Mamata Banerjee

চুরির পাশে, ‘চোর’দের পক্ষে খোলাখুলি সওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্য


‘‘আপনারা হয়তো ৫ টাকা নিয়েছেন। ওরা অনেক বেশি নেয়। আপনার থেকে বড় চোর ওরা! তাই সাবধানে থাকুন।’’ দলের নেতাদের বৃহস্পতিবার এভাবেই সতর্ক করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি।
তৃণমূলের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও নানা পর্যায়ের নেতাদের সভা ছিল এদিন, নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য ডাকা এই সভায় দলের নেতাদের ‘চোর’ ধরে নিয়েই দলনেত্রীর এভাবে সাবধান করার অর্থ— আপাতত তিনি চুরি না করতে বলছেন কিংবা আঁটঘাট বেঁধে চুরি করতে বলছেন।
এদিন ‘চুরি’র পাশে যেমন দাঁড়িয়েছেন, তেমনই তৃণমূল নেত্রী ‘চোর’দের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। প্রবাদ আছে— দু’কান কাটারা রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘পার্থ জেলে। কেষ্ট জেলে। মাণিক জেলে। বালুও জেলে। দুর্নীতি দেখাচ্ছে? আমাদের লোক সবাই চোর? এটাই চলবে?’’ কিছুক্ষণ পরে এই সূত্রেই বলেছেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি না এরা চোর। এরা আমার অনেক লড়াইয়ের সাথী। এখন মহুয়াকেও ভোটের তিন মাস আগে বের করে দিতে চাইছে। কী হবে? মহুয়া কিছুটা প্রচার পাবে।’’
এদিনের ভাষণে বিজেপি, নরেন্দ্র মোদী, আরএসএস এবং তৃণমূলের মূল দাবি সম্পর্কে কয়েকটি মন্তব্য করেছেন তিনি। তার মধ্যে লুকিয়ে আছে তাঁর চালাকি।
ছটপুজোয় তাঁর গঙ্গার ঘাটে যাওয়ার গল্পটি দিয়েই শুরু করা যায়। তিনি শোনালেন, ‘‘সেদিন আমি ঘাটে গেছিলাম। আমার একটা জিনিস চোখে পড়ল। আমার চোখ আর কান খুব চলে। আমি দেখলাম একটা ব্যানার। লেখা আছে ‘আরএসএস।’ আমি বলি, আপনারা আগে অনেককে সাপোর্ট করেছেন। এবার ওই দু’জনকে সাপোর্ট করবেন না। জগাই, মাধাইকে সাপোর্ট করবেন না।’’ 
ওই দু’জন মানে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। মমতা ব্যানার্জি আরএসএস’র কাছে আবেদন জানাচ্ছেন, যাতে সেই হিন্দুত্ববাদীরা মোদী ও শাহকে সাপোর্ট না করে। তাহলে কাকে করবে? দেশের অন্যত্র তৃণমূল নেই। আরএসএস তো কমিউনিস্টদের মতাদর্শগত দিক থেকে প্রধান শত্রু মনে করে। তাহলে পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস কাকে ‘সাপোর্ট’ করবে? ‘আপনারা আগে অনেককে সাপোর্ট করেছেন’— এই বাক্যটিরই বা মানে কী? আরএসএস বরাবর পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির পক্ষে কাজ করেছে। এবারও মমতা ব্যানার্জি তাদের সমর্থন চেয়ে রাখলেন।
এদিনের ভাষণে সিপিআই(এম) এবং বিজেপি-কে প্রবল আক্রমণ করেছেন তিনি। কিন্তু বিজেপি-কে আক্রমণের বিষয়গুলিতে কোথাও তিনি রামমন্দিরের প্রসঙ্গে সমালোচনা করেননি। আনেননি ধর্মনিরপেক্ষতার প্রসঙ্গও। তিনি বলেছেন, ‘‘একটা মন্দির করেছে। তাও সরকারের টাকায় নয়। জনগণের থেকে টাকা তুলে। আমরাও তো দক্ষিণেশ্বর মন্দির করেছি। কালীঘাটের মন্দিরে স্কাইওয়াক করছি। আমরা সরকার করেছি। জনগণের টাকায় করিনি। কালীঘাটের জন্য মুকেশ (আম্বানি) টাকা দিচ্ছে। কিন্তু বাইরের কাজের জন্য আমরা ৩০০ কোটি টাকা দিয়েছি।’’
এর অর্থ? সরকারের টাকা জনগণের টাকা নয়! শাসক দলের বাড়ির টাকা! সেই টাকায় মন্দির বানানো মোটেও অপরাধ নয়, দেশের সংবিধানের আদর্শের বিরোধী নয়! 
তাহলে নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি’র বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রীর মুখ্য অভিযোগ কী? 
টাকা। একশো দিনের প্রকল্পের টাকা, আবাস যোজনার টাকা। সেই টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। মমতা ব্যানার্জির মূল যন্ত্রণা এটি। এই প্রসঙ্গে তিনি দলের কর্মীদের বলেছেন, ‘‘আগামী ২৪ তারিখ বিধানসভা শুরু। ২৮ থেকে ৩০ নভেম্বর এমএলএ-দের বিধানসভায় উপস্থিত থাকতে হবে। মাস্ট। আম্বেদকারের মূর্তির সামনে ২ ঘন্টা করে ধরনা চলবে।’’ ধরনার বিষয়— ওই টাকার দাবি। আর কী হবে? মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘আগামী ২ এবং ৩ ডিসেম্বর প্রতি বুথে মিছিল করতে হবে। কেন্দ্রের কাছে টাকার দাবিতে। বাবুরা (বিজেপি’র কর্মীরা) প্রচারে গেলে বলতে হবে, আমাদের টাকা দাও।’’ অর্থাৎ রাজ্য জুড়ে বিজেপি-কে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে তুলে ধরার কাজটি করতে হবে। 
তারপর? মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন, ‘‘ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে দিল্লি যাবো। আমার সব এমপি-দের নিয়ে যাবো। প্রধানমন্ত্রীর সময় চাইব দেখা করার। যদি দেখা করার সময় দেন ভালো।’’ 
অর্থাৎ এই পুরো সময়কালের কর্মসূচী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য। যদি প্রধানমন্ত্রী দেখা করেন এবং একশো দিনের ও আবাস যোজনার কিছু টাকা ছেড়ে দেন, তাহলে? এই প্রসঙ্গে ভাষণের ১ ঘন্টা ৫ মিনিটের মাথায় মমতা ব্যানার্জিকে বলতে শোনা গেল, ‘‘আমার একশো দিনের টাকা দিতে হবে। বাংলার আবাসের টাকা দিতে হবে। রাস্তার টাকা দিতে হবে। এগুলো তোমাদের টাকা নয়। জনগণের টাকা।’’ এই পর্যন্ত ঠিক আছে। তারপরই বললেন, ‘‘জনগণের টাকা জনগণকে ফেরত দাও, নয় বিজেপি বিদায় নাও।’’
কিছু টাকা যদি কেন্দ্র ছেড়ে দেয় নানা কৌশলে, তাহলে মমতা ব্যানার্জির ভূমিকা কেন্দ্রে সরকার গড়ার সময় কী হবে? আর রাজ্যে যদি তিনি আরএসএস’র কিছু সাহায্য পান? তাহলে? মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘আর তো তিন মাস। দিল্লি এবার দখল হবে।’’ কারা সরকার গড়বে? না, মমতা ব্যানার্জি ধোঁয়াশা রেখে দিলেন।

Comments :0

Login to leave a comment