Post editorial

নির্বাচিত আইসিসি’র দাবিতে লড়াই ‘নো পাসারন’

উত্তর সম্পাদকীয়​

দীধিতি রায়


পশ্চিমবঙ্গের বুকে প্রথমবার শিক্ষাক্ষেত্রে আইসিসি (Internal Complaint Committee on Sexual Harassment) নির্বাচন হতে চলেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসএফআই’র আন্দোলনের কারণে নির্বাচন করতে সম্মত হয়। পরবর্তীতে দু’দফার মিটিঙের পর আগামী ৩ মার্চ নির্বাচনী বিধি ও সময়সূচি সহ এই নির্বাচনের দিন ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি দেন। 
আর জি করের ঘটনার পর প্রায় ৬ মাস অতিক্রান্ত। তিলোত্তমার খুন ও ধর্ষণের পর রাজ্য-দেশ এক অভূতপূর্ব গণজাগরণের সাক্ষী হয়েছিল, যা এখনও জারি রয়েছে। এক স্বতঃস্ফূর্ত রাজনৈতিক সংগ্রাম চলছে রাষ্ট্রের পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর বিরুদ্ধে, তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এই আন্দোলনের মূলত দুটি অক্ষ। একদিকে যেমন দুর্নীতি-দুষ্কৃতীরাজের সাথে প্রশাসনের যে আঁতাত তার বিরুদ্ধে, আর অন্যদিকে সমাজের গভীরে বহমান পিতৃতান্ত্রিক ধারণা ও মনোভাবের বিরুদ্ধে। এই দুটি অক্ষ পরস্পরকে সম্পৃক্ত করেই এগচ্ছে।
আর জি করের ঘটনায় একজন চিকিৎসক পড়ুয়া তাঁর নিজেরই শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্ষিত ও খুন হন। যার ফলে ক্যাম্পাসের ভিতর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কার্যত নেই বলা চলে। ঠিক সেই কারণেই এই আন্দোলনের তীব্রতা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কিছু গুণগত বদলের দাবিকে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। আর সেই দাবি থেকেই ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিসরকে পুনর্স্থাপিত করার কথা বারবার উত্থাপিত হচ্ছে। ছাত্র সংসদের নির্বাচনের পাশাপাশি ক্যাম্পাসের ভিতর যৌন হেনস্তা রুখতে এবং লিঙ্গ সংবেদনশীল ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে, এসএফআই সহ ছাত্র সমাজ কার্যকরী আইসিসি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে।
আইসিসি’র দায়িত্ব
আইসিসি মানে কর্মক্ষেত্রে বা প্রতিষ্ঠানে যৌন হেনস্তা সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (Internal Complaint Committee on Sexual Harassment)। কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে যৌন হেনস্তা রুখে সংবেদনশীলতা, সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্যই এই কমিটি। ‘সক্ষম’ (SAKSHAM) নির্দেশিকা অনুযায়ী মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ক্যাম্পাসের ভিতর সারা বছর ধরেই নানা ধরনের লিঙ্গসংবেদনশীল কর্মশালা ও কর্মসূচির আয়োজন করার উদ্দেশ্যেই এই কমিটি গঠন। পাশাপাশি সকল লিঙ্গের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষার্থীদের প্রতি সংগঠিত সকল লিঙ্গভিত্তিক হিংসার ঘটনায় দৃঢ় পদক্ষেপ করাও এদের অন্যতম দায়িত্ব। প্রান্তিক লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের প্রতি যৌন হয়রানির ঘটনাকে কোনোভাবেই রেয়াত করা নয় (No Tolerance), এই ভূমিকা নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকার কথা আইসিসি’র। এই সংক্রান্ত অভিযোগ এলে সেক্ষেত্রে কী করণীয়, সেই বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজনের দায়িত্বও এদেরই। যে কোনও প্রতিষ্ঠানের ভৌগোলিক সীমানার ভেতরে ঘটা যে কোনও যৌন হেনস্তার ঘটনা এবং সেই সম্পর্কিত ঘটনা যদি ওই নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানার বাইরেও ঘটে এবং তা যদি ওই প্রতিষ্ঠানের কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বারাও ঘটে, সেই সব ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে সঠিক পদ্ধতিতে তদন্ত করা এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য বদ্ধপরিকর থাকবে আইসিসি, এটাই নির্দেশিকা। 
আইসিসি’র গঠন 
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আইসিসিতে প্রিসাইডিং অফিসার হিসাবে থাকবেন একজন মহিলা অধ্যাপিকা সহ দু’জন শিক্ষক, দু’জন শিক্ষাকর্মী, একজন এনজিও কর্মী। এরা প্রত্যেকেই মনোনীত। এছাড়া নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি থাকবে স্নাতকস্তর, স্নাতকোত্তরস্তর ও গবেষণাক্ষেত্র থেকে। সদস্যদের ৫০% মহিলা হতেই হবে।  
আইসিসি গঠনের ইতিহাস 
এই কমিটি গঠনের ইতিহাসটিও জানা বিশেষভাবে জরুরি। ভানওয়ারী দেবী (সাধারণত ধর্ষিতাদের নাম উল্লেখ করা উচিত নয়, কিন্তু তিনি একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মূলে ছিলেন, তাই তার নামটি উল্লেখ করা হলো) ছিলেন রাজস্থানের ভাটেরী অঞ্চলের সরকার নিযুক্ত একজন কর্মী। ১৯৯২ সালে তিনি রাজস্থান সরকারের নারী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করার সময় একটি গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান রামকিরণ গুজ্জরের ৯ বছরের নাবালিকা মেয়ের বিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন। শুধুমাত্র এই কারণেই উনি রামকরণ গুজ্জর ও তার পাঁচ বন্ধুর দ্বারা ধর্ষিত হন। অদ্ভুতভাবে আদালত অভিযুক্তদের ছাড় দিয়ে দেয় কারণ, প্রথমত গ্রামের লোকেরা প্রভাবশালী রামকরণ গুজ্জরের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি, আর দ্বিতীয়ত রামকরণ গুজ্জররা উচ্চবর্ণের হিন্দু ছিল। তাই বিচিত্র যুক্তিতে আদালতে ধরে নেওয়া হয় যে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নিম্নবর্গের মানুষকে স্পর্শ করে না, ফলে এক্ষেত্রে ধর্ষনের ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়। মূলত বিচারব্যবস্থার ব্রাহ্মণ্যবাদী পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার ফলে ছাড় পেয়ে যায় রামকিরণ গুজ্জর সহ বাকি অভিযুক্তরা।
পরবর্তীতে বিভিন্ন মহিলা গোষ্ঠী, এনজিও একসাথে ‘বিশাখা’ নামে একটি মঞ্চ গড়ে নিজেরা সংগঠিত হয়ে মামলা করে রাজস্থান সরকারের বিরুদ্ধে। ১৯৯৭ সালে ‘বিশাখা অর্গানাইজেশন ভার্সেস রাজস্থান স্টেট’ মামলায় বিশাখা নির্দেশিকা প্রকাশিত হয় সুপ্রিম কোর্টের তরফে। বিশাখা নির্দেশিকা ছিল ভারতবর্ষের বুকে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্তার বিরুদ্ধে প্রথম পথ প্রদর্শক!
এর পরেই ১৯৯৮ সালে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশাখা গাইডলাইন মেনে ক্যাম্পাসের ভিতর যৌন হেনস্তা রুখতে একটি কমিটি তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সভায়। তাদের প্রস্তাব এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল মেনে নিয়ে ১৯৯৯ সালে জিএসক্যাশ (Gender Sensitisation Committee Against Sexual Harassment) তৈরি হয় সেখানে। এরপর এই মডেলকে সামনে রেখে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাসে জিএসক্যাশ গঠনের কথা বলা হয়। অবশ্য বর্তমানে সেখানে এর অস্তিত্ব নেই, বরং আরএসএস নিয়ন্ত্রিত কর্তৃপক্ষ একটা লোক দেখানো কমিটি করে, সব ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে।
২০১৩ সালে দিল্লির নির্ভয়ার ঘটনার স্মৃতি এখনও দগদগে। সেই ঘটনার পর ‘পশ আইন’ (Prevention of Sexual Harassment Act, Prevention. Prohibition and Redressal) পাশ হয়। মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হেনস্তা রুখতে এটি ভারত সরকারের প্রথম আইন। বিশাখা গাইডলাইন এর উপর নির্ভর করেই এই আইন তৈরি করে ভারত সরকার। এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (UGC)  ‘Saksham’ নির্দেশিকা প্রকাশ করে ২০১৩ সালে। এই গাইডলাইন জিএসক্যাশ মডেলকে সামনে রেখে এবং পশ আইনের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল। এর অব্যবহিত পরেই ২০১৫ সালে ইউজিসি প্রথম আইন প্রণয়ন করে ক্যাম্পাসের ভিতর যৌন হয়রানি রুখতে আইসিসি তৈরির নির্দেশ দেয়। অর্থাৎ ১৯৯২ সালে রাজস্থানের ঘটনার পর থেকে বহু লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিসি তৈরি একটি বাধ্যতামূলক আইনে পরিণত হয়।
রাজ্যে আইসিসি’র পরিস্থিতি
২০১৫ সালে আইন করে ইউজিসি আইসিসি গঠনের কথা বললেও তা এ রাজ্যে খাতায় কলমেই রয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই সমগ্র পূর্ব ভারতেও প্রথম আইসিসি ইলেকশন হতে চলেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে এসএফআই কর্মীরা দীর্ঘ আন্দোলনের পর এই অধিকার ছিনিয়ে এনেছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষের সাথে শিক্ষার্থীদের সভায় কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ উঠে না আসায় এসএফআই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান শুরু করলে বাকি অন্যান্য মেকি বাম, তৃণমূল, আরএসএস’র ছাত্র সংগঠন ‘শালকু ট্রিটমেন্ট টু এসএফআই’ হুমকি দিয়ে দেওয়াল লেখে। বাম মুখোশ পরা অথচ তীব্র দক্ষিণপন্থী একটি সংগঠন, শহীদ পার্থ বিশ্বাসের পরিণতি করার হুমকি দেয় এসএফআই কর্মীদের।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও আইসিসি ইলেকশন এবং ছাত্র সংসদের  নির্বাচনের দাবি নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করছে এসএফআই’র কর্মীরা। সেখানেও স্বাধীন নামধারী অথচ তৃণমূল আরএসএস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এক প্রাক্তন ছাত্রের বিরুদ্ধে এসএফআই কর্মী সহ সাধারণ ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করার ঘটনা ঘটেছে কয়েকদিন আগেই। অর্থাৎ এই ক্যাম্পাসগুলোতে আইসিসি নিষ্ক্রিয়তার ফলে যৌন নিগ্রহকারীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজগুলোর আইসিসির অবস্থাও একইরকম। কয়েকটি ডিগ্রি কলেজের ওয়েবসাইটে গিয়ে আইসিসি’র আপডেট অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়, আইসিসি মেয়াদের তিন বছরে মিটিং হয়েছে মাত্র দুটো, আর অভিযোগ জমা পড়ার সংখ্যা শূন্য। অথচ রাজ্যের কলেজগুলোতে যৌন হেনস্তার ঘটনা প্রায়শই খবরে আসে। এর অর্থ এই আইসিসিগুলোকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে।  শিক্ষার্থীরা জানেই না, এরকম কোনও কমিটি আছে যেখানে যৌন হেনস্তা সংক্রান্ত অভিযোগ জানানো যায়। যার ফলে ক্যাম্পাসগুলো ধর্ষক, নারী নিগ্রহকারী ও উত্ত্যক্তকারীদের বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে গেছে। আর তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ইউনিয়ন এই নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটবে, এটাই স্বাভাবিক। অপরদিকে আরএসএস’র ছাত্র সংগঠন এবিভিপি ক্যাম্পাসে নারীর অধিকার, নিরাপত্তা এসব নিয়ে কথা বলবে, এটা ভাবাই অমূলক। মনুবাদী আদর্শে চলা এভিবিপি ধর্ষকদের সমর্থনে মিছিল করে, আর তৃণমূল ধর্ষিতার চরিত্র বিশ্লেষণ করতে বসে। তাই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ অথবা এভিবিপি’র যে আইসিসি নিয়ে মাথাব্যথা থাকবে না, সেটাই স্বাভাবিক। আর যেসব ছাত্রসংগঠন নিজেদের ‘স্বাধীন’ বা ‘অরাজনৈতিক’ বলে দাবি করে, তারাও আসলে তৃণমূল এবং বিজেপি’র সেফটি ভালভ হিসাবেই কাজ করে। ফলে আইসিসি নির্বাচনের দাবি জানানোর আন্দোলন করায় তারা এসএফআই কর্মীদের খুন করার হুমকি দিচ্ছে।
কেন নির্বাচিত আইসিসি 
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিসি নির্বাচনের দাবির কারণ, প্রথমত ছাত্র প্রতিনিধিদের নির্বাচন করা ইউজিসি’র আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয়ত, আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ উপাচার্য, ডিন, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধানরা থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধিকারিক বা প্রধানরা থাকতে পারবেন না। অথচ আর জি করের ক্ষেত্রে আমরা দেখলাম আর জি করের প্রিন্সিপাল নিজেই আইসিসি সদস্য। যার ফলে আইসিসি বৈধতা হারায়। বেশিরভাগ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে, আইসিসি সঠিক প্রক্রিয়ায় কাজ করে না।
তৃতীয়ত, ইউজিসি আইনে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে ‘হেনস্তা’ বলতে কী কী বোঝায়। মৌখিকভাবে হেনস্তা (Verbal Abuse), অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ (Slut Shaming), নিগৃহীতকে দোষারোপ (Victim Blaming) এর মতো ঘটনাকে আইনে উল্লেখ করা সত্ত্বেও বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইসিসি তা গ্রহণ করছে না। কিন্তু তিলোত্তমার ঘটনায় আমাদের মূল দাবিই ছিল নিগৃহীতাকে দোষারোপ করাকেও অপরাধের আওতায় আনতে হবে। 
চতুর্থত, ইউজিসি’র আইনে ‘ক্যাম্পাস’ এর সঠিক সংজ্ঞা দেওয়া আছে। অর্থাৎ কোথায় কোথায় হেনস্তার ঘটনা ঘটলে সেইগুলো আইসিসি’র তদন্তের আওতায় আসবে, তা উল্লেখ করে দেওয়া আছে। কিন্তু এই রাজ্যের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা, অনেক কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিসি হস্টেলের ঘটনাকে গ্রহণ করতে চায় না।
পঞ্চমত, আমরা জানি এই ধরনের ঘটনা ঘটলে বেঁচে থাকা নিগৃহীতাকে কী পরিমাণ মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়! ক্রমাগত হুমকি, লজ্জাজনক পরিস্থিতির শিকার হওয়ার কারণে বেশিরভাগ সময়ে তারা শারীরিক মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এই কারণেই আমরা আইসিসিতে একজন মনোবিদকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছি। আইসিসিতে একজন আইনজীবি থাকাও প্রয়োজন, কারণ মূল আইনে বলা হয়েছে, অভিযোগকারী চাইলে পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাবার ক্ষেত্রেও আইসিসি-কে যথাসম্ভব সাহায্য করতে হবে।
আমরা যে সমাজে জন্মেছি, বড় হয়েছি সেই সমাজ আদ্যোপান্ত পিতৃতান্ত্রিক। ফলত এই সমাজব্যবস্থায় প্রতিদিন আমাদের লিঙ্গ সংবেদনশীলতা সম্পর্কে চর্চা করতে হয় এবং সেই সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আইসিসি’র ভূমিকা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কাজে একমাত্র নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরাই এই কাজে কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, মনোনীতরা ভয় পেতে পারে। তাই অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি এই সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু তা নিয়ে সরকার এবং শিক্ষামন্ত্রীর টালবাহানা গত সাত বছর ধরে দেখে আসছি আমরা। যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিসি থাকা বাধ্যতামূলক ইউজিসি’র আইন অনুযায়ী, তাই রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ে আইসিসি গঠনের দাবিকে আশু আদায়যোগ্য দাবি হিসাবে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। ছাত্র সংসদের দিন ঘোষণা করার জন্য লড়াইয়ের পথে যেতেই হবে।  
এই লড়াইয়ের মাঠে ধর্ষনকামী মানসিকতার দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে যারা ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীদের ‘শালকু ট্রিটমেন্ট’ বা ‘শহীদ পার্থ বিশ্বাস’ করে দেওয়ার’ হুমকি দেয়, তাদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা, যদি ক্যাম্পাসকে ধর্ষক-মলেস্টার-এবিউজার ফ্রি করার জন্য আমাদের শহীদ হতে হয়, তাহলে আমাদের কাছে তা গর্বের, দায়িত্বের। কিন্তু যারা নিজেদের প্রগতিশীল, ‘বিপ্লবী’ বলে দাবি করে ক্যাম্পাসের ভেতরেই অন্য সংগঠনের ছাত্রীদের নিগ্রহ করে, হুমকি দেয় তাদের রাজনৈতিক দৈন্যতা আমাদের উদ্বিগ্ন করে এবং তাদের শাসকদলের আনুগত্য প্রকাশের প্রতিযোগিতা ছাত্র সমাজকে হতাশ করে। 
সকল লিঙ্গের সব শিক্ষার্থী শিক্ষক শিক্ষাকর্মীর যৌন হেনস্তা রোখার এই লড়াইয়ে তাই ‘নো পাসারন’।

 

Comments :0

Login to leave a comment