Ranigang

রেলে বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে পশ্চিম বর্ধমানে বিক্ষোভ

জেলা


শুক্রবার রেলের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে পশ্চিম বর্ধমান জেলার চিত্তরঞ্জন, রানিগঞ্জ, অন্ডাল ও ওয়ারিয়া রেল স্টেশনে বিক্ষোভ সংগঠিত করলেন মানুষ। সিআইটিইউ’র ডাকে সাড়া দিয়ে সর্বত্র প্রচুর মানুষ শামিল হয়েছিলেন।
চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (সিএলডাব্লু)’র শ্রমিক কর্মচারিরা সিএলডাব্লু লেবার ইউনিয়নের ডাকে সাড়া দিয়ে রেল নগরী চিত্তরঞ্জনেবাইক মিছিল সংগঠিত করেন। এরিয়া-৪ থেকে লালপতাকা লাগানো বাইক মিছিল শুরু হয়। এরিয়া-৫, হসপিটার রোডের পথ পরিক্রমা করে বাইক মিছিল শেষ হয় চিত্তরঞ্জন রেল স্টেশনে। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ জেলা সাধারণ সম্পাদক, প্রাক্তন সাংসদবংশগোপাল চৌধুরী, লেবার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজীব গুপ্ত। সভাপতিত্ব করেন আর এস চৌহান। 

 


 

নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের অর্থ ব্যবস্থার মেরুদন্ড হচ্ছে ভারতীয় রেল। দেশের জিডিপি’তে রেলের অংশ ১.৫ শতাংশ। ২০২২— ২০২৩ আর্থিক বছরে ২.৪০ লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব কেন্দ্রীয় সরকারকে দিয়েছে রেল। মাল পরিবহনেও রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব দিয়েছে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রেল ভূমিকা পালন করে আসছে। এখনও দেশে সর্বোচ্চ নিয়োগকারি সংস্থা ভারতীয় রেল। সারা দেশে ১২৫,৩৬৬ কিলোমিটার রেলপথ, ৭৩৩৫টি রেল স্টেশন, ১৩৫২৩টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন, ৯১৪৬টি মাল পরিবহনের ট্রেন, রেলের জমি, রেলের সম্পদ, রেল ইঞ্জিন ও ওয়াগন তৈরির ইউনিট সহ ভারতীয় রেল বিপন্নতার শিকার হয়েছে। বিজেপি সরকার দেশের সম্পদ কর্পোরেট পুঁজির হাতে তুলে দিচ্ছে।  
রেল মন্ত্রক রেলের সম্পদ বিক্রি করার কথা ঘোষণা করেছে ২০২০ সালে। সেই মতন এখন ১৫১টি ট্রেন, ১০৯ জোড়া রুট বেসরকারি মালিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। ৫০টা রেল স্টেশন বেসরকারি হাতে দেবে। রেলের নিজস্ব উৎপাদন ইউনিট বিপন্নতার শিকার। বিভিন্ন কাজ, বিভাগ, ট্রেন, স্টেশন, রেলের জমি, রেলের প্রতিষ্ঠান, রেলের উৎপাদন ইউনিট বেসরকারি হাতে সঁপে দিচ্ছে। রেলে কর্মী সংকোচন হয়ে চলেছে। পদলোপ হচ্ছে। নিরাপত্তা ক্যাটাগরির পদও শূন্য পড়ে রয়েছে। ২.৫ লক্ষ থেকে ৩.১২ লক্ষ নিরাপত্তা ক্যাটাগরির পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। দক্ষ কাজে অদক্ষ ও প্রশিক্ষণহীনদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনার বহর। রেলবোর্ড ৫০ শতাংশ শূন্যপদ সারেন্ডার করেছে।
সিএলডাব্লু’রউৎকর্ষতা থাকা সত্ত্বেও আধুনিক টেকনোলজি দেওয়া হচ্ছেনা। বন্দে ভারত, ১২০০ অশ্বশক্তির ইঞ্জিন তৈরি করেছে সিএলডাব্লু। পরিকল্পনা করে সিএলডাব্লুকে গুটিয়ে পঙ্গু করা হচ্ছে। জেলা জুড়ে আওয়াজ উঠেছে, সিএলডাব্লু বাঁচাও। 
এদিন রানিগঞ্জ সেটেশনে বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন সুপ্রিয় রায়, হেমন্ত প্রভাকর, দিব্যেন্দুমুখার্জি, অশোক ঘোষ, উমাপদ গোপ প্রমুখ। অন্ডালসেটশনে বিক্ষোভ জমায়েতে বক্তব্য রাখেন বংশগোপাল চৌধুরী, প্রবীর মন্ডল। পোস্ট অফিসমোড় থেকে মিছিল করে মানুষ আসেন অন্ডাল স্টেশনে। ওয়ারিয়া স্টেশনে বিক্ষোভ হয়। মিছিল করে মানুষ এসেছিলেন। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন বিশ্বরূপ ব্যানার্জি, স্বপন মজুমদার, আশিস  সিংহ রায়চৌধুরী, প্রভাস সাঁই, মহাদেব পাল, শ্রীমন্ত চ্যাটার্জি প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন শ্যামা ঘোষ। 
নেতৃবৃন্দ বলেন, রানিগঞ্জে রেল কতৃর্ক অধিগৃহীত রানিগঞ্জের বন্ধ বার্ণস কারখানার জমিতে কারখানা গড়ে তুলে বেকারদের চাকরি দিতে হবে। বার্ণসের ওই জমিতে দীর্ঘকাল ধরে বসবাসকারী বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা চলবে না। রেলের হকার এবং রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন মানুষদের জীবিকা ও বসবাসের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সিআইটিইউ'র অভিযোগ, বার্ণস কারখানার জমি রেলমন্ত্রক দখল নিয়ে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করে বেসরকারী সংস্থার হাতে তুলে দিতে চাইছে। রাজ্যের তৃণমূল প্রশাসন উচ্ছেদের বিরুদ্ধে নীরব ভূমিকা পালন করছে। চিত্তরঞ্জন রেল কারখানাকে উৎপাদনের বরাত না দিয়ে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এদিন বিক্ষোভ চলাকালীন ছয় জনের প্রতিনিধিদল রানিগঞ্জ রেল স্টেশন মাস্টারের কাছে ডেপুটেশনও দেয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment