বৃহস্পতিবার থেকে ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চালু হওয়ার কথা ছিল। ঠিক ছিল, একইসঙ্গে শুরু হবে বন্দী প্রত্যাপর্নের কাজও। বুধবার ইজরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি জানিয়েছেন, শুক্রবারের আগে যুদ্ধবিরতি কিংবা দুই তরফের হেফাজতে থাকা বন্দীদের ফেরানোর কাজ শুরু করা সম্ভব নয়।
সংবাদসংস্থা এপি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, হানেগবি স্পষ্ট করেননি, কেন বৃহস্পতিবারের বদলে যুদ্ধবিরতি চালুর দিন পিছিয়ে গেল শুক্রবারে।
৭ অক্টোবর থেকে লাগাতার ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘর্ষ চলছে। লড়াইয়ের মূল ভরকেন্দ্র অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড। ইজরায়েলি বিমান হামলায় গাজা’র ১৩ হাজারের বেশি বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশ মহিলা এবং শিশু। অপরদিকে ইজরায়েলের দাবি, হামাসের হামলায় ১২০০’র বেশি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। ২৪০জন পণবন্দী হয়েছেন হামাসের হাতে।
পণবন্দীদের ছাড়াত গাজা ভূখণ্ডে সামরিক অভিযান চালানো শুরু করে ইজরায়েল। কিন্তু ১জন আটক ইজরায়েলি সেনাকর্মী ছাড়া কোনও পণবন্দীকে উদ্ধার করতে পারেনি ইজরায়েলি সেনা। এই অবস্থায় কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনা শুরু হয় হামাস এবং ইজরায়েলি প্রতিনিধিদের মধ্যে। চলতি সপ্তাহে ঠিক হয়, ৫০জন আটক ইজরায়েলি’কে মুক্তি দেবে হামাস। তার বদলে ইজরায়েলের বিভিন্ন জেলে আটক থাকা ১৫০জন বন্দীকে মুক্তি দেবে ইজরায়েল। প্রথম দফার তালিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয় মহিলা এবং শিশুদের।
ঠিক হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ৪দিনের যুদ্ধবিরতি চালু হবে। সেই সময়ে চলবে বন্দী প্রত্যার্পণের কাজ।
সেই প্রক্রিয়া ফের অনিশ্চয়তার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
ইতিমধ্যে ইজরায়েলের উগ্র-দক্ষিণপন্থী সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বুধবার রাতে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন’কে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষে তিনি ফের সামরিক অভিযান শুরু করবেন।
একইসঙ্গে ইজরায়েলের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কর্তাদের নেতানিয়াহু নির্দেশ দিয়েছেন, বিশ্বের যেই দেশেই আশ্রয় নিক না কেন, হামাসের শীর্ষনেতাদের নিকেশ করার কাজ শুরু করতে হবে। তিনি বিবৃতি দিয়ে একথা জানিয়েছেন। এপি’র প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মোসাদ মনে করে লেবানন এবং কাতারে আশ্রয় নিয়েছেন হামাসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে এর আগেও প্যালেস্তিনীয় মুক্তি আন্দোলনের নেতৃত্বকে খুনের অভিযোগ উঠেছে মোসাদের বিরুদ্ধে। ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের নিকেশেরও অভিযোগ উঠেছে এই সংস্থার বিরুদ্ধে।
রাষ্ট্রসংঘের প্যালেস্তাইন শরনার্থী বিষয়ক সংস্থার বক্তব্য, ইজরায়েলের সামরিক অভিযানের ফলে গাজা শহরের ১০ লক্ষের বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। তাঁরা বর্তমানে দক্ষিণ গাজার ১৫৬টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।
রাষ্ট্রসংঘ জানাচ্ছে, সংঘর্ষে তাঁদের ১০৮জন কর্মী এখনও অবধি প্রাণ হারিয়েছেন। এই সংস্থার মহাসচিব ফিলিপে লাজ্জারিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে শীতকালে শরনার্থীদের ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। ছড়িয়ে পড়তে পারে জলবাহিত বিভিন্ন রোগ।
Comments :0