Chandrachud

সিবিআই-ইডি’র ভূমিকা নিয়ে বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য চন্দ্রচূড়ের

জাতীয়

কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সিগুলির তল্লাশি অভিযান ও বাজেয়াপ্তের ক্ষমতার সঙ্গে ব্যক্তির গোপনীয়তা অধিকারের মধ্যে ‘সুক্ষ্ম ভারসাম্য’ বজায় রাখা উচিত বলেই মনে করেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। সাম্প্রতিককালে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কিংবা কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই)-র অতি সক্রিয়তার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার প্রধান বিচারপতির ওই মন্তব্য যথেষ্ঠ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বস্তুত, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে আরও সংযত হওয়ার ইঙ্গিতই স্পষ্ট হয়েছে তাঁর বক্তব্যে। তাঁর অভিমত, কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সিগুলির আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত সেই সমস্ত অপরাধের ক্ষেত্রে যা দেশের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য জনজীবনের শৃঙ্খলার পক্ষে বিপজ্জনক।
এদিন রাজধানী দিল্লিতে ২০তম ডি পি কোহলি স্মারক বক্তৃতায় যেভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা অধিকার বজায় রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন তা ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ নির্বাচনী বন্ডের কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ায় দেখা গিয়েছে, সিবিআই, ইডি এমনকি আয়কর হানার পর বহু সংস্থা শাসক বিজেপি’র তহবিলে ঘুরপথে অর্থ ঢালতে বাধ্য হয়েছে। আর তাতেই ‘সাত খুন মাফ’, যাবতীয় অভিযোগ ধুয়ে মুছে সাফ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি দিল্লি আবগারি কেলেঙ্কারির সেই অর্থে প্রধান পান্ডা ওষুধ ব্যবসায়ী পি শরৎচন্দ্র রেড্ডিকে ইডি গ্রেপ্তারের পর বিজেপি তহবিলে চাঁদা দিয়ে এখন দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। উলটে এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে গিয়েছেন। আর ওই মামলায় জেল খাটছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সহ তাঁর মন্ত্রীসভার আরও দুই সদস্য। এই রকম ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে শাসক বিজেপি’র বিরুদ্ধে।
কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সিগুলির কর্তব্য সম্পর্কে চন্দ্রচূড় এদিন বেশ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘ফৌজদারি ন্যায়বিচারের বাস্তবতায় তল্লাশি, বাজেয়াপ্তের সঙ্গে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা অবস্থানের সুক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখা অবশ্য কাম্য। এটাই হলো ন্যায্য এবং ন্যায্য সমাজের ভিত্তি।’ তাঁর মতে, ‘অনুসন্ধানমূলক অপরিহার্যতা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অবশ্য কর্তব্য।’ এপ্রসঙ্গেই দেশের পক্ষে বিপজ্জনক এমন অপরাধের অনুসন্ধানে জোর দেওয়া উচিত তদন্ত এজেন্সিগুলির বলে মন্তব্য করেন চন্দ্রচূড়। আবার এই ধরনের তদন্তের ক্ষেত্রে নিজেদের শক্তি, সামর্থ্য বাড়ানো উচিত বলেই মনে করছেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর ভাষায়, ‘অপরাধের নজিরবিহীন ব্যপ্তি ঘটেছে। ফলে সিবিআই’র মতো তদন্ত এজেন্সিগুলির শুধুমাত্র এআই প্রযুক্তির ওপর ভরসা না করে নিজেদের ক্ষমতা বা সামর্থ্য আরও বাড়ানোর প্রয়োজন আছে।’ কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সিগুলি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারছে না, উলটে শাসকগোষ্ঠী তাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে বলে এতদিন ধরে বিরোধীরা যে অভিযোগ করে আসছিল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে, এদিন প্রধান বিচারপতির ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যে তা অনেকটাই বৈধতা পেল বলেই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
এদিকে, নতুন তিন ফৌজদারি আইন এখনই কার্যকর না করে আরও খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেছেন আইনজীবীদের সংগঠন দিল্লি বার কাউন্সিলের সহসভাপতি, সম্পাদক এবং দুই সদস্য। এই তিন আইনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে বলে বার কাউন্সিল সদস্যদের তরফে চিঠিতে জানানো হয়েছে। চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কেও। তাঁরা মনে করছেন, এই তিন আইনের জেরে দেশে ‘পুলিশরাজ’ চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাঁরা উল্লেখ করেছেন যে, ‘নয়া আইনে পুলিশ হেপাজতের মেয়াদ ১৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ৯০ বা ৬০ দিন করা হয়েছে। ফলে হেপাজতে অত্যাচার ও হেনস্তা করার সুযোগ বেড়ে যাবে পুলিশের। পাশাপাশি হেপাজতের মেয়াদ বাড়ানো হলে সেই সময়কালে অভিযুক্তেরা জামিনও পাবেন না। ফলে হেপাজতে অত্যাচার ও হেনস্তা রুখতে আদালতের তৈরি ব্যবস্থাও কাজ করবে না।’ এরই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে এমন ধারার সংখ্যা বাড়ানো, ফৌজদারি মামলায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিচার ও প্রমাণ পেশের ক্ষেত্রেও নয়া আইনের বিধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, ১ জুলাই থেকে দেশে কার্যকর হবে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ও ভারতীয় সাক্ষ্য বিধি। এই তিনটি আইন যথাক্রমে ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি দণ্ডবিধি ও ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের পরিবর্তে চালু হবে।

Comments :0

Login to leave a comment