Salim

ভয় দেখিয়েও আর সন্ত্রাসের জমি ফিরে পাবে না তৃণমূল :সেলিম

রাজ্য

 সন্দেশখালিতে গিয়ে আক্রান্ত মহিলাদের পাশে দাঁড়ানোয় ডিওয়াইএফআই নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানিয়ে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, পুলিশের নির্লজ্জ বাধা ভেঙে ওরা সন্দেশখালির আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন। ওদের বাহবা জানাই। 
শুধু তাই নয়, মিথ্যা মামলায় বন্দি সিপিআই(এম) নেতা নিরাপদ সর্দারকে আদালত থেকে মুক্ত করে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি বসিরহাটে ডিওয়াইএফআই’র অভিযানে তিনি নিজে অংশ নেবেন বলে ঘোষণা করেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, যত অন্যায় হয়েছে তার বিরুদ্ধে মানুষ বেরিয়ে আসছেন, ইনসাফ যাত্রা তাঁদের সাহস জুগিয়েছে। আনিস খানকে বাড়িতে গিয়ে খুন করে আসা পুলিশও এখন অসহায়, তৃণমূল নেতারাও মানুষকে ভয় দেখিয়ে আর সন্ত্রাসের জমি ফিরে পাবে না। 
শনিবারই সন্দেশখালিতে গিয়ে আক্রান্ত মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেছেন ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি এবং রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা সহ নেতৃবৃন্দ। মহম্মদ সেলিমের মতে, পুলিশ লুটেরাদের অবাধে যেতে দিচ্ছে, আর যুব নেতানেত্রীদের আটকানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে, তাঁদের ভরসা জুগিয়ে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন। মীনাক্ষীরা এসপি অফিসে গিয়ে ২৩ জনের লিখিত অভিযোগ দিয়ে পুলিশের চোখে চোখ রেখে বলে এসেছে যে চার দিন পরে আবার যাবে, তার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে আমরা ঐ অভিযোগ নিয়ে হাইকোর্টে যাবো। এই পুলিশ তৃণমলী আপদদের পাহারা দিয়ে নিরাপদ সর্দারকে মিথ্যা মামলায় জেলে রেখেছে, আগামী শুনানিতেই আদালত তাঁকে মুক্তি দেবে বলে আমরা আশা করি। আমি নিজে নিরাপদকে নিয়ে ২৯ ফেব্রুয়ারি যুবদের বসিরহাট অভিযানে যাব।
লাল কালিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পোস্টার লিখে প্রতিবাদে নামা সন্দেশখালির মহিলাদেরকে ‘বিজেপি’ বলে অপবাদ দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। সেলিম এর প্রতিবাদ করে বলেছেন, বিজেপি তো ‘জয় শ্রী রাম’ বলে ভাগাভাগি করে। সন্দেশখালিতে মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদে নেমেছেন। লাল কালিতে পোস্টার লেখা মহিলাদের আমরা লাল সেলাম জানাই। তৃণমূলের হাতে নির্যাতনের পরে সন্দেশখালির মহিলাদের আবার এই দ্বিতীয় অপমানের অধিকারকে দিয়েছে ডায়মন্ডহারবারের সাংসদকে? তৃণমূলের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই ওরা বিজেপি এবং সিপিআই(এম) এক হয়েছে বলে, আর বিজেপি’র অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই ওরা তৃণমূল এবং সিপিআই(এম) এক হয়েছে বলে। এটাই তৃণমূল এবং বিজেপি’র খেলা। 
সেলিমের হুঁশিয়ারি, কামদুনিতে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী দলের বিধায়ক সব্যসাচীকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। তিনি টাকা ঢেলে ফিস্ট আর টুর্নামেন্ট করে কামদুনির মানুষের মুখ বন্ধ করানোর সিস্টেম চালু করেছিলেন। কিন্তু সন্দেশখালি দেখিয়ে দিচ্ছে, ঐ পদ্ধতি আর চলবে না, বাংলার মানুষ এবার হিসাব বুঝে নেবে। 
আগামী ১০ মার্চ তৃণমূল ব্রিগেডে যে সমাবেশের ঘোষণা করেছে সেই সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, পুলিশ, প্রশাসন, সরকারি বাস আর কাটমানির টাকা ছাড়া তৃণমূলের এখন ব্রিগেড সমাবেশ দূরের কথা কোনো জমায়েত করার মুরোদ আছে? পুলিশের ডিজি, এসপি সঙ্গে না থাকলে তৃণমূলের নেতারা সন্দেশখালি ঢুকতে পারছে না, ওরা করবে মানুষের সমাবেশ! এই অমানুষদের মুখে ‘মানুষ’ কথাটাই বেমানান। 
সন্দেশখালিতে পুলিশ দিয়ে এবং ব্রিগেড সমাবেশের মধ্য দিয়ে তৃণমূলের ড্যামেজ কন্ট্রোল হবে কিনা সাংবাদিকদের সেই প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, পুলিশ আর গুন্ডা দিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোল হয় নাকি! আগে ড্যামেজটা করল কে সেটা স্বীকার করুক। কারা সন্দেশখালির মানুষকে ভয় দেখিয়ে জমি ভেড়ি থেকে, ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে? কারা টাকা লুটেছে? ভোটের আগে ‘বাংলা তার মেয়েকে চায়’ বলে ভোটের পরে কারা পার্টি অফিসে ‘বাংলার মেয়েদের চাই’ বলে টেনে নিয়ে গেছে? মুখ্যমন্ত্রী চুপ করে আছেন কেন এখনও? কেন সন্দেশখালির সিট’এর তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করছে না?
তৃণমূলের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক থেকে সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি যেভাবে সন্দেশখালির অপরাধীদের দায় ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলতে চাইছে সেই সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেছেন, শুধু সন্দেশখালি নয়, সারা রাজ্যে তৃণমূলের বাহিনীকে লুটের ইজারা দিয়েছে কে? আগে শুভেন্দু মুকুল এই বাহিনীকে নিয়োগ করতেন, এখন অভিষেক নিয়োগ করেছেন শাহজাহান শিবুদের। বালু জেলে যাওয়ার পরে এই পার্থ ভৌমিককে সন্দেশখালিতে লুটের সাম্রাজ্য চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। লুটের টাকা এদের মাধ্যমেই কালীঘাটে যায়। কে কাকে ঘাড় থেকে নামাবে? 
আদালতের কারণে শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না বলে অভিষেক ব্যানার্জির সাফাইকে উড়িয়ে দিয়ে সেলিমের বক্তব্য, ডাহা মিথ্যা। অপরাধীদের বাঁচাতে এভাবেই মুখ খুলতে হচ্ছে তৃণমূলের নেতাদের। যার বিরুদ্ধে মহিলাদের অত্যাচারের মারাত্মক অভিযোগ তাকে তো জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল। তার বদলে প্রতিবাদী নিরাপদ সর্দারকে জামিন অযোগ্য ধারা দিয়েছে। এখন আদালত দেখাচ্ছেন, অভিষেক নিজেই তো আদালতের বেঞ্চ থেকে বেঞ্চে ছুটে রক্ষাকবচ নিয়েছেন। আগে জবাব দিক পুলিশ কেন সন্দেশখালির মানুষের জমি দখলের, মহিলাদের নির্যাতনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়নি? তার জন্যই তো মানুষের রোষ। 
সেলিম বলেন, সন্দেশখালি সহ এরাজ্যে তৃণমূলের লুটেরাদের বিরুদ্ধে মানুষের রোষকে বিজেপি বাংলাদেশী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রোষ বলে চালাতে চাইছে। তার মানে ওরা অপরাধীদের তৃণমূলী চরিত্র আড়াল করতে চাইছে। এভাবেই অভিষেক ব্যানার্জির অপরাধ আড়াল করতে তাঁর নাম বালি পাচার কয়লা পাচার কাণ্ডের থেকে বাদ রেখেছে। 
একশো দিনের কাজের টাকা, আবাসের টাকা আদায়ের জন্যই নাকি তৃণমূলের ব্রিগেডের সমাবেশ। এমন কথা শুনে সেলিম বলেছেন, তার জন্য তো ওদের দিল্লিতে যাওয়ার কথা ছিল। দিল্লিতে গিয়ে সাতদিন লুকিয়ে ছিলেন অভিষেক ব্যানার্জি, অধিবেশন চললেও সংসদে যাননি, আরএসএস’র কাছে আশ্রয় খুঁজছিলেন। আর তারপর থেকেই মোদীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় এজেন্সি তাঁর বিরুদ্ধে চুপ করে গিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment