গত বছরের নভেম্বরে সিল্কিয়ারা-বারকোট সুড়ঙ্গ তৈরির সময় পাহাড় ধসে আটকা পড়েছিলেন ৪১ শ্রমিক। টানা ১৬ দিন আটকে ছিলেন তাঁরা। পরবর্তীকালে সরু সুড়ঙ্ক খুঁড়তে দক্ষ র্যাট মাইনার্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার করেছিলেন সেই শ্রমিকদের। সেই দুর্ঘটনার কবলে পড়া শ্রমিকরা হায়দরাবাদের নবযুগ গোষ্ঠীর সংস্থা নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের হয়ে কাজ করছিলেন। ২০১৮’তে এই সংস্থার দপ্তরে হানা দিয়েছিল আয়কর বিভাগ।
নির্বাচনী বন্ডের তথ্য বের হতেই ধরা পড়েছে দলের তহবিলে টাকা দিয়ে সরকারি কাজের বরাত পেয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। উত্তরাখণ্ডের সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গেও সেই একই যোগসাজশ লক্ষ্য করা হয়েছে। বস্তুত বিভিন্ন বড় প্রকল্পের বরাত পেয়েছে বিভিনন সংস্থা টাকা দিয়েছে বিজেপি-কে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অন্য রাজনৈতিক দল টাকা পেয়েছে। তবে সিংহভাগই গিয়েছে বিজেপি’র দখলে। নবযুগের বিভিন্ন সংস্থাই তহবিলে টাকা দিয়েছে আয়কর, ইডি বা কেন্দ্রীয় সংস্থার হানার পর। টাকা দেওয়ার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছে তদন্ত।
সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে দুর্ঘটনায় বিশেষজ্ঞরা হিমালয়ের ভঙ্গুর অঞ্চলে পাহাড় কেটে চারধাম প্রকল্পের মতো নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছিলেন ফের। নরেন্দ্র মোদী সরকারের অন্যতম বহুল প্রচারিত প্রকল্প হল চারধাম সড়ক প্রকল্প। এই প্রকল্প অনুযায়ী, হিন্দুধর্মের চার প্রধান ধামকে একসুতোয় বাঁধা হবে।
কেবলমাত্র চারধাম পথ নয়, উত্তরাখন্ডের পাহাড় কেটে তৈরি হওয়া ঋষিকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেলপথ নির্মাণের টেন্ডারও পেয়েছে নবযুগ গোষ্ঠী। এর পাশাপাশি গঙ্গার উপর সেতুনির্মাণ, উত্তর কাশ্মীরের সড়ক সংযোগ মজবুত করতে বানিহাল পাস বরাবর কাজিগুন্ড-বানিহাল হাইওয়ে নির্মাণও করেছে এই সংস্থা।
বর্তমানে নাগপুর-মুম্বই সম্রুদ্ধি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে কয়েক দফায়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এর একটা অংশ উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদী। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে নবযুগ।
কিন্তু নবযুগের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ইচ্ছা কতটা আন্তরিক, আর কতটা জোর করে আদায় করা, সেই প্রশ্নও উঠছে। তার কারণ, ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর এই সংস্থার দিল্লির অফিসে হানা দেয় আয়কর বিভাগ। তার ঠিক ৬ মাসের মধ্যে, ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিজেপিকে ৩০ কোটি টাকা অনুদান দেয় এই সংস্থা।
কেবলমাত্র নবযুগ গোষ্ঠী নয়, নির্বাচনী বন্ডে বিজেপিকে ২২৬ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে বেদান্ত গোষ্ঠী। বেদান্ত গোষ্ঠী মূলত আকরিক উত্তোলন করে থাকে। ছত্তিশগড়, ওডিশা, ঝাড়খন্ডে অরণ্য ধ্বংস করে খনি তৈরির অভিযোগ রয়েছে সংস্থার বিরুদ্ধে। ওডিশার নিয়মগিরিতে আদিবাসী মানুষের আপত্তি অগ্রাহ্য করে বক্সাইট খনি তৈরি করছে বেদান্ত।
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, সংস্থার অধিকাংশ খনির ক্ষেত্রে নিয়মের বাইরে গিয়ে পরিবেশ ছাড়পত্র মিলেছে বিভিন্ন সরকারের তরফে। ছাড়পত্র দেওয়ার বদলে যে বিপুল পরিমাণে আর্থিক লেনদেন হয়েছে, সেই জল্পনা ছিলই। এবার প্রত্যক্ষ ভাবে প্রমাণিত হল।
সরকারি প্রকল্পের টাকা জোগায় কোষাগার, যার উৎস জনতার আয়। শেষ পর্যন্ত জনতাকেই আর্থিক গুনাগারও দিতে হয়। যার বিরুদ্ধে সরব সিপিআই(এম)।
Comments :0