Post editorial

বদলে যাচ্ছে দৈনন্দিন চাহিদার বাধ্যবাধকতা

উত্তর সম্পাদকীয়​

সাত্যকি রায়


মানুষের প্রয়োজনীয়তার পরিসর ক্রমাগত বদলাচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় নমুনা সমীক্ষার গৃহস্থালি ভোগ ব্যয় সম্পর্কিত রিপোর্ট তারই ইঙ্গিত বহন করছে। সাধারণভাবে বলা যেতে পারে কোন দেশের মাথাপিছু আয় যত বৃদ্ধি পাবে সেই দেশের মাথাপিছু ব্যক্তিগত খরচের অংশে খাদ্য বাবদ খরচের পরিমাণ আনুপাতিক হারে কমতে থাকবে। সহজ কথায় বলতে গেলে আমাদের দেশের গরিব মানুষদের মাথাপিছু খরচের ৬০ শতাংশের বেশি খাদ্যদ্রব্য কিনতে ব্যবহৃত হয়। সেখানে আমাদের দেশের উচ্চবিত্তেরা তাদের মোট আয়ের মাত্র ২০ শতাংশ খাদ্য বাবদ ব্যয় করে থাকে। একারণেই খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে গরিব মানুষ ধনীদের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো গত কয়েক দশক ধরে আমাদের দেশে গড় মাথাপিছু ব্যক্তিগত খরচের মধ্যে খাদ্যের অংশ ক্রমাগত কমছে। এবং এই পরিবর্তন প্রায় সব শ্রেণির লোকের মধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধু তাই নয় খাদ্য বাবদ খরচের মধ্যে ভাত রুটি ইত্যাদি সিরিয়ালের পিছনে খরচের অংশ ক্রমাগত কমেছে।
২০১০-১১ সালের নমুনা সমীক্ষার পর প্রায় ১২ বছর বাদে ২০২২-২৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার গৃহস্থালী ভোগ ব্যয় সম্পর্কিত রিপোর্ট পেশ করে এবং ২০২৩-২৪ সালের নমুনা সমীক্ষা রিপোর্টও সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এর মাঝখানে একটি নমুনা সমীক্ষা সরকার করিয়েছিল সেই রিপোর্ট অনুযায়ী গৃহস্থালী ব্যয় কমে গেছে এই তথ্য উঠে আসছিল বলে সম্ভবত সেই রিপোর্ট শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। এই বছরের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী গড় ভারতীয় গৃহস্থের মাসিক মাথাপিছু ভোগ ব্যয় গ্রামে গত বছরের ৩৭৭৩ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এবছর ৪১২২টাকা হয়েছে। শহরে এই মাথাপিছু ভোগ ব্যয় গত বছরের ৬৪৫৯ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৯৯৬ টাকা হয়েছে। এর অর্থ হলো চলতি মূল্যে গ্রামীণ ক্ষেত্রে ৯.২৫ শতাংশ ও শহুরাঞ্চলে ৮.৩১ শতাংশ খরচ বৃদ্ধি। কিন্তু গড়ে ৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি এবং খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে প্রায় ৯ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি গণনার মধ্যে রাখলে আসলে সাধারণ মানুষের গৃহস্থালী খরচ বৃদ্ধির পরিমাণ বিশেষ একটা হয়নি বললেই চলে। সরকার এপ্রসঙ্গে এও দাবি করেছে যে গৃহস্থালী খরচের নিরিখে বৈষম্য সামান্য হলেও কমেছে। যদিও খেয়াল করলে দেখা যাবে যে দেশের উপরের দিকের পাঁচ শতাংশ মানুষের গৃহস্থালী মাথাপিছু মাসিক খরচ সবচাইতে দরিদ্র পাঁচ শতাংশ মানুষের প্রায় ছয় গুণ। সেটা অবশ্য আপাতদৃষ্টিতে  বিশাল কোনও ফারাক বলে মনে হচ্ছে না এবং সেটাই স্বাভাবিক তার প্রধান কারণ হলো মানুষের আয় যে গতিতে বৃদ্ধি পায় তার সমানুপাতে গৃহস্থালী খরচের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না। অর্থাৎ মানুষ যত ধনী হবে নতুন আয় সংযোজনের যে অংশ খাদ্য, বস্ত্র ও অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসে খরচ হবে তা আনুপাতিকভাবে ক্রমাগত কমে যাবে। অন্যদিকে সাধারণভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যে সমস্ত জিনিস গরিব মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল, আয়বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার অনেকগুলোই ধীরে ধীরে ব্যবহার্যের তালিকায় সংযোজিত হতে থাকে। এর ফলে আয়ের বৈষম্য দ্রুতগতিতে বাড়লেও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসের জন্য খরচের ব্যবধান তার চাইতে অনেক কম হয়। সাধারণভাবে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সম্পত্তির ভিত্তিতে বৈষম্য সবচাইতে বেশি হয়ে থাকে, আয় বৈষম্য তার চাইতে কম হয় এবং ভোগ ব্যয়ের ভিত্তিতে বৈষম্য শুধু এই দুই ধরনের বৈষম্যের চেয়ে কম হয় তাই নয় তা সাধারণত কমতে থাকে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ২০১১-১২ সালে গ্রামীণ পরিবারের মাথাপিছু খরচের ৫৩ শতাংশ খাদ্যের পেছনে খরচ হতো যা ২০২৩-২৪ সালে কমে হয়েছে ৪৭.০৪ শতাংশ। মনে রাখা দরকার যে গত কয়েক বছর ধরে সাধারণ মূল্য সূচকের চাইতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বেশি হারে। অর্থাৎ যদি মূল্যবৃদ্ধি সাধারণভাবে সব জিনিসের একই হারে ঘটত গৃহস্থালী খরচে খাদ্যের অংশ আরও কম হয়ে যেত। এই পরিবর্তন ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে ঘটে চলেছে। এর প্রধান কারণ দুটি। এক গ্রামাঞ্চল এবং শহরেও উৎপাদন ক্ষেত্রে কায়িক শ্রমের ব্যবহার ক্রমাগত কমে এসেছে। চাষের কাজেও মেশিনের ব্যবহার বাড়ছে ফলে দৈহিক প্রয়োজনে মাথাপিছু খাদ্যের চাহিদার পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসছে। কিন্তু সাধারণভাবে খাদ্যদ্রব্যের খরচ কমলে মানুষের ব্যয়ের তালিকায় যে অংশের খরচ বাড়ে তা হলো শিল্পজাত দ্রব্য অর্থাৎ জামাকাপড়, বাসন, আসবাব, সাইকেল, ঘড়ি, স্কুটার, টিভি, গাড়ি ইত্যাদি। এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা কিছুটা মিটে যাওয়ার পর মানুষ পরিষেবার পেছনে ব্যয় করতে শুরু করে। বিমা, শেয়ার, নানাধরনের বিনিয়োগ, বিনোদন সম্পত্তি কেনা ইত্যাদির চাহিদা বাড়তে থাকে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো আমাদের দেশে সরকারি তথ্য অনুযায়ী মোট ব্যক্তিগত ব্যয়ের ৫০ শতাংশের বেশি যায় পরিষেবার পেছনে। এটা আশ্চর্যের তার কারণ এই ধরনের খরচের প্রকৃতি উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশগুলি যেখানে মাথাপিছু আয় অনেক বেশি সেখানে হওয়ার কথা। কিন্তু অনেক কম মাথাপিছু আয়তেও পরিষেবার এই চাহিদা বৃদ্ধি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ কথা ঠিক মানুষ খাদ্যের পেছনেও যে টাকা খরচা করছে তাতে চাল, গম ইত্যাদি বাবদ খরচ তুলনামূলকভাবে কমে আসছে। শাক, সবজি, মাছ, মাংস ইত্যাদিতে খরচ বাড়ছে। কিন্তু আসল প্রশ্নটা হলো মানুষের শিল্পজাত পণ্যের চাহিদা এতটাই কি মিটে গেল যে গড় ভারতীয় পরিবারের পরিষেবার চাহিদা বাড়তে শুরু করে দিল?
এ প্রসঙ্গে ব্যয়ের প্রকৃতির বেশ কিছু পরিবর্তন নজরে আনা প্রয়োজন। প্রথমত, দেশে আয় বৈষম্য যদি বাড়ে তাহলে গড় ভোগব্যায়ের ধরন বড়লোকেদের খরচের প্রকৃতির দ্বারা বেশ কিছুটা প্রভাবিত হতে পারে। যাদের খাদ্যবস্ত্র বাসস্থান দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস গাড়িবাড়ি ইত্যাদির চাহিদা অনেকটাই মিটে এসেছে তারা তাদের সংযোজিত আয়ের বেশির ভাগটাই ব্যবহার করবে বিনোদন অথবা নানা ধরনের ফিনান্সিয়াল অ্যাসেট কেনার পেছনে। উচ্চবিত্তদের পরিষেবার এই চাহিদা বৃদ্ধি গড় ভারতীয় পরিবারের খরচের অনুপাতটিকেও প্রভাবিত করবে। কিন্তু দেশে কি ধনীদের সংখ্যা এতটাই বেশি যে তাঁদের দ্বারাই গড় ভারতীয়র খরচের প্রকৃতি নির্ধারিত হবে? আসলে দেখা দরকার যে নিম্নবিত্ত গরিব মানুষের খরচের প্রকৃতিও বেশ কিছুটা পরিষেবার পেছনে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না। একটু গভীরে গিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে গত দুই দশক ধরে আমাদের দেশের গরিব নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের চিকিৎসা,  শিক্ষা, কমিউনিকেশন এবং বিনোদনের পেছনে খরচ দ্রুতগতিতে বেড়েছে। এর একটা বড় কারণ হলো চিকিৎসা ও শিক্ষা এই দুই ক্ষেত্রেই সরকারি ব্যবস্থাপনা ক্রমাগত দুর্বল হয়েছে। সরকারি নীতির কারণেই এই পরিষেবা ক্রমাগত বাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফলে মানুষকে নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা কিনতে হচ্ছে। বিভিন্ন সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী শিক্ষার খরচের একটা বড় অংশ হলো টিউশনি বাবদ খরচ। গরিব ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের পেছনে বাবা মায়েরা আশা নিয়ে এই খরচ করছেন। সরকারি এবং বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার করুণ অবস্থার কারণেই এই খরচ আবশ্যিক হয়ে পড়ছে। অতীতে যা উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এখন নিম্নবিত্ত পরিবারগুলিতেও এই খরচ বাড়ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপার্জনে সক্ষম করে তোলার উদ্দেশ্যে শিক্ষার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং তার জন্য সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও সম্ভাব্য খরচ করতে তারা রাজি। স্বাস্থ্য পরিষেবার মধ্যে সবচাইতে বড় খরচ হচ্ছে ওষুধ কেনার খরচ এবং ডাক্তারদের ফি। গত কয়েক দশকে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বিভিন্ন জিনিস কেনার জন্য ইএমআই পিছু খরচ দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে সবস্তরের মানুষই ঋণের সুযোগ নিতে চাইছেন। অতীতে যে আয়ের পরিবারগুলি টেলিফোন ব্যবহার করত অর্থাৎ এই পরিষেবার প্রয়োজনীয়তা যে আয়ের অংশের মানুষের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যেত আজকে তার চাইতে অনেক কম আয়ের মানুষ প্রতিদিন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। সমাজের সমস্ত ধরনের যোগাযোগ এমন কি অর্থনৈতিক লেনদেন, সরকারি অনুদান গ্রহণ বা অন্য কোনও ধরনের ডিজিটাল ট্রানজাকশন করার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠছে মোবাইল ফোন। গরিব নিম্নবিত্ত মানুষের মোবাইল ফোন বাবদ খরচ গত সাত বছরে ৩৬ শতাংশেরও বেশি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কথা ঠিক যে ইন্টারনেট বাবদ খরচ এখন গরিব মানুষের ক্ষেত্রে ধনীদের তুলনায় অনেক কম কিন্তু যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে মোবাইল ফোনের ব্যবহার গ্রাম ও শহরকে অনেক কাছাকাছি এনে দিয়েছে। এমনকি বিনোদন বাবদ খরচ বিশেষত বিউটিপার্লার ইত্যাদির পেছনে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মাথাপিছু খরচ দ্রুত গতিতে বেড়েছে তা বিভিন্ন সমিক্ষায় উঠে এসেছে।
সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা দ্রুতগতিতে বদলাচ্ছে। এই পরিবর্তনের কিছুটা বাধ্যতামূলক অর্থাৎ সরকারি ব্যবস্থাপনা দুর্বল হওয়ার কারণে ঘটছে, কিছু ক্ষেত্রে তা প্রযুক্তিজনিত আবার অনেক ক্ষেত্রেই তা সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবর্তনজনিত কারণে ঘটে চলেছে। যারা সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিয়োজিত তাদের অবশ্যই এই পরিবর্তনকে বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে। পঞ্চাশ বছর আগে ‘রুটি কাপড়া মাকান’ এই শব্দবন্ধে গরিব নিম্নবিত্ত মানুষের যে প্রয়োজনীয়তার প্রকাশ ঘটতো আজ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক এবং কাঙ্ক্ষিতও বটে। সমাজে আর্থিক বৈষম্য যদি আরও কম হতো তাহলে এই পরিবর্তনের ছবি আরও দ্রুততার সাথে বদলের প্রবণতা দেখা যেত।
ধ্রুপদী অর্থনীতিবিদরা বিশেষ করে ম্যালথাস বা রিকারডো শ্রমের মজুরিকে ন্যূনতম জীবনধারণের মানে দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থির ধরে নিয়েছিলেন। উভয়েরই ধারণা ছিল ওই স্থির মজুরিতে শ্রমের জোগানের কোনও সমস্যা থাকবে না। তারা জনসংখ্যার ওঠা নামার ভিত্তিতে মজুরি নিয়ন্ত্রণের ধারণাটি গড়ে তুলেছিলেন। কোনও একটা সময় রসদ বা খাদ্যশস্যের সীমিত জোগান  মজুরি বাড়িয়ে তুলতে পারে এটাই ছিল রিকার্ডোর প্রধান আশঙ্কা। এই জন্যেই তিনি বিদেশ থেকে কম দামে খাদ্যশস্য আমদানির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। মার্কসের বক্তব্য ছিল মজুরি নিয়ন্ত্রণের পুঁজিবাদী রাস্তাটি আদৌ জনসংখ্যার উপরে ওঠা বা পড়ার উপরে নির্ভরশীল নয়। বরং মজুরি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পুঁজিবাদ সর্বদা শ্রমের মজুত বাহিনীকে জিইয়ে রাখবে। কিন্তু মার্কসের মজুরির ধারণাটি প্রাকৃতিক প্রয়োজনীয়তার আধারে গড়ে ওঠেনি। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রয়োজনীয়তার ও প্রসার ও প্রকৃতগত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এই প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী মজুরির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা শ্রেণি সংগ্রামের অন্যতম অভিব্যক্তি। প্রয়োজনীয়তার প্রসার স্বীকার করে নিয়ে পুঁজিপতিরা এমনি এমনি শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে দেয় না। এর জন্য লড়াই করেই তা অর্জন করতে হয়। মার্কস সে কারণেই বলেছিলেন যে মানুষ শুধু কি খাচ্ছে বা পড়ছে সেটাই সভ্যতার মাপকাঠি নয় সে কিভাবে খাচ্ছে, সেই নান্দনিক প্রক্রিয়া আসলে উন্নত সভ্যতার একটি বস্তুগত পরিবর্তনকে সূচিত করে। তাই শ্রমিকের মজুরির ন্যূনতম মাত্রা নির্ধারণে যে উপাদান ও পরিমাপগুলিকে পঞ্চাশ বছর আগে আবশ্যিক মনে করা হতো তা পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম জরুরি। সঙ্গে সঙ্গে এটাও খেয়ালে রাখা দরকার খরচের বাধ্যবাধকতার প্রকৃতিও বদলে যাচ্ছে। গৃহস্থালি ব্যয়ের তথ্য দেখলেই বোঝা যায় যে কোভিডের সময় বহু ভোগ্যপণ্য কেনার পরিমাণ কমে এলেও ইএমআই বাবদ খরচ প্রায় অপরিবর্তিত থেকেছে। চিকিৎসা ও শিক্ষার খরচ সব পরিবারেই এখন প্রায় আবশ্যিক খরচের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এই বাস্তবতার নিরিখেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দাবিদাওয়া গণসংগ্রামের মূলস্রোতে জায়গা করে নিচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যের শাসকদলগুলি এই বাস্তবতা অনুধাবন করছে এবং কম খরচে উন্নতমানের শিক্ষা ও চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিয়ে গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হচ্ছে। নিম্নবিত্ত, গরিব মেহনতি মানুষের প্রয়োজনীয়তার পরিবর্তনগুলি গণনার মধ্যে রেখেই অধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগঠিত করা জরুরি।

Comments :0

Login to leave a comment