এই সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ জ্বর, গায়ে ব্যাথার ওষুধ থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস এবং ব্লাড ক্যান্সার সহ সমস্ত স্তরের ওষুধের দাম বেড়েছে। কেন্দ্রীয় সারও রসায়ন মন্ত্রের অধীন ওষুধ বিষয়ক বিভাগটি এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
২৬ মার্চ ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি বা এনপিপিএ’র তরফে ওষুধের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। বলা হয়েছিল, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাইকারি মূল্য সূচক বা ডব্লিউপিআই’র সঙ্গে সংযুক্ত ন্যাশনাল লিস্ট অফ এসেনশিয়্যাল ড্রাগস বা অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় থাকা ওষুধের দামও বাড়বে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, গত আর্থিক বছরের তুলনায় পাইকারি মূল্য সূচক বৃদ্ধি পাবে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রকের অর্থনৈতিক উপদেষ্টার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাইকারি মূল্য সূচকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে ওষুধেরও দাম বাড়বে।
ওষুধ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মহলের বক্তব্য, ডব্লিউপিআই’র সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে, পাইকারি মূল্য সূচকের পুনর্মূল্যায়ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবার ওষুধের এমআরপি বা সর্বোচ্চ খুচরো বাজারের দাম বাড়তে থাকবে। ওষুধের দাম বাড়ানোর জন্য আলাদা করে সরকারি অনুমতি লাগবে না।
সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে ডাইক্লোফেনাকের মত পেনকিলার, আইবুপ্রোফেন, অ্যাজিথ্রোমাইসিনের পাশাপাশি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ড্রাই সিরাপ, অ্যাসাইক্লোভির’র মত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওষুধ, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সহ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সমস্ত ওষুধের দাম বেড়েছে ১ এপ্রিল থেকে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ওষুধের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনই ব্লাড ক্যান্সারের একটি ধরন ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকোমিয়ার ওষুধ বেন্ডামুসটাইন হাইড্রোক্লোরাইডের একটি শিশির দাম বেড়ে হয়েছে ৪৯৪৬ টাকা।
প্রসঙ্গত, ২০২২-২৩ আর্থিক বর্ষে ওষুধের দাম বেড়েছিল ১০ শতাংশ, এবং ২০২৩-২৪ সালে ওষুধের দাম বৃদ্ধির হার ছিল ১২ শতাংশ।
এই প্রসঙ্গে, সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘মানুষকে বোকা বানানোর দিনেই এক ধাক্কায় বাড়ল আটশো অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম। ওষুধ কোম্পানির থেকে নির্বাচনী বন্ডে কোটি কোটি টাকা তুলেছে বিজেপি-তৃণমূলের মত দলগুলি। দাম বাড়িয়ে বোঝা চাপানো হচ্ছে মানুষের ঘাড়ে। তোলাবাজি আর জালিয়াতি তো একেই বলে।’’
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ২০১১ সালে জাতীয় অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বা ন্যশনাল লিস্ট অফ এসেনশিয়াল মেডিসিনের তালিকা তৈরি হয়, এবং ২০১২ সালে তার ভিত্তিতে নতুন মূল্য নিয়ন্ত্রণ বিধি প্রস্তুত করা হয়, যা ২০১৩ সাল থেকে কার্যকর হয়। আইনে বলা হয়েছিল, প্রত্যেক বছর অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম ৫ শতাংশ হারে বাড়ানো যাবে। বাকিগুলো ১০ শতাংশ হারে বাড়বে।
এই আইনের ফাঁক ব্যবহার করেই ওষুধ কোম্পানিগুলিকে দাম বাড়িয়ে বিপুল মুনাফা করার সুযোগ করে দিয়েছে বিজেপি। একইসঙ্গে ২০২৩ সালে ১০ শতাংশ দাম বাড়ানো ছাড়াও পাইকারি মূল্য সূচকের সঙ্গে ওষুধের দামকে ট্যাগ করার নির্দেশও দেয় কেন্দ্র। একইসঙ্গে ওষুধের উপর লাগু হয়েছে ১২ থেকে ১৮ শতাংশ জিএসটি।
সেই থেকে এক নাগাড়ে দাম বাড়ছে ওষুধের। পকেটে টান পড়ছে সাধারণ মানুষের। যদিও ওষুধ কোম্পানিগুলিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ফলে এই কোম্পানিগুলির থেকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ৭৯৯.৬৬ কোটি টাকা ঢুকেছে বিজেপির তহবিলে।
Comments :0