GANASHAKTI EDITORIAL

সুযোগ এসেছে চোর তাড়ানোর

সম্পাদকীয় বিভাগ

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP

অনেকগুলি গুরুতর প্রশ্ন, অস্বচ্ছতা, উদ্বেগ রেখে আচমকা ঘোষণা করা হলো রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। নতুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পদে নিযুক্ত হবার পর ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই এত বড় মাপের একটা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা অর্থ গোটাটাই আগে থেকেই তৈরি করা ছিল। সর্বমোট ৭০ হাজার আসনের জন প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য প্রায় ৬২ হাজার ভোট কেন্দ্র ৫.৬৭ লক্ষ ভোটারের ভোট গ্রহণ করা মামুলি বিষয় নয়। 

সরকার আগে থেকেই সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখেছিল। নতুন কমিশনার এসে সেগুলি ঘোষণা করেছেন মাত্র। বহুদলীয় গণতন্ত্রে নির্বাচনে সরকার বা কমিশনের এক তরফা সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের দ্যোতক নয়। নির্বাচনটা যেভাবেই হোক শাসক দলকে জেতানোর জন্য নয়। নির্বাচন ভোটারদের মতদানের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে পরিপূর্ণ ভাবে যুক্ত হবার সুযোগ দেওয়া। 

নির্বাচনে আসল প্রস্তুতি সেটা যেখানে জনগণ, প্রশাসন, পুলিশ ও কমিশন পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল থাকে। বাস্তবে সবসময় সার্বিক আস্থা তৈরি না হলেও কমিশনকে সেই চেষ্টা করতে হয়। এক্ষেত্রে নির্ঘণ্ট তৈরি বা প্রস্তুতি পর্ব সারার আগে সর্বদলীয় বৈঠক করে সকলের বক্তব্য শুনতে হয়।


এরাজ্যে তৃণমূলী গণতন্ত্রে সেসবের বালাই নেই। কোনও রকমে নমো নমো করে একটা ভোট করতে পারলেই হলো। তাতেই গণতন্ত্রের ধ্বজা উড়িয়ে দেওয়া যাবে। নির্বাচন শান্তিতে ও অবাধে করা যাবে কিনা, প্রত্যেক ভোটার নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন কিনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইচ্ছুক প্রত্যেক নাগরিক কোনও রকম বাধা, হুমকি, ভীতি ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কিনা, জয়ী হবার পর স্বাধীনভাবে সমর্থন বা বিরোধিতার অধিকার পাবেন কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলি তৃণমূলের গণতন্ত্রের অভিধানে নেই। 

তৃণমূল চায় যেভাবেই হোক তাদের জিততে হবে। একজন বিরোধীকেও জেতার সুযোগ দেওয়া যাবে না। বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত তারা চায় বাধাহীন, প্রশ্নহীন লুটতরাজের জন্য। এরজন্য তারা অভিযান শুরু করে মনোনয়ন দাখিলের দিন থেকে। যেভাবেই হোক বিরোধীদের মনোনয়ন জমা আটকানো হবে। তারপর যারা মনোনয়ন জমা দেবে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করাবে জোর করে। এভাবে তাদের লক্ষ্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেশির ভাগ আসনে জয়ী হওয়া।

অতঃপর যেখানে ভোটারদের তাড়িয়ে নিজেরাই ছাপ্পা ভোট দিয়ে জিতবে। এই গোটা প্রক্রিয়ায় শাসক দলের সবচেয়ে সহায়কের ভূমিকা পালন করে প্রশাসন, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এটাই ছিল নির্মম অভিজ্ঞতা। এবার হুবহু তার পুনরাবৃত্তি না হলেও নতুন কিছু কলাকৌশল নিশ্চয়ই প্রদর্শিত হবে। 

সেক্ষেত্রে অবশ্যই নির্বাচন কমিশন তাদের সহায় হবে। অন্তত সূচনাকাল দেখেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
গত প্রায় এক বছর ধরে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে চর্চা চলছে। কিন্তু খোলসা করে সরকারি উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা কখনোই জানানো হয়নি। বোঝা যাচ্ছিল শাসকদলের প্রস্তুতি শেষ হলেই ভোট হবে। 

সেই প্রস্তুতির একটা অংশ ভাইপোর অভিজাত জেলা পরিক্রমা। কৌশলটা ছিল এমন ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা ও ধোঁয়াশা জাগিয়ে রেখে নিজেদের প্রস্তুতি সারা হবে। বিরোধীরা টের পাবার আগেই আচমকা ভোট ঘোষণা হবে যাতে বিরোধীরা প্রার্থী নির্বাচন, প্রয়োজনীয় নথি জোগাড়, একাধিক দলের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করা সুযোগ না পায়। অর্থাৎ শাসক দলকে সবদিক থেকে অনেকটা এগিয়ে রেখে ঘোষণা হয়েছে নির্বাচন।

বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে যাতে নাজেহাল হয় তাই ঘোষণার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে দেওয়া হয়েছে মনোনয়ন জমার কাজ এবং ৭০ হাজার আসনের জন্য কয়েক লক্ষ প্রার্থীর মনোনয়ন জমার সময় বরাদ্দ হয়েছে ৬টি দিনে মোট ২৪ ঘণ্টা। সব ভোট কেন্দ্রে একজন পুলিশ দেবার মত পুলিশ রাজ্যের নেই। শেষে হয়ত আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সিভিক পুলিশরূপী শাসক দলের ক্যাডারদের ব্যবহার করা হবে।


যাইহোক শত শত অনিয়ম, অপকৌশল সত্ত্বেও নির্বাচন হচ্ছে এটাই বড়কথা। তৃণমূলের চরিত্র অনুযায়ী সন্ত্রাস করবে, গুণ্ডামী করবে, ভোটাধিকার কাড়বে, প্রশাসন, পুলিশ ও কমিশনকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করবে। কিন্তু মানুষকে জোটবদ্ধ হয়ে সেসব আটকাতে হবে। মানুষের জোটই পারবে এই চোর-জোচ্চোরদের হটাতে।

Comments :0

Login to leave a comment