SINGUR

ফিরে দেথা সিঙ্গুর- ২
ঠিক বলেছিল বামফ্রন্ট, বোঝাচ্ছে মমতার স্পেন সফরও

রাজ্য

প্রতীম দে

 দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে কলকাতা দিকে এলে ডান দিকে পড়ে কারখানার জমি কারখানা হয়নি তার কাঠামো আজ আর নেই মমতা ব্যানার্জির সরকার ডিনামাইট দিয়ে তা ভেঙে দিয়েছে এখন দিগন্ত জুড়ে শুধু কাশ বন পড়ে রয়েছে লোহার পাইপপাথর যা কারখানার কাজে ব্যবহার হতো 

লকেট চ্যাটার্জি হুগলির বিজেপি সাংসদ তিনিশুভেন্দু অধিকারি বিভিন্ন সময় প্রকাশ্য দাবি করে এসেছেন যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে সিঙ্গুরে কারখানা হবে ২০১৯ থেকে ২০২৩ চার বছর পার কোন শিল্পায়ন হয়নি

 রাজকুমারস্বপন ব্যানার্জিদের কথায়, ‘‘এই কথা অনেক শুনেছি শুভেন্দু তো মমতার সাথে ছিল কারখানা না হতে দেওয়ার সময় আর লকেট ওই যে ভোটের সময় এসেছিল ব্যাস তারপর আর আসেনি’’ 

সিঙ্গুর যখন কারখানা চেয়েছিল তখন বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং ধর্মতলায় মমতার ধর্ণায় এসেছিলেন সমর্থন জানাতে ২০০৬-র ৩ ডিসেম্বর সিঙ্গুরে কারখানা আটকানোর জন্য ধর্মতলায় অবস্থান শুরু করেন মমতা ব্যানার্জি সেখানে এসেছিলেন বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং

২০০৬-র ১২ মে সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানা নিয়ে মহাকরণে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার রতন টাটার বৈঠক হয়  

২০০৬-র ১৮ মে মহাকরণের রোটান্ডায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের উপস্থিতিতে কারখানা তৈরির কথা ঘোষণা করেন রতন টাটা

সিঙ্গুরে কারখানা হলে সরাসরি কর্মসংস্থান হত অন্তত ২০০০জনের অনুসারী শিল্পে কাজ হত আরও ১০,০০০ জনের, জানিয়েছিল সরকার

কারখানা হবে শ্রমিকরা কাজ করবেন তাঁদের জন্য পোষাক লাগবে কারা বানাবেন? গ্রামের মহিলারা তার জন্য শুরু হয়েছিল প্রশিক্ষণ দীপালী মণ্ডল তাঁদের তখন সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রায় ১৫০ জন মহিলা জামা তৈরি করার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম ভেবেছিলাম মাস গেলে একটা আয় হবে কিন্তু তা হয়নি এখন বাড়িতেই বসে আছি ’’ 

টাটাদের কারখানার বিরুদ্ধে যখন মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে আন্দোলন চলছে তখন বেড়াবেড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রভাস ঘোষ তিনি বলেন, ‘‘অনিচ্ছুক বলে কিছু ছিল না কয়েকজনকে ভুল বোঝানো হয়েছিল বাইরে থেকে লোক এনে এলাকায় অশান্তি তৈরি করা হয়েছিল’’

সেই সময় চন্ডীতলা বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন ভক্তরাম পান এই কৃষকনেতা বলছেন, " আমাদের কথা ছিল কৃষিকে সামনে রেখে শিল্প গড়ার সিঙ্গুরের মানুষ কারখানা চেয়েছিলেন আজ এখানে কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছে না ডিএলএফ টাউন তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল তাও হয়নি সব শেষ হয়ে গিয়েছে কারখানা না হওয়া শুধু সিঙ্গুরের ক্ষতি নয়রাজ্যের ক্ষতি’’

অনিচ্ছুক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অনিচ্ছুক কারাযাঁদের জমির পাট্টাবর্গা ছিল না তাঁরা আর কিছু আগমার্কা তৃণমূল’’ 

সিঙ্গুরে কারখানা আটকানোরআন্দোলন’-র নামে রাজ্য বিধানসভা ভাঙচুর করেছিল তৃণমূল মমতা ব্যানার্জির উপস্থিতিতে সেই ভাঙচুর হয়েছিল — ২০০৬-র ৩০ নভেম্বর 

কারখানা আটকাতে ২০০৬-র ৬ ডিসেম্বর রেল ও রাস্তা অবরোধ করে তৃণমূলরাজ্য জুড়ে

২০০৭-র ১৮ মার্চ সিঙ্গুরে নির্মীয়মান কারখানার দেওয়াল ভাঙতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়

সিঙ্গুরে কারখানা গড়ার লক্ষ্যে বামফ্রন্ট সরকার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিল ২০০৬-র ৪অক্টোবর এবং ২০০৮-র ৩০ সেপ্টেম্বর তৃণমূল দু'টি বৈঠকই বয়কট করে

২০০৭-র ৪ জানুয়ারি কলকাতায় শিল্পোন্নয়ণ নিগমের অফিসে হামলাভাঙচুর করে তৃণমূলীরা

তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কারখানা এবং যুবদের কর্মসংস্থানের জন্য আলোচনা চেয়ে ২০০৮-র ১৮ আগস্ট, ২৫ আগস্ট চিঠি দেন ২৫ আগস্টের চিঠি পেয়ে মমতা ব্যানার্জি সাংবাদিকদের বলেন,‘‘আলোচনা নয়, মজা দেখাবেন’’ 

২০০৮-র ২৪ আগস্ট সিঙ্গুরে নির্মীয়মান কারখানার সামনে জাতীয় সড়ক আটকে অবরোধঅবস্থান শুরু করেন মমতা ব্যানার্জি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গোরা সেদিন মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘‘টাটারা অন্য রাজ্যে চলে যাক’’

২০০৮-র ৫,৬ সেপ্টেম্বর রাজভবনে সরকারের প্রতিনিধিতৃণমূলের প্রতিনিধিদের আলোচনা

২০০৮-র ৭ সেপ্টেম্বর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যনিরুপম সেনের সঙ্গে রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর উপস্থিতিতে মমতা ব্যানার্জির বৈঠক ১২ সেপ্টেম্বর আবার বৈঠক মমতা ব্যানার্জি অনড় — ৪০০ একর ফেরাতে হবে

২০১৮-র ১৮ সেপ্টেম্বর টাটারা জানায় বিকল্প জায়গা দেখা হচ্ছে

২০০৮-র ২২ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুরে প্রকল্পের ভিতরে আবার হামলা তৃণমূলের

এমন ঘটনা বারবার দেখা যাবে ফিরে তাকালে লক্ষ্য আসলে ছিল বামফ্রন্ট সরকারকে হটানো এখন সৌরভ গাঙ্গুলিকে স্পেনে নিয়ে বাংলায় কারখানা গড়ার ঘোষণা করাতে হচ্ছে সেই মমতাকেই

 শিল্প জরুরিবামফ্রন্টের সেই বোঝাপড়া ভুল ছিল না

 

Comments :0

Login to leave a comment