Argentina

আর্জেন্টিনাকে ‘ফেভারিট’ বলতে রাজি নন মেসিই

খেলা

অন্যরা মনে করলেও এখনই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ‘ফেভারিট’ বলতে রাজি নন লিওনেল মেসি নিজেই। এক সাক্ষাৎকারে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক তা স্পষ্ট করে বলেছেন, ইউরোপীয় দলগুলির বিরুদ্ধে আমরা খুব বেশি খেলিনি। এটা ঠিক যে আমরা ভালো অবস্থায় আছি কিন্তু মানুষের উন্মাদনার ফাঁদে পড়ে নিজেদের ফেভারিট ভাবার ভুল করা উচিত হবে না। বাস্তববাদী হতে হবে, এক এক করে পা ফেলতে হবে। 
তাহলে কারা মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে? মেসি বলেছেন, চোট-আঘাতের সমস্যা সত্ত্বেও ফ্রান্সের দল খুব ভালো। ব্রাজিলে দারুণ সব খেলোয়াড় আছে, উপরন্তু নেইমার আছে। বিশ্বকাপে ওদের দল খুব ভালো। স্পেন হচ্ছে এমন একটা দল যারা নিজেদের খেলার ধরন সম্পর্কে স্পষ্ট। তারা বিপক্ষকে দৌড় করায়, বল নিয়ে বেরিয়ে যায়, খুবই ভালো মানের খেলোয়াড় রয়েছে। একজন-আধজন না, অনেকে। বিপক্ষ যেই হোক, একই খেলা ওরা সব ম্যাচে খেলে। 
এই সাক্ষাৎকারে বার্সেলোনায় তাঁর কৈশোরের দিনগুলির কথা বলেছেন মেসি। ১৩ বছর বয়সে তিনি আর্জেন্টিনা থেকে বার্সেলোনার ট্রায়ালে এসেছিলেন। লা মাসিয়ায় ঢোকার পরে পরিবর্তন সম্পর্কে মেসি বলেছেন, ব্যক্তিগত ভাবে এবং ফুটবলের দিক থেকে অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়ে গেল। আর্জেন্টিনায় আমি শুধু দৌড়োতাম, বল নিয়ে খেলতাম কম। বার্সায় সব অনুশীলনেই বল নিয়ে খেলতে লাগলাম। প্রথম ছ’মাস কঠিন ছিল। নিয়মের ফাঁকে খেলতে পারিনি। তারপর চোট পেয়েছিলাম। একদিন বাবা জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমি দেশে ফিরে যেতে চাই কিনা। বললাম, না। কঠিন সময়কে মানিয়ে নিতে শিখেছিলাম। 
তারপর দ্রুত উত্থানের কাহিনি বিশ্ব ফুটবল জানে। সিনিয়র দলেও খেলানো হলো। মেসি বলেছেন, দলে তখন রোনাল্ডিনহো, এটো, মার্কোয়েজ। জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে ম্যাচ সবই পালটে দিল। রোনাল্ডিনহো, ডেকো, মোতা, সিলভিনহো, জাভি, পুয়োল প্রথম থেকেই আমাকে তাঁদেরই একজন বলে ভাবতে শুরু করল। যেভাবে আমাকে তারা গ্রহণ করেছিল তা দারুণ। ওই রকম ড্রেসিংরুমে স্বাভাবিক হয়ে মিশে যাওয়া কম কথা নয়। 
এরপর পেপ গুয়ার্দিওলার সময়পর্ব। মেসি বলেছেন, দল হিসাবে তিনি আমাদের গড়ে তোলেন। এক প্রজন্মের অসাধারণ প্লেয়ার তাঁর হাতে ছিল। আমরা যে কোনও জায়গায় খেলতে পারতাম, জানতাম জিতব। কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, জানতাম। যন্ত্রণাদায়ক হারও ছিল কিন্তু আত্মবিশ্বাসের কোনও অভাব ছিল না। গুয়ার্দিওলার সময়ে এত সহজে, এত স্বাভাবিক ভাবে আমরা খেলতাম যে আমরা ঠিক কী করে ফেলছি নিজেরাও বুঝিনি। সময় পেরিয়ে যাবার পরে বুঝেছি কতটা অভিনব খেলা খেলেছি। 
গুয়ার্দিওলার মাথা কীভাবে কাজ করত, তা বোঝাতে উদাহরণ দিয়েছেন মেসি। বলেছেন, একবার আমি বাড়িতে ছিলাম। পেপ ডেকে পাঠালো। বলল, রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে আমাকে ফলস নাইন খেলতে হবে। আমরা কী কী করব তা বুঝিয়ে দিলেন। ওই ম্যাচে অঁরি যে গোল করল তা একেবারে হুবহু আগে থেকে বলে দিয়েছিলেন পেপ। 
পেপকেই সর্বশ্রেষ্ঠ কোচ মনে করেন মেসি। এমনকি আরও বেশিদিন যে তিনি তাঁর অধীনে খেলেননি তা নিয়ে তাঁর আক্ষেপ আছে। এইসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, পেপ ফুটবলের ‘ক্ষতি’ করেছেন। সকলেই তাঁর স্টাইলে খেলতে চায়, আমরা যেভাবে খেলতাম তা নকল করতে চেয়েছে। ‘আমি বল পায়ে পেতে ভালোবাসি। জাভি, ইনিয়েস্তা, বুসকেটসের পাশে খেলতে ভালোবাসতাম। ওরা খেলা কত সহজ করে দিত’, সোনার দিনগুলির স্মরণে তাঁর মন্তব্য। 
আর্জেন্টিনার বর্তমান ম্যানেজার লিওনেল স্কালোনিকেও ’খুব ভালো কোচ’ বলে মনে করেন মেসি। তাঁর মন্তব্য, ব্যক্তিত্ব হিসাবে স্কালোনি বিশেষ। তাঁর সবচেয়ে ভালো গুণ কথা বোঝাতে পারেন। খেলার ধরন সম্পর্কে কে কী বলল তা নিয়ে মাথা ঘামান না, বিশ্বাস করে খেলান। খেলোয়াড়দের যেভাবে পরিচর্যা করেন তার ফলেই দল আজ এখানে দাঁড়িয়েছে। 
তবে, এই সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ফুটবলের বিকাশ সম্পর্কে মেসির পর্যবেক্ষণ। তাঁর ভাষায়, ‘ফুটবল অনেকটা পালটে গেছে। এখন কোনও প্লেয়ার পাওয়া মুসকিল যে অন্য রকম, যে সাধারণের বাইরে। কেননা খুব অল্প বয়স থেকেই একটি বিশেষ ধরনে তাকে খেলতে বাধ্য করা হচ্ছে। সেটিই সমস্যা। ফুটবলে আরও আরও ট্যাকটিকাল হয়ে উঠবে। এখন দেখা যাচ্ছে কোনও বড় প্লেয়ার ছাড়াই যে কোনও দল যে কোনও দলকে সমস্যায় ফেলে দিচ্ছে। কেননা ট্যাকটিকালি ভালো খেলছে, সংগঠিত পদ্ধতিতে খেলছে। অসাধারণ খেলোয়াড় দেখতে পাওয়া কঠিনতর হয়ে পড়বে।’
 

Comments :0

Login to leave a comment