শনিবার বিজেপি’র জাতীয় স্তরের ‘চিন্তন শিবির’ শেষ হয়। দু’দিন ধরে দিল্লিতে এই শিবির চলে। শনিবার শিবিরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনটাই বলেছেন বিজেপির সংগঠনের অন্যতম মূল ‘মস্তিষ্ক’ হিসেবে পরিচিত অমিত শাহ।
দুইদিন ধরে চলা এই শিবিরে বিজেপির জাতীয় স্তরের নেতাদের পাশাপাশি সমস্ত রাজ্য সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। প্রথম দিন বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি দলকে নির্দেশ দিয়েছেন, ২০১৯’র তুলনায় ১০ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি করতে হবে। হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে বিজেপি’র জয়ের প্রধান ভিত্তি থেকেছে ধর্মীয় মেরুকরণ।
২৬ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার, পশ্চিমবঙ্গে আসার কথা শাহ এবং জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করাচ্ছেন, ২০১৯ সালে বিজেপি একক ভাবে ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এনডিএ গত ভাবে মিলেছিল ৪০ শতাংশের বেশি ভোট। ২০২৪ সালে দেশের ৫৪৩ আসনের অধিকাংশ আসনে একের বিরুদ্ধে এক লড়াই হতে চলেছে। বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের বৈঠকও হয়েছে চলতি সপ্তাহেই। সেক্ষেত্রে বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে আসবে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন শাহ।
কিন্তু বিজেপি ভোট বাড়াবে কোন অঙ্কে? বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, নরেন্দ্র মোদী একাধিক জনসভায় বলেছেন, ‘‘দেশের মূল জাতিগুলি হল গরিব মানুষ, মহিলা, যুব সমাজ এবং কৃষক।’’ কিন্তু এই চার অংশের অবস্থা বিজেপির শাসনকালে আরও খারাপ হয়েছে। তাই এই চার অংশ বিপুল ভাবে বিজেপির পাশে দাঁড়াবে এমন কোনও ইঙ্গিত নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মোদী এই ‘চার প্রধান জাত’ তত্ত্ব আমদানি করেছেন বিরোধীদের তোলা জাতভিত্তিক জনগণনার দাবির পালটা হিসেবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অবস্থায় ভোট বৃদ্ধির জন্য ধর্মীয় মেরুকরণ ছাড়া বিজপির কাছে অন্য কোনও অস্ত্র নেই। সেই অঙ্কেই রবিবার কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে গীতাপাঠের আসর বসিয়েছে বিজেপি ঘনিষ্ঠ উগ্র হিন্দুত্ববাদী একাধিক সংগঠন। যদিও সেখানে উপস্থিত থাকবেন বলেও পিছিয়ে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির অন্দরের খবর, প্রত্যাশিত জনসমাবেশ হবে না বুঝেই আসবেন না মোদী।
রাজ্যের বামপন্থী নেতৃত্ব বলছেন, এমনিই বহু মানুষ গীতাপাঠ করেন রাজ্যে। তার জন্য ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’-র ডাক দিতে হয় না। কিন্তু রাজনীতির স্বার্থে গীতাপাঠকেও ইস্যু বানাতে ব্যস্ত বিজেপি।
শনিবার সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘ব্রিগেডের মাঠে গীতাপাঠের নামে ধর্মকে রাজনীতির ময়দানে নামিয়ে আনছে আরএসএস এবং তৃণমূল। ধর্মকে বর্ম করে যারা অপকর্ম করছে তাদের সম্পর্কে জনগণকে সাবধান করতে হবে। মণিপুরের দাঙ্গা দেখে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে। ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে, অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে।’’
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন করা হবে। ঐক্যবদ্ধ বিরোধী শক্তির মোকাবিলায় মন্দির রাজনীতি ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই বিজেপির ভাণ্ডারে।
Comments :0