জানিয়েছেন, গত সোমবার জনৈক হিরওয়া সিং গোণ্ড (৫৭) ও ভোমা সিং (৬০) রাজেন্দ্রনগর থেকে একটা মোটরসাইকেলে চেপে অনুপপুর যাচ্ছিলেন। রাস্তায় একটা পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে তাঁদের টু-হুইলারের ধাক্কা লাগে। ঘটনাস্থলেই ভোমা সিংয়ের মৃত্যু হয়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বেশ কিছু লোক জমা হয়ে যায়। এসডিওপি জানিয়েছেন, দুটো লোক মিলে মারতে শুরু করে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন যে সেই হিরওয়া সিং গোণ্ডকে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি লোক মাটিতে পড়ে রয়েছেন। আর তাঁকে মারধর করছে আরও দু’জন। একজনের হাতে আবার চটি, সে সেটা দিয়েই পেটাচ্ছে ওই আদিবাসী প্রৌঢ়কে। অভিযুক্ত ওই দুজন হলো জিতেন্দ্র কুশওয়া ও গণেশ দীক্ষিত। এই দীক্ষিত বিজেপি’র যুব মোর্চার নেতা। পুলিশ এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং তফসিলি জাতি ও আদিবাসী (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনের বেশ কিছু ধারায় মামলা দায়ের করেছে। 

ঘটনা সামনে আসতেই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে বিজেপি এখন তাদের যুবনেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। বিজেপি’র অনুপপুরের সভাপতি রামদাস পুরীর কথায়, দীক্ষিত বিজেপি’র যুব মোর্চার মণ্ডল সভাপতি (গ্রামীণ) ছিল। আমরা ওকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি। নিগ্রহের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক’ বলে বিজেপি দাবি করছে, তারা সামাজিক পরিষেবায় বিশ্বাসী ও তাদের দলে হিংসার কোনও জায়গা নেই।  

আদিবাসী নিগ্রহের এই ভিডিও শেয়ার করে বুধবার কমল নাথ তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, একজন বিজেপি নেতা চটি দিয়ে একজন আদিবাসীকে পেটাচ্ছেন। সঙ্গে তাঁর টিপ্পনী, মধ্য প্রদেশে বিজেপি এখন আদিবাসী নিগ্রহের পার্টি হয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কমলনাথের প্রশ্ন, ‘আপনি কী চাইছেন? আপনি যখন আদিবাসী নিগ্রহ বন্ধ করতে পারছেন না, তখন অন্তত মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিন।’ 

গত জুলাই মাসে সিধি জেলায় বিজেপি’র এক নেতা মদ্যপ অবস্থায় মানসিক প্রতিবন্ধী এক আদিবাসী ব্যক্তির উপর প্রস্রাব করছে। গোটা ঘটনাটাই ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। আর সেই ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। সিধির কুবড়ি বাজার এলাকার সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে কমল নাথ বলেন, আদিবাসী নিগ্রহের ঘটনায় মধ্য প্রদেশ শীর্ষে। তাঁর অভিযোগ, এখানে আদিবাসীদের উপর খুলে আম অত্যাচার চালাতে বিজেপি নেতা-কর্মীদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। 

অনগ্রসর ও দুর্বল মানুষ সম্পর্কে বিজেপি’র কী মনোভাব, তাই বারেবারে ধরা পড়ে নিগ্রহের ঘটনায়। কোথায় আদিবাসীর মুখে প্রস্রাব করা হচ্ছে। কোথায় জুতো মারা হচ্ছে। কোথায় দলিতকে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরানো হচ্ছে। কোথাও আবার দুই দলিত যুবককে মারধর করে মানববর্জ্য খেতে বাধ্য করা হচ্ছে। ঘটেই চলেছে পরের পর ঘটনা। 

কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালার অভিযোগ, ক্ষমতা পিপাশু বিজেপি’র নেতারা আদিবাসীদের বিরুদ্ধে অমানবাকিতার সমস্ত সীমা সীমা চাড়িয়ে গিয়েছে। বুধবার ভোপালে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি শিবরাজের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, দেশের মধ্যে মধ্য প্রদেশেই সবচেয়ে বেশি আদিবাসী মানুষের ভিড়। কিন্তু গত ১৮ বছরের বিজেপি শাসনে সেই আদিবাসীরাই অমানবিক অত্যাচার সহ্য করে চলেছেন। কংগ্রেস নেতার প্রশ্ন, বিন্ধ্যাচলে আদিবাসীদের উপর এত নিগ্রহের কারণ কী? সবকিছুই ঘটছে ওই ক্ষমতালোভী লোকগুলির জন্য। আর পুলিশ চুপ করে রয়েছে। যারা অপরাধ করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এখন বিজেপি উচিত শিক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে।’

আগের বার শিবরাজ ক্ষমাপ্রার্থনার লাইভ টেলিকাস্ট দিয়ে খানিকটা চাপা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও বিজেপি’র উচ্চ বর্ণের নেতা-কর্মীদের মনোভাব যে বদলায়নি পরের পর ঘটনায় স্পষ্ট। এবার সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে বহিষ্কার করে খানিকটা সামলাতে চাইছে বিজেপি। সঙ্গে প্রশাসন যে ব্যবস্থা নিচ্ছে তারও ঢেড়া পেটানো শুরু হয়েছে। আর চলছে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা। বিজেপি মুখপাত্র পঙ্কজ চতুর্বেদীর দাবি, দুই অভিযুক্তের মধ্যে একজন জীতেন্দ্র কুশওয়াহা তো কংগ্রেসের লোক। 

Comments :0

Login to leave a comment