নাবালিকার শ্লীলতাহানী কান্ডে কর্ণাটকের প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদিয়ুরাপ্পার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিল কর্ণাটক পুলিশের সিআইডি।
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শিশু নিগ্রহ প্রতিরোধী আইন বা পকসো’র ৮ নম্বর ধারায় মামলা করা হয়েছে। এই ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলে ইয়েদিয়ুরাপ্পার তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড হতে পারে। এর পাশাপাশি ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৫৪এ, ২০৪ এবং ২১৪ নম্বর ধারাতেও ইয়েদিয়ুরাপ্পার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রসঙ্গত, যৌন শোষণ, প্রমাণ নষ্ট এবং অপরাধীকে আড়াল করতে উপঢৌকন দেওয়ার অভিযোগ উঠলে এই ধারাগুলির প্রয়োগ হয়।
কর্ণাটকের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলি সূত্রে খবর, চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি অপর একটি যৌন হেনস্থার বিহীত চেয়ে ইয়েদিয়ুরাপ্পার দ্বারস্থ হন ওই নাবালিকা এবং তার মা। নাবালিকার অভিযোগ ছিল, এক আত্মীয় তাকে হেনস্থা করেছে। অভিযোগ, সাহায্য চাইতে আসা সেই নাবালিকাকে যৌন হেনস্থা করেন বিজেপি নেতা ইয়েদিয়ুরাপ্পা। চলতি বছরের ১৪ মার্চ পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা, এবং ১৫ মার্চ সিআইডি’র হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়।
অপরদিকে এই মামলায় জামিনের আবেদন জানিয়ে কর্ণাটক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ইয়েদিয়ুরাপ্পা। ১৪ জুন শুনানি ছিল। সেদিন এই মামলা শুক্রবার অবধি মুলতুবি করে আদালত। শুক্রবারের শুনানির একদিন আগেই চার্জশিট জমা দিল সিআইডি। যদিও হাইকোর্ট বলেছিল, আদালতের নির্দেশ ছাড়া ‘কড়া’ কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
আদালত সূত্রে খবর, আগাম জামিনের আর্জি নিয়ে শুক্রবার আদালতের দ্বারস্থ হবেন ইয়েদিয়ুরাপ্পা। অপরদিকে একইদিনে আদালতে নতুন করে আবেদন করতে চলেছে নির্যাতিতার পরিবার। তাঁদের দাবি, উপযুক্ত দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করছে না সিআইডি। তারফলে তদন্তে প্রভাব খাটানোর সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন ইয়েদিয়ুরাপ্পা।
হাই প্রোফাইল এই তদন্তে যুক্ত এক সিআইডি অফিসার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ‘‘হাইকোর্ট কোনও কড়া পদক্ষেপ নিতে বারণ করেছে। কিন্তু চার্জশিট দাখিল করা সেই শর্তের মধ্যে পড়েনা। কারণ পকসো মামলা হওয়ার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে আমাদের চার্জশিট জমা দিতেই হত।’’
চার্জশিট জমা পড়ে যাওয়ায়, বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে ওই বিজেপি নেতাকে। যদিও ইয়েদিয়ুরাপ্পার বিচার সাংসদ বিধায়কদের জন্য তৈরি বিশেষ আদালতে হবে, না পকসো মামলার জন্য তৈরি বিশেষ আদালতে হবে, সেটা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে।
কর্ণাটকে নারী নিগ্রহ কান্ডে বিজেপি তথা এনডিএ যোগ যদিও এখানেই শেষ নয়। বিজেপির জোটসঙ্গী জেডিএস সুপ্রিমো এইচডি কুমারস্বামীর পুত্র প্রজ্জ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক নারী নিগ্রহ, ধর্ষণ সহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কর্ণাটকের হাসান লোকসভা কেন্দ্রে জেডিএসের টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন প্রজ্জ্বল। নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন একটি পেনড্রাইভ ফাঁস হয়। সেখানে একের পর এক ভিডিওতে বহু নারীর সঙ্গে দুষ্কর্ম করতে দেখা যায় প্রজ্জ্বলকে।
গুরুতর অভিযোগ ওঠায় রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করেন কর্ণাটকের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। তদন্তের হাত থেকে বাঁচতে জার্মানি পালিয়ে যান প্রজ্জ্বল। পরবর্তীকালে চাপের মুখে দেশে ফিরে এলে তাকে হেফাজতে নেয় সিট। বর্তমানে সিটের হেফাজতেই রয়েছেন তিনি। বুধবার বেঙ্গালুরুর সিটি সিভিল ও সেশনস আদালতের অতিরিক্ত বিচারক রেভান্নার জামিনের আবেদন খারিজ করেছেন। ২৯ জুন অবধি তাঁকে হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রজ্জ্বল রেভান্নার পাশাপাশি তার দাদা সুরজ রেভান্নাকেও পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। সুরজের বিরুদ্ধে ২টি যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। প্রথমটি হয় শনিবার, এবং মঙ্গলবার দ্বিতীয় অভিযোগটি দায়ের হয়েছে হাসান জেলার হোলেনারাসিপুরা থানায়। রবিবার তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন। সোমবার সেই রায় পুনর্বিবেচনা করে ৮দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। হেফাজতে থাকাকালীন দ্বিতীয় অভিযোগটি নথিভুক্ত হয়েছে তার নামে।
প্রজ্জ্বল এবং সুরজের পাশাপাশি তাদের মা ভবানী এবং বাবা এইচডি রেভান্নাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। হোলেনারাসিপুরার বিধায়ক এইচডি রেভান্না এবং ভবানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রজ্জ্বল রেভান্নার লিক হওয়া ভিডিওতে দেখা পাওয়া এক নির্যাতিতাকে অপহরণ করেছিলেন তারা। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন।
Comments :0