জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছে শান্তিপ্রিয় মানুষ। তাঁরাও মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সারা রাজ্যের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে নৃশংস হামলাকে ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি নিহতদের শ্রদ্ধা জানিয়ে মিছিল হয়। পহেলগামে বর্বরোচিত সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার কলকাতায় কেন্দ্রীয় প্রতিবাদ মিছিল হবে বামফ্রন্টের। বিকেল পাঁচটায় ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির সামনে থেকে মিছিল শুরু হবে, শেষ হবে শিয়ালদহে।
পহেলগাতে সন্ত্রাসবাদীদের বর্বরোচিত হামলাকে ধিক্কার জানিয়ে ও নিহত মানুষদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বৃহস্পতিবার বারাকপুর ষ্টেশনের সামনে থেকে মিছিল বারাকপুর শহর পরিক্রমা করে। কাচড়াপাড়ার লিচুবাগান থেকে মিছিল গান্ধীমোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে নিহতদের শ্রদ্ধার সাথ স্মরণ ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন সিপিআই(এম) উওর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সদস্য দেবাশীষ রক্ষিত সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। বীজপুর -পানপুর গ্রাম এলাকার জেঠিয়ায় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। নৈহাটি পার্টি অফিসের সামনে থেকে মিছিল অরুবিন্দ রোড হয়ে ষ্টেশনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গনস্বাক্ষর সংগ্রহ হয়। এই মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন পার্টি নেতা মলয় ভট্টাচার্য, সিপিআই(এম) উওর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সদস্য ইন্দ্রানী কুন্ডু মুখার্জি, দেবজিত ব্যানার্জি সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। শ্যামনগর পার্টি অফিসের সামনে থেকে মিছিল শ্যামনগর শহর পরিক্রমা করে। এই মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন সিপিআই(এম) উওর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সদস্য সোমনাথ সরকার সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
এদিন বারাসত, মধ্যমগ্রাম সহ সর্বত্র ‘সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার’ বিরুদ্ধে এবং সর্বত্র সম্প্রীতি ও ঐক্য রক্ষার দাবিতে মিছিল হয়েছে সিপিআই (এম) এরিয়া কমিটি ও বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে। মিছিলে সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দাবির সঙ্গে জঙ্গিহানায় নিহতদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করা হয়েছে। বারাসত পূর্ব দক্ষিণ এরিয়া কমিটির মিছিল এদিন বারাসত লরি স্টান্ড থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা করে। বারাসত থানার সামনে বিক্ষোভ প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টিনেতা পলাশ দাশ, পুলক কর, দিলীপ সাহা প্রমুখ। এদিন বারাসত আদালত চত্বরে অল ইন্ডিয়া ল’ ইয়ার ইউনিয়নের মিছিল আদালত চত্বর পরিক্রমা করে। মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন পার্টিনেতা অনুপ দে। এদিন মধ্যমগ্রামে বামফ্রন্টের মিছিল আরতি সিনেমা হলের সামনে থেকে শুরু হয়ে শ্রীকৃষ্ণ সিনেমা হলের সামনে শেষ হয়। এছাড়াও সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি বারাসতের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সোমা দাশ, রুনু ব্যানার্জি, স্মৃতি কর প্রমুখ। তাঁরা এই নৃশংস হামলার প্রতিবাদ জানান। এছাড়া দেগঙ্গা, স্বরূপনগরে প্রতিবাদসভা হয়। বক্তব্য রাখেন দেবাশিস দত্ত, মন্টু আলম মণ্ডল। এদিন সিপিআই(এম)’র ডাকে বারাকপুর স্টেশনের সামনে থেকে মিছিল বারাকপুর শহর পরিক্রমা করে। কাঁচড়াপাড়া, নৈহাটি, শ্যামনগর, বীজপুরে মিছিল হয়। এছাড়াও ইছাপুরের মানিকতলা, পলতা, নবাবগঞ্জ, কালীতলা পর্যন্ত মিছিল হয়। প্রতিটি মিছিলে পার্টির নেতৃবৃন্দ ছাড়া কর্মী-সমর্থকরা ছিলেন। অন্যদিকে, বরানগর, কামারহাটিতেও প্রতিবাদ, ধিক্কারসভা, মিছিল হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সোনারপুর উত্তরের গড়িয়া স্টেশন এলাকায়, মধ্য যাদবপুর, যাদবপুর দক্ষিণ, হালতু, বিষ্ণুপুরের আমতলায়, ডায়মন্ডহারবার, বামনঘাটা, মহেশতলার পুরাতন ডাকঘর, মগরাহাট, গোসাবা, কুলতলি, সরিষা, কাকদ্বীপ, নামখানা সহ বিভিন্ন জায়গায় ধিক্কার মিছিল, প্রতিবাদসভা হয়। এছাড়াও এদিন অল ইন্ডিয়া ল’ইয়ার্স ইউনিয়ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির উদ্যোগে আলিপুরে ধিক্কার মিছিল শেষে প্রতিবাদসভা হয়। বক্তব্য রাখেন গৌতম চ্যাটার্জি, চন্দ্রজিৎ চ্যাটার্জি, শুভজিৎ দত্ত প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন ইন্দুভূষণ দাস।
এদিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর ও বালিসাই, দেউলি হাটে ধিক্কার মিছিল হয়। পথসভায় বক্তব্য রাখেন পার্টিনেতা আশিস প্রামাণিক, সুখরঞ্জন গিরি, সব্যসাচী জানা, প্রদীপ দাস, রমাপতি মিশ্র, অপরদিকে জেলার মারিশদা ৩ ব্লকে বামফ্রন্টের নাচিন্দা বাজারে প্রতিবাদ ধিক্কার মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন পার্টিনেতা পিনাকীরঞ্জন দাস, কালীপদ শীট, হিমাংশু পণ্ডা, আশিস পণ্ডা, প্রতাপ দাস প্রমুখ। নীলপুরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়। কাঁথির মুকুন্দপুর বাজারে ধিক্কার মিছিল হয়। কাশ্মীরে নিহত পর্যটকদের স্মৃতির পথে শ্রদ্ধা জানিয়ে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আহ্বান জানিয়ে হলদিয়ার দেভোগ অঞ্চল, সিটি সেন্টার, দুর্গাচক মঞ্জুশ্রী, মহিষাদল, নন্দীগ্রাম সহ হলদিয়া মহকুমা জুড়ে মিছিল হয়। এছাড়াও খেজুরি, হেঁড়িয়া, পাশকুড়ায় ধিক্কার মিছিল হয়। মিছিল থেকে শান্তি, সম্প্রীতি, ঐক্য রক্ষার আহ্বান জানানো হয়। অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সর্বত্র ধিক্কার মিছিল, সভা হয়। সিপিআই(এম), এসএফআই, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, যুব ফেডারেশনের কর্মীরা পথে নেমে প্রতিবাদে শামিল হন। জেলার ঘাটাল, দাসপুর, কলোড়া, গোপীগঞ্জ, দাঁতন, খরিদা, মালঞ্চ, ইন্দা, পিংলা, জলচক, মোহাড়, সবং, শালবনী, কেশিয়াড়ী, বেলদায় সিপিআই(এম) এর ধিক্কার মিছিল, প্রতিবাদ সভা হয়।
এদিন সিপিআই(এম) হাওড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে 'বিভেদ নয়, ঐক্য চাই' বিভাজনের রাজনীতি বিরুদ্ধে সম্প্রীতি মিছিল হয় উলুবেড়িয়া শহরে। মিছিলটির উদ্বোধন করেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। মিছিল শুরুর আগে সিপিআই(এম) পলিটব্যুরোর সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেন,‘‘ যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করতে আসে তাদের মুখের ওপর বলে দিতে হবে আপনাদের নোংরামি আমরা মানবো না। এই জবাব ধর্ম নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের দিতে হবে।’’
মিছিলটি উলুবেড়িয়া স্টেশন থেকে শুরু হয়ে বাজারপাড়া, নোনা, গরুহাটা, উলুবেড়িয়া কলেজ হয়ে মহকুমা শাসকের অফিসের সামনে শেষ হয়। মিছিলের শেষে উলুবেড়িয়া মহকুমা শাসকের অফিসের সামনে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) হাওড়া জেলা কমিটির সম্পাদক দিলীপ ঘোষ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপর্ণা পুরকাইত, সাবিরউদ্দিন মোল্লা। সভা পরিচালনা করেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য পরেশ পাল। এছাড়াও মিছিলে উপস্থিত ছিল পার্টির হাওড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জয়ন্ত মুখার্জি, নবীন ঘোষ, মহেন্দ্র রায়। উদ্বোধন করতে গিয়ে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য আরো বলেন, ‘‘মন্দিরের সন্ধ্যা আরতি হয়, মসজিদে আজান হয়। এই হচ্ছে আমাদের বাংলা। বিজেপি তৃণমূলের নোংরা ও সংকীর্ণ রাজনীতি আজকে বাংলার পরিবেশকে নষ্ট করেছে। এই নোংরা প্রচেষ্টার একমাত্র জবাব হলো মানুষের ঐক্য।’’
এদিন হুগলী জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ধিক্কার মিছিল, সভা হয়। ডানকুনি ইয়ার্ড থেকে দিল্লি রোডের চৌমাথা পর্যন্ত ধিক্কার মিছিল হয়। শুরুতে বক্তব্য রাখেন পার্টি নেতা মানিক সরকার। এছাড়া, কোন্নগর থেকে বনগ্রাম পর্যন্ত মিছিল হয়। মিছিল হয়, কামারপুকুর, আরামবাগ শহর, খানাকুল, রাজহাটি বাজার, কাবলে, পুরশুড়া, ধনিয়াখালি, ব্যান্ডেল, বৈদ্যবাটি, শ্রীরামপুর, বলাগড়, মশাট, জিরাট। উত্তরপাড়া মিছিলের শেষে বক্তব্য রাখেন পার্টিনেতা শ্রুতিনাথ প্রহরাজ। এছাড়া, মগরা, চণ্ডীতলা বাজারে ধিক্কার মিছিল হয়। চণ্ডীতলায় প্রতিবাদসভায় বক্তব্য রাখেন রজতাভ রায়। অন্যদিকে, এদিন নদীয়া জেলার গয়েশপুর, শান্তিপুর, রানাঘাট, মদনপুর, হরিণঘাটা, নবদ্বীপ, চাপড়া সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সিপিআই(এম)’র ডাকে মিছিল হয়।
Comments :0