Delhi car accident girl killed row

দিল্লির ঘটনা, নিছক একটি মৃত্যু নয় পুলিশের চরম নিষ্ক্রিয়তার ছবি

জাতীয়

বাবা মারা গিয়েছেন প্রায় ৯ বছর আগে। পাঁচ ছোট ছোট ভাইবোনের দায়িত্ব ছিল তাঁরই কাঁধে। ইভেন্ড ম্যানেজমেন্টের (Event Management)কাজ করে সংসার চালাতো। পাশাপাশি চলছিল লেখাপড়াও। আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই নাচ-গান করতে ভালো বাসতে। সাজতেও খুবই পছন্দ করত। কিন্তু ২০২৩’র সূর্য্যদয় আর তার দেখা হল না। দিল্লির রাস্তায় মদ্যপ অবস্থায় বেপোরোয়া গাড়ির চাকা শুধু পিষেই দেয়নি, ১৩ কিলোমিটার (13 km)তার দেহ টেনে নিয়ে যায় গাড়ির চালক। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর মা কোনও মতে সংসার চলাতেন। একটু বড় হওয়ার পরেই মায়ের সঙ্গে সংসারের হাল ধরেন। ছোট ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়ায় যাতে বাধা না আসে তাই একটি বিউটি পার্লারে কাজ শুরু করেন তরুণী। দুর্ভাগ্যবশত লকডাউনে সে কাজটা চলে যায়। তারপর কনে সাজানোর কাজ শেখেন। বিভিন্ন ইভেন্ড ম্যানেজমেন্টে কাজ করতে থাকেন। সঙ্গে কনেও সাজাতেন আবার পাশে ছোট একটি বিউটি পার্লারেও কাজ করতেন বাড়তি আয়ের জন্য। পরিবারটির কাছে তরুণীর মৃত্যু শুধু একটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং সর্বস্ব হারানোর সমান।

মেয়ের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার মা। মেয়ের মৃতদেহ শনাক্ত করার সময় সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। জ্ঞান ফেরার পর শুধু আওড়ে গেছেন কতগুলো কথা। ‘আমার ছোটো মেয়েটা তো কতো সুন্দর দেখতে ছিল। ওরা কি করে আমার মেয়েটাকে মেরে রাস্তায় ফেলে গেল। শরীরে এতো ক্ষত। এতো কষ্ট দিল আমার সোনা মেয়েটাকে।’

ঢুলু ঢুলু চোখে স্টিয়ারিং হাতে শহরের বুক চিরে ছুটছে গাড়ি। পুলিশের দেখা নেই। বর্ষবরণ বলে কথা। একদিকে কুয়াশা অপরদিকে নেশাতুর চোখ ঠাওর করতে পারেনি তরুণীর স্কুটিকে। সুলতানপুরির কাছে সজোরে ধাক্কা মারে তাতে। স্কুটিতে ছিল আরও দুই তরুণী গাড়ির ধাক্কায় দুজনেই ছিটকে পড়ে যায়। একজনের পা আটকে যায় গাড়ির নিচে। হয়তো তখনও প্রাণে বেঁচে ছিলেন। কিন্তু বেহুশ গাড়ির চালক সেখান থেকে দ্রুত গতীতে গাড়ি ভাগিয়ে নিয়ে যায়। রাস্তার ঘর্ষণে তার জামা কাপড় ছিড়ে যায় শরীরে আঘাত লাগতে থাকে। হয়তো প্রবল ব্যাথা যন্ত্রনাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশের বয়ানেই উঠে আসে সে কথা। মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশ জানায় মাথা, মেরুদন্ডে, শরীরের পেছনের দিকে নিম্নাঙ্গে প্রবল আঘাতের জেরেই মৃত্যু হয়েছে তরুণীর। পুলিশ সক্রিয় থাকলে হয়তো এই ঘটনাই ঘটতো  না। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য আগেই পুলিশে হাতে ধরা পড়তে পারত।

গাড়ির চালক পুলিশকে জানিয়েছে সে বুঝতে পেরেছিল গাড়ির নিচে কিছু আটকে আছে। কিন্তু গাড়ির বাকি সওয়াররা তাকে দ্রুত গতীতে গাড়ি ছোটাতে বলেন। কানঝাওয়ালা পর্যন্ত এভাবেই ছোটে গাড়ি। প্রতক্ষ্যদর্শী ততক্ষনে ফোনে পুলিশকে জানানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কোথায় পুলিশ। রাত দুটোর ঘটনা পুলিশ আসে ভোর চারটের পরে। চালক ‘বিজেপি’ কর্মী পুলিশ প্রথমে অভিযোগই দায়ের করতে চায়নি। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ে কার্যত মামালা শুরু করে পুলিশ। তদন্ত যত এগোচ্ছে তত নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে। মঙ্গলবার জানা যায় চলন্ত গাড়ির ভেতরেই চলছিল মদ খাওয়ার আসর। তরুণীকে স্কুটিতে ধাক্কা মারার আগে পর্যন্ত মদের আসর জারি ছিল। 

নির্ভয়া থেকে এই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা দিল্লি বারবার তুলে আনে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার চিত্র। 

Comments :0

Login to leave a comment