MD SALIM

স্বাধীনতার ঐতিহ্যকে মুছতে নেমেছেন মোদী, ক্ষোভ সেলিমের

রাজ্য কলকাতা

CPIM TMC BJP AIKS WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTION WEST BENGAL POLITICS 2023 BENGALI NEWS md salim

দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল হিন্দু মুসলিম ঐক্যের ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য অস্বীকার করে আরএসএস। সেই কারণেই ২৩ জানুয়ারি, সুভাষচন্দ্র বসু জন্মদিবসের, বদলে গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছে ২২ জানুয়ারির। 

সোমবার কলকাতার মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 

সেলিম এদিন বলেছেন, ‘’২৩ জানুয়ারি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস। সেই দিনটিকে দেশপ্রেম দিবস হিসেবে পালনের ডাক দিয়েছেন বামপন্থীরা। আরএসএস এবং কেন্দ্রীয় সরকার অযোধ্যাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় উৎসবকে নতুন ইতিহাসের সূচনা হিসেবে দেখাতে চাইছে। ২২ জানুয়ারির বদলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ২৩ জানুয়ারি। ২৩ জানুয়ারিকে ঢাকা হচ্ছে ২২ জানুয়ারি দিয়ে।’’

সেলিম বলেন, ‘‘আরএসএস-বিজেপির এই ছক ভাঙতে ২৩ জানুয়ারি দেশপ্রেম দিবস, ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবস পালিত হবে। ৩০ জানুয়ারি গান্ধীহত্যার দিনে ধিক্কার জানানো হবে গোটা রাজ্যে।’’

এদিন ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ের উল্লেখযোগ্য মাইলফলক কাকোরি মামলার উল্লেখ করেন সেলিম। পরাধীন ভারতে ১৯২৫’র ৯ আগস্ট কাকোরি মেল ট্রেনে হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মির বিপ্লবীরা অর্থের জন্য লুট করেছিলেন। ফাঁসি হয়েছিল রামপ্রসাদ বিসমিল, আশফাকুল্লা খান, রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ী এবং ঠাকুর রওশন সিংয়ের। পরবর্তীকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদ। জাত, ধর্ম বা ভাষার বিভেদ ভেঙে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের এমন একাধিক আত্মত্যাগই ভারতকে স্বাধীনতা দিয়েছে।   

সেলিম এই প্রসঙ্গেই বলেছেন, ‘‘ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস হল হিন্দু-মুসলিম সহ সমস্ত সম্প্রদায়ের একযোগে লড়াইয়ের ইতিহাস। সেই লড়াইয়ের ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ করছে আরএসএস। যাঁরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেয়নি, তাঁরাই স্বাধীনতা সংগ্রামের ত্যাগের আদর্শকে ভুলিয়ে দিতে চাইছে।’’

সেলিম এদিন অভিযোগ করেছেন, ‘‘ক্ষুধার তালিকা থেকে শুরু করে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য- সমস্ত সূচকে দেশ নীচের দিকে নামছে। ওয়ান লেভেল ডাউন। সেইদিক থেকে নজর ঘোরাতেই ধর্মের আশ্রয় নিচ্ছে বিজেপি।’’

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার আগে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কালো টাকা দেশে ফেরানো হবে, বছরে ২কোটি বেকারের চাকরি হবে। সেই প্রতিশ্রুতিগুলির কী হল? মোদী বলেছিলেন, দেশ অমৃতকালে প্রবেশ করেছে। রাম মন্দিরের উদ্বোধনের পরে বলা হচ্ছে নতুন কাল শুরু হল। কিন্তু সেই কী নাম? আকাল? নাকি দুষ্কাল?’’

সেলিম এদিন বলেছেন, ‘‘রাম মন্দিরে বিগ্রহের বদলে রামলালার ছত্রি নিয়ে ঢুকেছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্ণবাদী আদর্শ অনুযায়ী, সেই অধিকার রয়েছে কেবলমাত্র ব্রাহ্মণদের। প্রধানমন্ত্রী মন্দির উদ্বোধনের দিনে সমস্ত প্রচারের কেন্দ্রস্থলে থাকলেও, বর্ণবাদী ব্যবস্থা ভাঙতে পারলেন না। এটাই আরএসএস’র ‘নতুন ভারত’। অযোধ্যা থেকে কলকাতা, মিডিয়াকে একটাই ফিড পাঠানো হয়েছে। সেটাই চ্যানেলে চ্যানেলে চালানো হচ্ছে। একটাই দৃষ্টিকোণ সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।’’

সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘‘ বিজেপির মন্দির রাজনীতির পালটা তৃণমূলকে কেন মন্দির, মসজিদ, গীর্জায় ছুটতে হচ্ছে? আলাদা খাম হলেও একই দিকে ছোটার রাজনীতি করছে দুই দল।’’

সেলিম এদিন বলেছেন, ‘‘বিজেপি বলছে মন্দিরের ফলে অযোধ্যার অর্থনীতি মজবুত হবে। কর্মসংস্থান হবে। আমরা বলছি, দেশে বহু তীর্থস্থান রয়েছে। কিন্তু তীর্থস্থানের অর্থনীতিতে হাসপাতাল বা শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি হয় না। বিজেপি হিন্দুত্বের নামে হিন্দুধর্মের কেন্দ্রীকরণ করছে। এক দেশ এক মন্দির কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তাঁরা। এর মাধ্যমে দেশের অজস্র তীর্থস্থানকে আড়াল করা হচ্ছে।’’

মমতা ব্যানার্জি দাবি করেছেন, বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় তিনি জ্যোতি বসুর সঙ্গে দেখা করে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্যের সমালোচনা করে সেলিম এদিন বলেন, ‘‘মিথ্যা কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সংক্রান্ত কোনও সংবাদ তৎকালীন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়নি। সেই সময় কলকাতার পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার দাঙ্গা আটকানোর জন্য রাত জাগছিলেন, আর সমাজবিরোধীদের আশ্রয় দিচ্ছিলেন মমতা ব্যানার্জি।’’

 

 

Comments :0

Login to leave a comment